অর্থ ও বাণিজ্য ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০৫:১৮

ফের হতাশায় শেয়ার বাজার

ডেস্ক রিপোর্ট

সাত মাস ঊর্ধ্বমুখী থেকে ফের পতনের হতাশায় শেয়ারবাজার। সপ্তাহজুরে উত্থান পতনের খেলায় লোকসান থেকে বেরই হতে পারছে না শেয়ারবাজার। শেষ ৪ সপ্তাহ ধরে এমনই চিত্র শেয়ারবাজারে।

সূচকের এমন পতনের সাথে সাথে লোকসানের মুখে বিনিয়োগকারীরা। গত সপ্তাহে আরও ১০ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এর ফলে ফের হতাশা বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের দরপতনে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এর মাধ্যমে টানা চার সপ্তাহের পতনে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা হারালো শেয়ার বাজার।

বড় অঙ্কের বাজার মূলধন হারানোর পাশাপাশি গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে কমেছে সবকটি মূল্য সূচক। তবে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমেছে প্রায় তিন শতাংশ। আর লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৭১০ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ৯ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছিল ৪ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। তার আগের দুই সপ্তাহে কমেছিল ৮ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা এবং ৯ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এ হিসাবে টানা তিন সপ্তাহের পতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ৩১ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা বাজার মূলধন হারায়। যদিও এর আগে টানা সাত সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর বাজার মূলধন ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা বেড়েছিল।

এদিকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জও বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। শেয়ার বাজারে লেনদেনের জন্য ঘরে বসেই বিও (বেনিফিশারি ওনার্স) হিসাব খোলার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এই সুবিধার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন,‘আমরা সবাই মনে করি, পুঁজিবাজারই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার সক্ষমতা রাখে। সেটাকে আমরা সম্মিলিতভাবে সাফল্যমণ্ডিত করতে প্রচেষ্টা চালাবো।’

শেয়ার বাজারকে স্বাভাবিক ও গতিশীল রাখতে বিএসইসি সুশাসনের পাশাপাশি প্রবাসীদেরকে ও বহুজাতিক কোম্পানিকে বাজারে আনতে গত মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে দুবাইয়ে চার দিনব্যাপী ‘রোড শো’র আয়োজন করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের বিখ্যাত ‘দুবাই মলের’ কাছে স্কাইভিউ হোটেলে এ রোড শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত এই রোড শো চলার কথা। এর আগে গত মঙ্গলবার দুবাইয়ে নন-রেসিডেন্সিয়ালদের জন্য অনলাইন বিও‘র উদ্বোধন করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

ডিএসই’র তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৬২ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৭৬ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট । তার আগের দুই সপ্তাহে কমেছিল ১১১ দশমিক ৮২ পয়েন্ট ও ৭৩ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে। অর্থাৎ চার সপ্তাহের টানা পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমেছে ৪২৪ পয়েন্ট।

প্রধান মূল্য সূচকরে পাশাপাশি টানা চার সপ্তাহ পতন হয়েছে ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকেরও। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ৬৩ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছিল ১৭ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট। তার আগের দুই সপ্তাহে কমেছিল ১৭ দশমিক ২৪ পয়েন্ট ও ২৮ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট ।

আবার ইসলামি শরিয়াহ’র ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচকও টানা চার সপ্তাহ পতনের মধ্যে রয়েছে। গত সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ২৪ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে কমেছিল ১৯ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট। তার আগের দুই সপ্তাহে কমেছিল ১৪ দশমিক ২৫ পয়েন্ট এবং ২৮ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট।

সবকটি মূল্য সূচকের পতনের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মাত্র ২৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে। আর কমেছে ২৫২টির। তবে ৯১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অবশ্য শেয়ার বাজারের এতগুলো খারাপ খবরের মধ্যে একটি ভালো খবর হলো— সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮১৭ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৭৫০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৬৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বা ৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৮৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৩ হাজার ৭৫২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৩৩৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা।