জাতীয় ১৭ নভেম্বর, ২০২০ ১২:৪৯

করোনার চেয়ে ভয়ংকর রোগ দেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে করোনায় গড়ে দৈনিক ২০ জনের কম মৃত্যু বরণ করছে। আর সেখানে সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন যক্ষ্মায় মৃত্যু হয় ১০৭ জনের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি পরিসংখ্যান বলছে, যক্ষ্মায় মৃত্যু আরও বেশি। দিনে ১৮৫ জন মারা যাচ্ছে এই রোগে।

গত কয়েক মাস ধরে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা গড়ে ২০ এর কম। আবার মৃত্যু বাড়তে পারে বলে বারবার সতর্ক করছে সরকার। অথচ এর চেয়ে অনেক বেশি প্রাণঘাতী রোগ নিয়ে তেমন কোনো প্রচার নেই; নেই সচেতন করার যথেষ্ট উদ্যোগ।

এর একটি যক্ষ্মা। রোগটি নির্মূল সংক্রান্ত জাতীয় নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন এতে মৃত্যু হয় ১০৭ জনের। প্রতিদিন শনাক্ত হয় ৯৮৭ জন।

অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি পরিসংখ্যান বলছে, দেশে যক্ষ্মায় মৃত্যু আরও বেশি। দিনে ১৮৫ জন মারা যাচ্ছে এই রোগে। এটা ধরলে দেশে করোনার তুলনায় যক্ষ্মায় নয় গুণ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে প্রতিদিন।

a

যক্ষ্মা নির্মূল সংক্রান্ত তথ্য বলছে, মহামারি করোনা কারণে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটি থাকায় যক্ষ্মা শনাক্তকরণ পরীক্ষা কম থাকলেও প্রতিদিন প্রায় দিনে এক হাজারের কাছাকাছি রোগী শনাক্ত হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের এক জরিপে বলা হয়েছে, দেশে বছরে তিন লাখেরও বেশি যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে প্রতি বছর সাড়ে ৬৭ হাজার মানুষ এ রোগে মারা যায়। প্রতি লাখে ২২১ জন নতুন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং প্রতি লাখে মারা যাচ্ছে ২৪ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ব্র্যাকসহ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা একযোগে ৬৪টি জেলা এবং ৪৮৮টি উপজেলায় সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে ডটস সেন্টারে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। ডটস সেন্টারে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর উপস্থিতিতে রোগী ওষুধ সেবন করে থাকে।

জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সাবেক পরিচালক রাশেদুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের মতো যক্ষ্মা একটি মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ। যা করোনাভাইরাসের মতো এই রোগেও উপসর্গহীনভাবে অনেকেই আক্রান্ত হয়। বিপদটা এখানেই। লক্ষণ প্রকাশ না পেলে কেউ চিকিৎসকের কাছে যান না।’

আবার অনেক মানুষ যক্ষ্মার বিষয়ে সচেতন নয় জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘করোনার মতো এই রোগকেও প্রতিরোধে গুরুত্ব দিতে হবে। সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যক্ষ্মা রোগের বিপদ ও এর লক্ষণ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে, যাতে দেশের সব মানুষ জানতে পারে। দেশের প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যক্ষ্মা শনাক্তকরণের আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবে। একই সঙ্গে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ত্রুটি ও দুর্বলতা শনাক্ত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সময় নষ্ট করার কোনো সুযোগ নেই।’

ব্র্যাকের যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক মাহফুজা রিফাত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একজন যক্ষ্মা রোগী থেকে কমপক্ষে ছয় জনে রোগটি ছড়াতে পারে। তাই কোথাও একজন যক্ষ্মা রোগী পাওয়া গেলে তার সম্পৃক্ত কমপক্ষে ছয় জনকেই পরীক্ষা করাতে হবে।’

করোনার কারণে যক্ষ্মা নির্মূল কর্মসূচিতে কিছুটা শৈথিল্য দেখা দিয়েছে জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘আগামী তিন মসের মধ্যে সেটি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর শামিউল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, যে কারণে তখন যক্ষ্মা শনাক্তকরণই আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। আশার কথা হচ্ছে, যক্ষ্মা রোগী যদি নিয়মিত ও নির্দিষ্ট মেয়াদে ওষুধ সেবন করে, তাহলে সাফল্যের হার প্রায় ৯৬ শতাংশ।’

২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে যক্ষা রোগে মৃত্যু শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। গত পাঁচ বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অগ্রগতির দাবিও করা হচ্ছে।

২০১৫ সালে দেশে যক্ষ্মা রোগী মারা যেত ৮০ হাজার। গত পাঁচ বছরে মৃত্যু উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।

শামিউল ইসলাম বলেন, ‘যক্ষ্মা রোগীদের জন্য এমনিতে সরকার বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। দেশের সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি ক্লিনিক বা হাসপাতাল, নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, এনজিও ক্লিনিক ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে কফ পরীক্ষা, রোগ নির্ণয়সহ যক্ষ্মার চিকিৎসা এবং ওষুধ দেয়া হয়।’

তার পরেও প্রায় ২০ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হয়।