আন্তর্জাতিক ১ ডিসেম্বর, ২০২২ ১০:৪০

ইরানে হার উদ্‌যাপন করায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত ১

ছবি:ইন্টারনেট

ছবি:ইন্টারনেট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের উত্তরাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে একজন ব্যক্তির নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দেশটির সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরা প্রকাশ্যে বিশ্বকাপ থেকে জাতীয় ফুটবল দলের বাদ পড়ার উদ্‌যাপন করতে গেলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মেহরান সামাক নামে একজনের মৃত্যু হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি ফুটবল দলের পরাজয়ে উল্লাস করায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারানো ওই যুবকের নাম মেহরান সামাক। কর্মীরা জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার রাতে ইরানের বন্দর আনজালিতে পরাজয় উদযাপনে নিজের গাড়ির হর্ন বাজানোর পর ২৭ বছর বয়সী মেহরান মাথায় গুলিবিদ্ধ হন।

ইরানি সাংবাদিক মাসিহ আলিনেজাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে একাধিক ভিডিও শেয়ার করেছেন এই বিষয়টি নিয়ে। ভিডিও থেকে দেখা গেছে, একদল ইরানি সানন্দাজ শহরের রাস্তায় নেমে গানের তালে তালে দল বেঁধে নাচছেন।

ভিডিওগুলো শেয়ার করে মাসিহ আলিনেজাদ লিখেছেন, ‘ইরান এমন একটি দেশ, যেখানে মানুষ ফুটবলের প্রতি খুবই আবেগপ্রবণ। এখন তারা সানন্দাজ শহরের রাস্তায় নেমেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তাদের ফুটবল দলের হারের উদ্‌যাপন করছে। তারা চায় না সরকার খেলাধুলাকে ব্যবহার করে তার খুনি শাসনব্যবস্থাকে স্বাভাবিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করুক।’

ইরানের নাগরিকদের এই উদযাপন নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনাও হয়। সরকারের বিরোধিতা করতে ইরানের ফুটবল দলের হার উদযাপন করা নিয়েও সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরইমধ্যে বুধবার নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে একজনের মারা যাওয়ার খবর সামনে এলো।

অভিযোগ উঠেছে, ইরানের ফুটবল দলের হারের পর তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বন্দর আনজালি শহরে গাড়িতে হর্ন বাজিয়ে উদযাপনে মেতেছিল ২৭ বছর বয়সী মেহরান। তারই শাস্তি স্বরূপ গুলি চালিয়ে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী তাকে হত্যা করে বলে দাবি করেছে ডানপন্থি একটি মানবাধিকার সংগঠনের।

তারা জানিয়েছে, মেহরান সামাকের মাথায় গুলি করে নিরাপত্তা বাহিনী। তবে ইরান সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের হত্যার বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর থেকেই ইরানে সরকারবিরোধী যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা পৌঁছে যায় ফুটবল বিশ্বকাপের মঞ্চেও। গত মঙ্গলবার বিশ্বকাপ থেকে ইরান ছিটকে যাওয়ার পরই আনন্দে মেতেছিল ইরানিদের একাংশ।

তাদের যুক্তি, এই হার ফুটবল দলের নয়, বরং সরকারের। আর সেই কারণেই আনন্দ-উৎসবে মেতেছেন তারা। তবে সরকারের বিরোধিতা করার ফলও মিলল হাতেনাতে। ইরানের হার উদযাপন করার অপরাধে গুলি করে হত্যা করা হলো ওই যুবককে।

মঙ্গলবার রাতে কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে যুক্করাষ্ট্রের বিরুদ্ধে খেলতে নামে ইরান। সেই ম্যাচে পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে ইরান বিদায় জানায় বিশ্বকাপকেও। আর দেশের ফুটবল দলের হারের পরই উদযাপনে নামে ইরানি নাগরিকদের একাংশ।

মূলত গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বিক্ষোভে টালমাটাল ইরান। হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ২২ বছর বয়সী কুর্দি ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজত থেকে কোমায় নেওয়া হয় এই তরুণীকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিনই মারা যায় মাহসা আমিনি।

 

আমাদের কাগজ//টিএ