নিজস্ব প্রতিবেদক
অবশেষে শেষ হতে চলেছে প্রতীক্ষার প্রহর। পিয়ারে বসানোর উদ্দেশে রওনা দিয়েছে পদ্মা সেতুর ৪১তম স্প্যান। বুধবার বিকাল সোয়া পাঁচটায় কাঙ্ক্ষিত পিয়ারের উদ্দেশে এটি রওনা দেয়।
পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, দুপুর ২ টায় রওনা দেওয়ার কথা থাকলেও ঘন কুয়াশার কারণে বিকাল সোয়া পাঁচটায় স্প্যানটিকে নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই রওনা দেয়। এটি বসানোর পর সবগুলো স্প্যান বসানো সম্পূর্ণ হবে। আর তাতেই দৃশ্যমান হবে ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পুরো পদ্মা সেতু।
৪১তম স্প্যান (২-এফ) বসবে সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিয়ারের ওপর। এটি বৃহস্পতিবার বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পদ্মা সেতুতে এই পর্যন্ত মোট ৪০টি স্প্যান বসানো হয়েছে। বাকি আছে এই সর্বশেষ স্প্যানটি। সেটি বসানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে আজ বুধবার। বিকাল সোয়া পাঁচটায় মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়ার কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের স্টিল ট্রাস জেটি থেকে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ধূসর রঙের স্প্যানটি নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই কাঙ্ক্ষিত পিয়ারের উদ্দেশে রওনা দেয়। আর তখন উত্তেজনা ও আবেগের চাপা অভিব্যক্তি দেখা গেছে এই জেটিতে কর্মরত প্রকৌশলী ও কর্মীদের চোখে মুখে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার কোনও জটিলতা ছাড়াই এই স্প্যানটি বসানো সম্ভব হলে তাদের টানা সোয়া তিন বছরের অক্লান্ত শ্রম দেওয়া সার্থক হবে।
এদিকে, নানামুখী চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে সবগুলো স্প্যান বসানো শেষ হতে যাওয়ার মুহূর্তে বিশেষ কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি সেখানে। তবে, চীনা ঠিকাদার কোম্পানি নিজেদের নিয়মে প্রকৌশলী ও কর্মীদের জন্য একটি ছোট ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারে বলে আলোচনা শোনা যাচ্ছিল।
পদ্মা সেতুর এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখানে অনেক সময় কুয়াশা এত বেশি হয় যে দুই ফুট দূরত্বেই কিছু দেখা যায় না। কুয়াশার কারণে যদি বিঘ্ন না ঘটে তাহলে বৃহস্পতিবার দুপুরের আগে স্প্যান বসানো সম্ভব হবে।’
প্রসঙ্গত ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। সে হিসেবে ৩ বছর ২ মাস ১০ দিনে বসানো হচ্ছে সেতুর সব কয়টি স্প্যান। বন্যা, নদী ভাঙন, চ্যানেলে নাব্য সংকট, করোনাভাইরাস মহামারিসহ নানা জটিলতা কাটিয়ে একে একে ৪০ টি স্প্যান বসানো হয়। গত ৪ ডিসেম্বর ৪০তম স্প্যান বসানো শেষ হওয়ায় এখন শেষ স্প্যানটি বসলেই মিলিয়ে দেবে নদীর এপার-ওপারকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৯১ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ৩৮ ভাগ।