সারাদেশ ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০৩:৪৯

রোহিঙ্গা পাচারের অভয়ারণ্য সিলেট সীমান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক 

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাচারের নিরাপদ রুট হয়ে দাঁড়িয়েছে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত। দালাল চক্রের মাধ্যমে তারা সিলেটে অবস্থান ও ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছে। গেল নয় দিনের ব্যবধানে ভারতে যাওয়ার সময় সিলেটে র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে ২৫ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী আটক হয়েছে। পরে তাদের কক্সবাজার উখিয়া ক্যাম্পে পাঠানো হয়। রোহিঙ্গারা যাতে সিলেটে অবস্থান বা সীমান্ত দিয়ে আসা-যাওয়া করতে না পারে সে জন্য নজরদারি বাড়িয়েছে র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দারা।

সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার যমুনা মার্কেটে মামুন বাস কাউন্টারের সামনে থেকে ১১ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আটক করে মহানগর পুলিশ। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন নারী, চারজন শিশু ও তিনজন পুরুষ ছিলেন। এদের সবাই কক্সবাজার উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দা। আটকের পর রোহিঙ্গা শরণার্থীরা জানান, তারা ভারতে যাওয়ার উদ্দেশে কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে কৌশলে পালিয়ে সিলেট এসেছেন। ভারতে তাদের পরিচিত রোহিঙ্গারা রয়েছেন। দালালদের মাধ্যমে তারা সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আটকের পর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদের নিজ নিজ ক্যাম্পে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে ৬ ডিসেম্বর সকালে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ূন রশিদ চত্বর থেকে ১৪ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আটক করে র‌্যাব। এ সময় দুই দালালকেও আটক করা হয়। আটক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে সাতজন প্রাপ্তবয়স্ক ও সাতজন শিশু ছিল। প্রাপ্তবয়স্ক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আদালতে হাজির করা হলে তারা কৌশলে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে দালালদের মাধ্যমে ভারতে যাওয়ার চেষ্টার কথা স্বীকার করে। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়। এদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাচারের অভিযোগে আটক কক্সবাজারের উখিয়া থানার কুতুপালং গ্রামের মো. ছাদেক ও সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ডনা রাতাছড়া গ্রামের সেলিম আহমদের নামে মানব পাচার আইনে মামলা হয়েছে। আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদের জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। ৯ দিনে ২৫ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী আটক ছাড়াও ইতিমধ্যে সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত অর্ধশত ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এদের সবাই সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। ভারতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে দালালরা সিলেটের জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট সীমান্তই বেশি ব্যবহার করছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার বি এম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, ‘দালালদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ক্যাম্প থেকে কৌশলে পালিয়ে আসছে। আটকের পর তারা বলছে, ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্যই তারা ক্যাম্প ছেড়ে আসছে। রোহিঙ্গারা যাতে সিলেট শহরে অবস্থান বা ক্যাম্প ছেড়ে সীমান্ত দিয়ে পালাতে না পারে সে জন্য মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কড়া নজরদারির কারণে ১১ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী সিলেট শহর ত্যাগের আগেই ধরা পড়েছে।’