শিক্ষা ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১১:২০

দেশের সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষকদের বেতন ৩৬ হাজার : গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট ।।

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ৩৬ হাজার টাকা বেতন পান বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। সেখানে তিনি এ মন্তব্য করেন। টকশোতে প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যা, সম্ভাবনা ও সমাধান নিয়ে কথা বলেন জাকির হোসেন।

টকশোতে প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা ৩৬ হাজার টাকা বেতন নিয়ে যদি কিন্ডারগার্টেনের ৩ হাজার টাকার শিক্ষকদের সাথে না পারে তা হলে ওই টাকা হালাল হবে না। তাদের সন্তান মানুষ হবে না যারা শিক্ষায় ফাঁকি দেবে। যিনি আদর্শ শিক্ষক তার সন্তান মানুষ হবে। তার স্কুলের ছাত্ররা তাকে আজীবন সম্মান করবে।

তিনি আরো বলেন, সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের বিকল্প নেই। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতির পক্ষে উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। আর শিক্ষার প্রথম ধাপ প্রাথমিক শিক্ষা।

শুরুতেই উপস্থাপিকা প্রতিমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, শিক্ষা সেটা আবার শিশুদের শিক্ষা (প্রাথমিক)। গোটা জাতি গঠনের দায়িত্ব আপনার কাঁধে। আজকের যে শিশু, সে ভবিষ্যৎ তৈরি করবে। আপনার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে আগামী প্রজন্ম কেমন হবে। কাজটা কি কঠিন মনে হয়? একটু চ্যালেঞ্জ মনে হয় না?

উত্তরে তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই, চ্যালেঞ্জ মনে হবেই। আমাদের প্রতিবন্ধকতা আছে। বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলো আছে। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুধাবন করতে পেরেছিলেন সোনার বাংলা গড়তে হলে জাতিকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে অনেক দূর এগিয়েছি, জাতি অনেকদূর এগিয়েছে। আমরাও মানসম্মত শিক্ষার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৪১ সালে আমরা উন্নত দেশে যাবো। সোনার বাংলাদেশ করতে চাই।

উপস্থাপিকা প্রশ্ন করেন, মাঝে মধ্যেই ঝটিকা সফরে যান আপনি, এতে কি সুফল পাচ্ছেন?

প্রতিমন্ত্রী বলেন, না এটা ঝটিকা সফর না। এটা তো আমার কর্তব্য। আমার শিক্ষকরা কি করছে, ছেলে-মেয়েরা কি করছে। সফরে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। সুখ, দুঃখের সাথে সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছি। তাদের সঙ্গে মিশেছি এতে তারা খুব আনন্দ পায় এবং এই সফরের সুফল পাচ্ছি। যারা ফাঁকিবাজ তারা সব সময় ফাঁকিবাজ, যারা ভালো তারা আনন্দ পায়। আমাকে পেয়ে ছাত্র ছাত্রীরাও অনেক খুশি হয়।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন কেজি স্কুল, ইংলিশ মিডিয়াম ভালো ছাত্র-ছাত্রীদের নিয় যায়। অভিভাবকরা ভাবেন অমুকের ছেলে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ছে, আমার ছেলেকেও দিবো। প্রাইমারির দিকে আর কারও মনযোগ নেই।

বাংলাদেশ এডুকেশন রিপোটার্স ফোরামের সভাপতি মোস্তফা মল্লিক বলেন, আপনি সূত্রাপুরে যে স্কুলটিতে সফরে গিয়েছিলেন সেটা সচিবালয়ের খুব কাছে এবং রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত। এই স্কুলে একজন শিক্ষক গত এক বছর ধরে অনপুস্থিত। এটা জানার জন্য আপনাকে, প্রতিমন্ত্রীকে এক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। মাঝখানে অনেকগুলো ধাপ আছে- টিও, এটিও, ডিপিও কোনই ব্যবস্থা নিলেন না। শেষ পর্যন্ত এটা আপনাকেই দেখতে হলো। তা হলে সারাদেশের চিত্রটা আসলে কেমন?

উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারা ব্যবস্থা নেয়নি এমন না। তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে কিন্তু খুব ধীরে। এটি কবে আলোর মুখ দেখতো জানি না। তবে এখন আলোর মুখ দেখবে।

তিনি আরও বলেন, সকল চাকরিতে প্রমোশন থাকা দরকার। উপরে যাওয়ার একটা প্রতিযোগিতা থাকা দরকার। কিন্তু এখানে সেটা নেই। আমরা চাচ্ছি এই নিয়মের পরিবর্তন হোক। মন্ত্রণালয়ে তাদের দাবিগুলো নিয়ে আলাপচারিতা হয়েছে। ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সহকারী শিক্ষককে সহকারী প্রধান, সহকারী প্রধানদের প্রধান শিক্ষক করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

সহকারী শিক্ষক আবু সাঈদ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে এক ঘোষণায় ৩৭ হাজার বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন। তিনি শিক্ষা বান্ধব ছিলেন, শিক্ষকদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তিনি সহকারী শিক্ষকদের সাথে প্রধান শিক্ষকদের কোন বেতন বৈষম্য রাখেননি। তখন একই স্কেলে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক বেতন পেতেন। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য তিনটি ধাপ। বাংলাদেশের সকল সহকারী শিক্ষকদের প্রাণের দাবী প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপটি আমাদের দেওয়া হোক। মন্ত্রী বলেন, আপনার কথা আমি নোট নিলাম। বিবেচনা করবো।

উক্ত অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, নন্দীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুন নাহার। সিঙ্গাইর সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজা খাতুন। পরাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু সাঈদ মো. মাসুদুর রহমান। বাংলাদেশ এডুকেশন রিপোটার্স ফোরামের সভাপতি মোস্তফা মল্লিক। অভিভাবক, ফারজানা রহমান। তৃতীয় শেণির শিক্ষার্থী লাবিবা আফরিন।