আন্তর্জাতিক ১৩ নভেম্বর, ২০২২ ০৭:২৯

সবকিছু পুনরুদ্ধার করব : জেলেনস্কি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি দাবি করেন, রাশিয়ানদের সর্বত্র লক্ষ্য একটাই যতটা সম্ভব মানুষকে কষ্ট দেওয়া। তবে আমরা সবকিছু পুনরুদ্ধার করব, বিশ্বাস করুন।’ রোববার ১৩ নভেম্বর ইউক্রেনের কর্মকর্তারা সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘মানবিক বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেছেন।

খেরসনে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সেখানকার ধ্বংসযজ্ঞকে স্থানীয় প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ সেখানে রেখে যাওয়া রুশ সৈন্যদের বিস্ফোরক ডিভাইস নিষ্ক্রিয় করার পাশাপাশি মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।

দেশটির একজন কর্মকর্তা খেরসনের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘মানবিক বিপর্যয়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, শহরে থেকে যাওয়া বাসিন্দারা এখনও পানি, ওষুধ এবং খাবারের তীব্র সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় রুটির মতো মৌলিক খাবারেরও ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে সেখানে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা ছবিতে দেখা যায়, ইউক্রেনের কর্মীরা রুশ-সমর্থিত দখলদার কর্তৃপক্ষের স্থাপিত স্মৃতিফলক অপসারণ করছেন। অধিকৃত ভূখণ্ডে ইউক্রেনের প্রতিরোধ আন্দোলন ইয়োলো রিবনের পোস্ট করা এক টেলিগ্রাম বার্তায় দেখা যায়, খেরসনের একটি পার্কে সোভিয়েত আমলের সামরিক কর্মকর্তাদের ছবিযুক্ত ফলক ভেঙে ফেলছেন দুই ব্যক্তি।

এদিকে, খেরসনে রুশ সৈন্যদের ধ্বংসযজ্ঞে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করেছে ইউক্রেনের পুলিশ। আট মাসের খেরসন দখলের সময় রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সহযোগীদের শনাক্ত করতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তা চেয়েছে পুলিশ।

রাশিয়ার সৈন্যরা চলে যাওয়ার পর খেরসনে স্থানীয় সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম পুনরায় তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। সম্প্রচার মাধ্যমের সম্প্রচার পুনরায় স্থাপনে ইউক্রেনের পুলিশ সহায়তা করছে বলে জানিয়েছে।

ইউক্রেনের জাতীয় পুলিশের প্রধান ইহোর ক্লাইমেনকো বলেছেন, খেরসনে প্রায় ২০০ কর্মকর্তা কাজ করছেন। তারা তল্লাশি চৌকি স্থাপন এবং সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ নথিভুক্ত করছেন।

দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া তাদের বাহিনী প্রত্যাহারের আগে খেরসনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। তার ভাষায়, ‘খেরসন থেকে পালানোর আগে, দখলদাররা সকল গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে: যোগাযোগ, পানি, তাপ, বিদ্যুৎ; সবই।’

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে আগ্রাসন শুরুর পর মার্চের প্রথম সপ্তাহে ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান শহর এবং বন্দরনগরী খেরসন দখল করে নেয় রাশিয়া। এছাড়া প্রথম বড় কোনো ইউক্রেনীয় শহর হিসেবে খেরসন দখল করেছিল রুশ সেনারা। এর প্রায় দুই মাসের মাথায় খেরসনের পুরো অঞ্চলটি দখলে নেয় মস্কোর বাহিনী।

প্রায় ৩ লাখ বাসিন্দার খেরসন শহর ও অঞ্চলটি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দখলে যাওয়া মস্কোর জন্য বড় ধরনের এক বিজয় বলে মনে করা হয়েছিল। মূলত রুশ সামরিক বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘাঁটিও ছিল এই শহরটি।

তবে গত শুক্রবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ইউক্রেনের দক্ষিণের খেরসন অঞ্চলের দিনিপ্রো নদীর পশ্চিম তীর থেকে রাশিয়ার সব সৈন্য প্রত্যাহার পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে।

মন্ত্রণালয় বলেছে, রাশিয়ার মোতায়েন করা সব সৈন্য ও যুদ্ধের সরঞ্জাম দিনিপ্রোর বাম অথবা পূর্ব দিকে স্থানান্তর করা হয়েছে। শুক্রবার মস্কোর স্থানীয় সময় ভোর ৫টার মধ্যে খেরসন থেকে সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়।

এএফপি বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার আক্রমণের পর থেকে রুশ সেনাদের দখল করা একমাত্র আঞ্চলিক রাজধানী ছিল খেরসন। শুক্রবার রুশ সেনারা সেটি পরিত্যাগ করার পর শহরের বাসিন্দারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং শহরের কেন্দ্রে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের স্বাগত জানান।

ইউক্রেনীয় সৈন্যরা খেরসন অঞ্চলে ৬০ টিরও বেশি বসতির নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে উল্লেখ করে শনিবার জেলেনস্কি আরও বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মাইন, ট্রিপওয়্যার এবং অবিস্ফোরিত গোলা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এদিকে ইউক্রেনীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, ইউক্রেন ময়দানের যুদ্ধে জয়ী হচ্ছে। কিন্তু যুদ্ধ চলছেই।

আমাদেরকাগজ/এএইচ