অর্থ ও বাণিজ্য ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৪:৩৬

আড়াই বছরে সর্বনিম্ন লেনদেন পুঁজিবাজারে

আমাদের কাগজ রিপোর্ট: ১৬৯টি কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পরও অংশগ্রহণ বাড়েনি বিনিয়োগকারীদের। রোববার বড়দিনের ছুটির পর সোমবার প্রথম কর্মদিবসে সূচক পতনের সঙ্গে লেনদেন নামল ২০০ কোটির নিচে।

এর আগে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ২২৭ কোটি ৭৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকার শেয়ার। সেটি ছিল ২০২০ সালের ১৬ জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন লেনদেন।

তলানিতে নামলেও গত দুই বছরে লেনদেন ২০০ কোটির নিচে নামেনি, কিন্তু সোমবার হাতবদল হয় ১৯৮ কোটি ৮০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, যা চলতি বছরের তো বটেই, গত বছর মাসে সর্বনিম্ন।

এর চেয়ে কমল লেনদেন হয়েছিল ২০২০ সালের জুলাই। ওই দিন হাতবদল হয়েছিল ১৩৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

অর্ধেকের কিছু বেশি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত আসার দিন বুধবার লেনদেন ছিল ৩৩৩ কোটি ৫৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার লেনদেন কমে ১০৫ কোটি ৮৪ লাখ ২০ হাজার টাকা বা ৩১ দশমিক ৭২ শতাংশ।

সোমবার সেটি কমল ২৮ কোটি ৯৪ লাখ হাজার টাকা বা ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ।

পাঁচ কর্মদিবস পর বৃহস্পতিবার সূচকের বেড়েছিল পয়েন্ট। এক কর্মদিবস পরই ফের কমল ১২ পয়েন্ট। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান করে হাজার ১৮৯ পয়েন্টে।

দরবৃদ্ধির তুলনায় দরপতন হয় পাঁচ গুণের বেশি। ২৫টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে দরপতন হয় ১৩৭টির। ফ্লোর প্রাইসে বা আগের দিনের দরে হাতবদল হয় ১৬৭টির, যা বৃহস্পতিবার ছিল ১৫২টি। ফ্লোর প্রাইসে গত কয়েক মাসে সেটিই ছিল সবচেয়ে কম।

আজ ৬৩টি কোম্পানির একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি। এর মধ্যে লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের কারণে লেনদেন বন্ধ ছিল দুটির। আগের কর্মদিবসে রেকর্ড ডেটের বাইরে কোনো শেয়ার লেনদেন হয়নি ৮১টি কোম্পানির।

করোনাভাইরাসের কারণে ২০২১ সালের এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় বিধিনিষেধ বা লকডাউন দেয়ার ঘোষণায় বাজারে যে আতঙ্ক ছিল, এখনকার পরিস্থিতি তার চেয়ে খারাপ। এই বিধিনিষেধে লেনদেন বন্ধ হয়ে যাবে, এমন শঙ্কায় এপ্রিল হাতবদল হয় ২৩৬ কোটি ৬০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা, তবে লেনদেন চলবে, এমন ঘোষণার পরের দিন থেকে ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার।

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কার মধ্যে গত জুলাইয়ে পুঁজিবাজারে ক্রমাগত দরপতনের মধ্যে ডিএসইর সাধারণ সূচক ডিএসইএক্স ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যায়। এরপর ৩১ জুলাই দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয়া হয়।

করোনার সময় ফ্লোর প্রাইস পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক হলেও এবারের চিত্রটি অন্যরকম। শুরুর দুই মাস বাজারে লেনদেন সূচক বাড়লেও তা ভারসাম্যপূর্ণ ছিল না। সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০টি কোম্পানির দর বাড়লেও বেশিরভাগ কোম্পানির লেনদেনে ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি।

বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কা, দেশের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরও যখন কমতে থাকে, তখন লেনদেনও নামতে থাকে।

কিন্তু ফ্লোরের বাধায় লেনদেন যে কমে যাচ্ছে, সেটি স্পষ্ট। মুহূর্তে তিন শতাধিক কোম্পানির শেয়ারদর ফ্লোরে অবস্থান করছে।

একপর্যায়ে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিএসইসির কাছে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার দাবি জানালে নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানায়, অনির্দিষ্টকালের জন্য সুবিধা বহাল থাকবে। শেষমেশ সেই অবস্থান থেকে সরতে হলো তাদের।

যে ১৬৯টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তোলা হয়েছে, সেসব কোম্পানির শেয়ারের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা এক শতাংশ নির্ধারণ করে দেয়ায় ১০ টাকার নিচের শেয়ারের দরপতন সম্ভব নয়।

কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত মূলধন মোট বাজার মূলধনের শতাংশ মাত্র। ফলে তাদের নূন্যতম দরপতনে সূচকে তেমন প্রভাব পড়ার কারণ নেই।

পুঁজিবাজারে লেনদেন নিয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, মানুষ এখনও অবজার্ভ করছে। সার্কিট ব্রেকার শতাংশ কমার কারণে কী হয়, সেটা দেখছে। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে বাজার কোন দিকে যাবে, সেটা দেখতে চাচ্ছেন তারা।

 

 

 

 

আমাদের কাগজ/টিআর