ধর্ম ও জীবন ৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ১২:২২

পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও পরার্থপরতায় ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক : ইসলাম ধর্ম চির সত্য এবং শাশ্বত সুন্দরের ধর্ম। পারস্পরিক কল্যাণ কামনা, বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, নিজের প্রয়োজন সত্ত্বেও অন্যকে প্রাধান্য দেওয়া—এসব হচ্ছে ইসলামের চিরায়ত সৌন্দর্য। ইসলামের সূচনালগ্নে মক্কার মুসলিমগণ এক কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন। আপন গোত্রের অবিচার ও নিপীড়ন তাদের স্বদেশ ত্যাগে বাধ্য করেছিল। তখন মদিনার মুসলমানগণ সহযোগিতা ও সহানুভূতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। তারা নিজেদের প্রয়োজন ও দারিদ্র্য সত্ত্বেও সহায়-সম্বলহারা মুহাজির মুসলমান ভাইদের জন্য ধন-সম্পদ ও আপন স্বার্থ ত্যাগ করেছিলেন। তাদের পরার্থপরতার এই গুণ পছন্দ করে আল্লাহ পাক কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেছেন: ‘তারা (আনসার সাহাবিরা) নিজেদের ওপর (মুহাজিরদের) প্রাধান্য দেয়। যদিও নিজেদের প্রয়োজন ও অভাব থাকে।’ (সুরা হাশর (৫৯) :০৯)

সুরাতুদ দাহরে আল্লাহ পাক জান্নাতের বিশেষ কিছু নেয়ামত উল্লেখপূর্বক এসব নেয়ামতের অধিকারীদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেছেন: ‘(তারাই এসব নেয়ামত লাভ করবে, যারা...) এবং যারা মিসকিন, এতিম ও বন্দিদের খাবার দান করে তার প্রতি (নিজেদের) আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও। (আর বলে) আমরা তো তোমাদের খাওয়াই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। তোমাদের থেকে আমরা কোনো প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।’ (সুরা দাহর (৭৬) : ৮-৯) আরেক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে: ‘মুমিন নর ও মুমিন নারী সবাই একে অন্যের বন্ধু।’ (সুরা তাওবা (৯) : ৭১)


নিজের পছন্দ এবং প্রয়োজন সত্ত্বেও অন্যকে দিয়ে দেওয়ার একটি চমত্কার সুন্দর দৃশ্য ফুটে ওঠে এ ঘটনায়, ‘হজরত সাহল বিন সাদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন নারী সাহাবি নবিজির জন্য সুন্দর কারুকার্য করা একটি নতুন কাপড় হাদিয়া এনে আরজ করলেন, আমি এটি নিজ হাতে তৈরি করেছি। আপনি তা পরিধান করলে খুশি হব। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাপড়টি গ্রহণ করলেন। তার কাপড়ের প্রয়োজনও ছিল। যখন তিনি তা লুঙ্গি হিসেবে পরিধান করে ঘরের বাইরে এলেন, এক ব্যক্তি বলল, খুব চমত্কার কাপড় তো! আমাকে তা দান করবেন কি? তখন নবিজি ঘরে ফিরে গিয়ে তা খুলে ভাঁজ করে লোকটির জন্য পাঠিয়ে দিলেন। এ দৃশ্য দেখে অন্যান্য সাহাবি ওই ব্যক্তিকে তিরস্কার করে বলতে লাগলেন, আরে মিয়া! তুমি কি জানো না, কাপড়টি নবিজির প্রয়োজন রয়েছে। আর তিনি কোনো কিছু চাইলে ‘না’ বলেন না। সে জবাবে বলল, আমি সবই জানি, এরপরও চেয়েছি, যাতে তাঁর শরীর মুবারক স্পর্শে ধন্য কাপড় দিয়ে আমি নিজের কাফন বানাতে পারি। বর্ণনাকারী সাহাবি বলেন, ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর সেই কাপড়েই তাকে দাফন করা হয়েছিল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস ১২৭৭, ২০৯৩, ৫৮১০, ৬০৩৬)

আরো অসংখ্য ঘটনা রয়েছে রসুল (স.)-এর জীবনে—প্রয়োজনীয় এবং প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও যাতে অপরকে উপহার দিয়ে দিয়েছেন। এবার দেখুন প্রিয় নবিজির হাতে গড়া তার সাহাবায়ে কেরামের আত্মবিসর্জন আর অন্যকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

 মুসলমানদের মধ্যে পানির তীব্র সংকট। যুদ্ধে আহতদের অনেকে পানির জন্য কাতরাচ্ছিলেন। যখন অল্প কিছু পানি ইকরিমা (রা.)-এর সামনে উপস্থিত করা হলো, তিনি বললেন, অমুক ভাইকে দাও, আমার চেয়ে তার পানির বেশি প্রয়োজন। অথচ তখন তিনি মারাত্মক আহত ছিলেন। তার পানির খুবই প্রয়োজন ছিল। যখন তার ইশারাকৃত ব্যক্তির কাাছে পানি আনা হলো, তিনিও আরেকজনের দিকে ইশারা করে বললেন, তার পানির বেশি প্রয়োজন, তার কাছে নিয়ে যাও। এভাবে সর্বশেষ ব্যক্তির কাছে পানি এনে দেখা গেল তিনি শহিদ হয়ে গেছেন। পূর্বের ব্যক্তির কাছে ফিরে এসে দেখা গেল তিনিও শহিদ হয়ে গেছেন। হজরত ইকরিমা রা.-এর কাছে এসেও একই দৃশ্য পরিলক্ষিত হলো। এভাবে পানি পান করা ছাড়াই সবাই শাহাদাত বরণ করলেন।  রাদিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আরদাহুম। (তবাকাতে ইবনে সাদ, ৮/৫২০; তাফসিরে ইবনে কাছির, ৪/৩৫৭; আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৭/১২)

এই হচ্ছে ইসলামের প্রকৃত পরার্থপরতা। পারস্পরিক সৌহার্দ-সম্প্রীতি আর ভালোবাসার উজ্জ্বল নমুনা। ইসলামের এসব মহান গুণাবলি আমাদের ভেতরেও চলে আসুক—এই কামনা করি।

আমাদেরকাগজ/ এইচকে