ধর্ম ও জীবন ১৯ মার্চ, ২০২১ ০৭:২৬

যারা নবী পরিবারের সদস্য হয়েও ঈমান আনেনি

ডেস্ক রিপোর্ট

হিদায়াত মানবজীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। হিদায়াতপ্রাপ্তিতে মানুষের কোনো হাত নেই। আল্লাহ যাকে চান তাকে হিদায়াত দান করেন। তিনি বলেন, ‘আপনি যাকে ভালোবেসেছেন তাকে হিদায়াত করতে পারবেন না; কিন্তু আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন।’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ৫৬)

এ জন্য দেখা যায়, নবীর পরিবারের সদস্য হয়েও হিদায়াত থেকে বঞ্চিত হয়েছে কেউ কেউ। এমন কয়েকটি ঐতিহাসিক ঘটনা তুলে ধরা হলো—

নুহ (আ.)-এর ছেলে : নুহ (আ.)-এর প্রত্যাখ্যানকারীদের মধ্যে ছিল তাঁর স্ত্রী ও এক পুত্র। কোরআনে এ ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আমি বললাম, তুমি তাতে প্রত্যেক যুগল হতে দুটি করে তুলে নাও। যাদের প্রতি আগেভাগেই শাস্তির কথা নিশ্চিত হয়ে গেছে তাদের বাদে আপনার পরিবারের সদস্যদের এবং যারা ঈমান এনেছে তাদের তুলে নিন। অবশ্য তাঁর সঙ্গে মাত্র স্বল্পসংখ্যক লোক ঈমান এনেছিল।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৪০)

বন্যা শুরু হলে তিনি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমার পুত্র তো আমার পরিবারভুক্ত। আর আপনার প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য, আপনি শ্রেষ্ঠতম বিচারক। তিনি বলেন, ‘হে নুহ, সে তোমার পরিবারভুক্ত নয়, সে অসৎ কর্মপরায়ণ।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৪৫ ও ৪৬)

মহানবী (সা.)-এর চাচা : চাচা আবু তালিব ছিলেন নবীজির সংকটকালের আশ্রয়। তিনি আবু তালিবকে খুব ভালোবাসতেন এবং আবু তালিবও তাঁকে প্রাণাধিক স্নেহ করতেন। কিন্তু এই আবু তালিবের ভাগ্যে হিদায়াত জোটেনি। সায়িদ ইবনুল মুসাইয়্যিব থেকে বর্ণিত, আবু তালিব মুমূর্ষু অবস্থায় উপনীত হলে রাসুল (সা.) তাঁকে বললেন, চাচাজান, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ একবার পড়ুন, তাহলে আমি আপনার জন্য আল্লাহর কাছে কথা বলতে পারব। কিন্তু আবু জাহল ও আবদুল্লাহ ইবনে আবু উমাইয়ার প্ররোচনায় তিনি ঘোষণা দেন ‘আমি আবদুল মুত্তালিবের মিল্লাতের ওপরেই আছি।’ এর পরও নবী (সা.) তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনার ইচ্ছা করলে আল্লাহ বলেন, ‘নবী ও মুমিনদের পক্ষে উচিত নয় যে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে মুশরিকদের জন্য, যদি তারা নিকটাত্মীয়ও হয়, তবু যখন তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে তারা জাহান্নামি।’ (সুরা তওবা, আয়াত : ১১৩; মুসনাদে আহমাদ)

ইবরাহিম (আ.)-এর পিতা : ঐতিহাসিকদের দাবি ইবরাহিম (আ.)-এর পিতা ছিলেন মূর্তিপূজারি আজর। কোরআনে তাঁদের কথা এভাবে এসেছে, ‘হে আমার পিতা, আমার কাছে এমন জ্ঞান এসেছে, যা তোমার কাছে আসেনি। অতএব তুমি আমার অনুসরণ কোরো। আমি তোমাকে সরল পথ দেখাব।’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত : ৪৩)

উত্তরে পিতা বলেন, ‘হে ইবরাহিম, তুমি কি আমার উপাস্যদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ? যদি তুমি বিরত না হও, তবে আমি অবশ্যই পাথর মেরে তোমার মাথা চূর্ণ করে দেব। তুমি আমার সম্মুখ থেকে চিরতরের জন্য দূর হয়ে যাও।’ (মারিয়াম, আয়াত : ৪৬)

লুত (আ.)-এর স্ত্রী : আল্লাহর নবী লুত (আ.)-এর স্ত্রীকে জাহান্নামি বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা কাফেরদের জন্য নুহ-পত্নী ও লুত-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। তারা ছিল আমার দুই ধর্মপরায়ণ বান্দার ঘরে। অতঃপর তারা তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল। ফলে নুহ ও লুত তাদের আল্লাহ তাআলার কবল থেকে রক্ষা করতে পারল না এবং তাদের বলা হলো, জাহান্নামিদের সঙ্গে জাহান্নামে চলে যাও।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ১০)

আদম (আ.)-এর ছেলে : আদম (আ.)-এর ছেলে কাবিল নবীর ঘরে জন্ম নিয়েও ঈমান লাভ করতে পারেনি। নিজ ভাই হাবিলকে হত্যা করে। পবিত্র কোরআনে তার পাপের বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘পরিশেষে তার মন তাকে ভ্রাতৃহত্যায় প্ররোচিত করল। সুতরাং সে তার ভাইকে হত্যা করে ফেলল এবং অকৃতকার্যদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩০)

আল্লাহ আমাদের সুপথ দান করুন। আমিন।