Notice: Trying to access array offset on value of type null in /home/u863453615/domains/amaderkagoj.com/public_html/includes/frontend/contents/post.php on line 46

কৌশলী বিএনপি, ভাঙ্গা-গড়ায় জাপা, খাদে জামায়াত 

তানজিল তুষার 

রাজনীতির মাঠে অনেকটাই টালমাটাল অবস্থা বিএনপির। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসেছে এ অবস্থা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছে দলটি। অন্যদিকে বর্তমানে বিরোধী দল দাবি করা জাতীয় পার্টি চিরায়িত নিয়মের মতই নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়ে তাদের ঘরে ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় লিপ্ত হয়েছে। বড় দল গুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে ইসলামী দল জামায়াত। 

সমসাময়িক ইস্যুতে বিভিন্ন ইস্যুতে সক্রিয় অবস্থানে নামছে দলটি, নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ বেশ স্বতঃস্ফূর্ত।  তবে বিএনপি এবার আন্দোলনে মারমুখী না হয়ে কিছুটা কৌশলী। দলটি রাজধানী ঢাকাকে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু করতে মরিয়া। তবে বিএনপি এমন কৌশলী আন্দোলনে গেলেও সরকার মাঠ উন্মুক্ত রাখতে নারাজ। পুলিশ ও সরকারিদল মিলে মারমুখী অবস্থান নিয়ে বিএনপিকে মাঠেই দাঁড়াতে দিচ্ছে না। রক্তপাতও ঘটছে।

বিএনপির আন্দোলন, আন্দোলনের ফলাফল আর সরকারের অবস্থান নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দলের একাধিক নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায় দলটি ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টায় আছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য  ও সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, পুলিশ, সরকারের বাহিনী এক হয়ে হামলে পড়ছে। সরকার যে ভয়ে আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভীত না হলে এভাবে শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি করতে পারে! মানুষ মাঠে নামলেই সরকার কাঁপছে।  বর্তমানের আন্দোলন নিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনে ফলাফল কী আসবে অথবা বিএনপি ক্ষমতায় আসবে কি না এই হিসাব মুখ্য নয়। একটি অগণতান্ত্রিক সরকারের পতনের জন্য আমাদের এই আন্দোলন। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা মানুষের মুক্তির পথ দেখতে পাচ্ছি।

এবারের আন্দোলনের ধরন নিয়ে জ্যেষ্ঠ এই রাজনীতিক বলেন,বিএনপি কৌশলী আন্দোলন করছে, এটি আমি মনে করছি। তবে কৌশল তো আন্দোলনের অংশ। আমরা আগেও ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আন্দোলন করেছি। অন্যদিকে বিএনপির একটি সূত্র বলছে, তাদের আন্দোলন এখন আর নয়াপল্টন কেন্দ্রীক থাকবে না। রাজধানীকে ১৬টি পয়েন্টে ভাগ করা হয়েছে। এই পয়েন্টগুলো থেকেই নিয়মিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। হচ্ছেও তাই। শুধু নয়াপল্টন থেকে আন্দোলন করলে রাজধানীকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। একইভাবে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

তবে বরাবর মতোই বিএনপির এবারের আন্দোলনের ফলাফলকেও শূন্যের খাতায় রাখছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে গ্রেনেড হামলা, হত্যা, জ্বালা-পোড়াও। এমন আন্দোলনে কোনো ফল আসে না। কোনো কৌশল অবলম্বন করেও লাভ হয় না। আন্দোলন আর রাজনৈতিক কর্মসূচি এক বিষয় নয়। একটি রাজনৈতিক দল তার কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করার পর তা আন্দোলনে রূপ নেয়। বিএনপি সেটি কখনই করতে পারেনি। আমরা ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন দেখেছি। এটিকে কেউ আন্দোলন বলতে পারে না। মূলত গণবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমনে ত্রাস সৃষ্টি করেছে। 

