সাক্ষাৎকার ৫ অক্টোবর, ২০২২ ১২:১৫

একান্ত সাক্ষাৎকারে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম

‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে অস্তিত্বহীন করতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। অনেকেই বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। রাষ্ট্র কখনো সাম্প্রদায়িক হতে পারে না। এই বাংলাদেশের রাষ্ট্রে চরিত্রটা হবে সর্ম্পন্নরুপে ধর্মনিরপেক্ষ। আমরা বাংলাদেশকে এমন একটি জায়গা নিয়ে যেতে চাই যে, আগামী প্রজন্ম যেন নির্ভয়ে বাংলাদেশকে নতুন ধারায় পৌছে দিতে পারে। বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ধারা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িক আচার-আচরণ, সাম্প্রদায়িক চরিত্র কিংবা সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড এদেশে টিকে থাকুক এটা আমরা চাই। তাদেরকে অস্তিত্বহীন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। আমাদের কাগজের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। 

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে যারা কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি, যাদের মুক্তিযুদ্ধে কোনো ভূমিকা ছিল না, মুক্তিযুদ্ধে আমাদের কী অর্জন করেছি যারা এটা বুঝতে পারে না, তাদেরকে তো রাজনীতি শেখানোর প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। স্বাধীনতার ৫০বছর পালনের পরও যারা পাকিস্তানকে নিয়ে ভালো লাগে বলে গান গায়, তারা বাংলাদেশে খেয়ে, পড়েও বাংলাদেশকে ধারণ করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। বাংলাদেশকেই তারা ধারণ করে না। এ অপশক্তিদের হাত থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে।’   

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ১০০ দিনে কর্মসূচি দেশব্যাপী হাতে নিয়েছিল। সেই ১০০দিনে শত শত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে বিএনপি। ২০০১ সালে ক্ষমতা এসে বিএনপি সরকার ক্লিনহার্ট নামে যে অভিযান পরিচালনা করেছে, যারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে হত্যা করেছে, পঙ্গু করেছে, আহত করেছে তাদেরকে রক্ষা করতে ইনডেমনিটি দিয়েছিল বেগম খালেদা জিয়া।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী দল নয়, আমরা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করব না,কারণ আওয়ামী লীগের জন্মই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। আওয়ামী লীগ কখনোই স্বৈরশাসকের সাথে হাত মিলিয়ে ক্ষমতায় যায়নি, চিন্তাও করেনি। আমাদেরকে দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে।’

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজকে আমাদেরকে অনেকেই সাজেশন দেয়, অনেকেই জ্ঞান দেয় অথচ তারা নিজের দেশেই বাস্তবে প্রয়োগ করে না। তারা আমাদেরকে গণতন্ত্রের শিক্ষা দিতে চায়। যাদের দেশের পার্লামেন্ট ভবন দখল নিয়ে যায়, দানবীয় কায়দায় হামলা পরিচালনা করে, তারাও কিন্তু আমাদেরকে অনেক দীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করে। এদের কেউ কেউ আমাদের স্বাধীনতা-সংগ্রামে সমর্থন করেনি। তখন তারা পাকিস্তানী স্বৈশাসকদের সমর্থন করেছিল। ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল তখন মানবিকতা, মানবিক মূল্যবোধ, অধিকারের কথা তাদের মুখে শোনা যায়নি। আসলে তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। এটা করেছে আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ কিছু রাজনৈতিক দল বিদেশীদের কাছে মিথ্যাচার করে, নালিশ করে, সহযোগীতা ভিক্ষা চায়। কী ভিক্ষা চায়? তাদের নিজেদেরকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বসাতে ধরর্ণা দেয়। এ সমস্ত রাজনীতিক দেউলিয়াত্বের কারণেই তারা আমাদেরকে দীক্ষা দেয়।

‘২০২৪ সালের যে নির্বাচন হবে সেটা আমরা চাই, এটা পরিস্কার যে- একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। বিএনপি যে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে এটা তাদের রাজনৈতিক এজন্ডা। কারণ, তারা নির্বাচনে যাওয়ার ক্ষেত্রে তারা দেখা যায় যে, ৩০০আসনে ৮শ প্রার্থী দিয়ে থাকে। আবার কোথাও কোথাও ৩জনের অধিক প্রার্থীও দেয়। প্রার্থী একজন হবে এটা তারা করে না। নির্বাচনের জন্য না, মনোনয়ন বাণিজ্য করতেই তারা নির্বাচনে অংশ নেন। তিনজনকে মনোনয়ন দিলে জনগন কাকে প্রার্থী হিসেবে নিবে। আসল কথা হলো মনোনয়ন বাণিজন্য করা। খালেদা জিয়া দেয় একজনকে আবার তারেক রহমান তার বাহিরে দেয় পাঁচজনকে। নমিনেশন দেওয়ার নামে সমন্বয় না করার মানেই হচ্ছে ইলেকশন জিতা নয়, টাকা কামানো। তারা এই বাণিজ্য বন্ধ কর’ক, নির্বাচনে এসে জনগণের কাছে যাক। জনগণকে নির্বাচনে যাওয়ার মানসিকতা কাজ করলে তারা নির্বাচনে এতো খারাপ করতো না।’-জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম। 

তিনি আরো বলেন,  ‘বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসলেই দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়, তারা (বিএনপি) ক্ষমতা গেলেই সংখ্যালঘু সনাতন ধর্মীরা তাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়, শরণার্তী হিসেব আশ্রয় নিতে হয়। বিএনপি-জামায়াতিরা ক্ষমতায় দেশে দূর্গাপূজা হতে পারে না, পূজারীরা উৎসব করতে পারে না। পূজা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। পহেলা বৈশাখেও হুমকী দেয়। তারা (বিএনপি) উল্টো আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করে। এগুলো করে তারা মানুষকে অন্ধকারে রাখতে চায়।’