প্রায় একই সুরে গলা মিলিয়েছেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।  বামপন্থি এই রাজনীতিক বলেন, আমি সব সময় বলে আসছি, বিএনপি হচ্ছে আপদ, আর আওয়ামী লীগ হচ্ছে বিপদ। তারা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এসব আন্দোলনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। আমরা নিজেরাই আন্দোলন করছি। মুক্তবাজার অর্থনীতি মানুষের অধিকার গিলে খাচ্ছে, এই ধারা থেকে বের হওয়ার জন্য আমরা লড়াই করছি। এই লড়াইয়ে আমরা ভোট, নির্বাচনও গুরুত্ব পাচ্ছে। মানুষ জেনে গেছে, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। দলীয় সরকারের পরিবর্তে তদারকি একটি সরকার দরকার, যারা নিরপেক্ষ নির্বাচন করার সক্ষমতা রাখে। এই সরকার কবে পদত্যগ করবে আর নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন সম্পন্ন করবে সেজন্য লড়াই করে যাচ্ছি। ক্ষমতায় কে গেলো সেটা বড় কথা নয়। মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে সেটাই বড় বিষয়।

তবে বিএনপির আন্দোলন নিয়ে সহসাই কোন উত্তর দেননি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ,বীর বিক্রম। তার ভাষ্যে,  আমরা সরকার পতনের জন্য আন্দোলন করছি। হয়তো পতন ঘটেও যেতে পারে। কিন্তু হবেই এমনটি জোর বলা যায় না। সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি এখন এককভাবে মাঠে অবস্থান করেছে। আমরা অন্য দল এবং সাধারণ মানুষকে পাশে চাইছি। গণমানুষ আমাদের আন্দোলনে যেদিন যুক্ত হবে, সেদিনই সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে যাবে।

জামায়াতের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জোটভুক্ত দলগুলোকে যুগপৎ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার কথা বলা হয়েছে। আসলে এই সরকারের পক্ষে অন্য দলগুলোর অবস্থান নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা সময় মতো সবাইকে পাশে পাবো বলে আশা করছি।

এসব প্রসঙ্গে মতামত নেওয়া হয় সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিও একটি গণমানুষের দল। বিএনপিরও আন্দোলনের অভিজ্ঞতা আছে, সফলতা আছে। কিন্তু চলমান আন্দোলনে আসলে কী ফল আসবে, তা আগে থেকে বলার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন,  বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলেও এই অবস্থায় কোনো প্রতিযোগিতার পরিস্থিতি দাঁড় করাতে পারবে না। তারা নামে মাত্র অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। দৌড়ের ওপরে রাখা শুরু হয়ে গেছে। বিএনপির অঞ্চলভিত্তিক তালিকা করা হচ্ছে। মামলা আরও দেওয়া হবে। রাতের আঁধারে ভয় দেখানো হবে। গ্রেফতার দেখানো হবে। তখন আর বিএনপির ঝুঁকি নেওয়ার শক্তি থাকবে না। বিগত বছরগুলোতে যা দেখে এসেছি। আদালতপাড়ায় পা ফেলার জায়গা ছিল না। জামিন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে নাকি নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে?

নাগরিক সমাজের এই প্রতিনিধি আরও বলেন, মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের সফলতা নির্ভর করে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার ওপর। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কমিশনকে প্রচুর ক্ষমতা দেওয়া আছে সংবিধানে। রাজনৈতিক দলগুলো যে কারণে আন্দোলন করছে, তা নির্বাচন কমিশনের দায়। তারা সব রাজনৈতিক দলের জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিতে পারে। সরকারিদলের হয়ে পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করে কমিশনের আস্থা তলানিতে।

বিএনপির মতো দল যদি এবারও নির্বাচনে অংশ না নেয় অথবা সেই পরিবেশ না দাঁড়ায়, তাহলে এটিও বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। আর এমনটি পরম্পরায় হতে থাকলে গণতন্ত্র বলতে আর কিছু থাকবে না। এই দায়টা উপলব্ধির ব্যাপার। নির্বাচন কমিশনের এখন যে নীরবতা, তা সরকারিদলকে যা ইচ্ছা তাই করার মৌন সম্মতি দিয়ে আসছে।

 

 

টিআর


 


আরো খবর