অর্থ ও বাণিজ্য ১১ মার্চ, ২০২৩ ১১:০৩

৬ বছরের মধ্যে রিজার্ভ সর্বনিম্ন

ছবি - সংগৃহীত

ছবি - সংগৃহীত

আমাদের কাগজ ডেস্কঃ বাংলাদেশে ক্রমাগতভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কম। সহসা বাড়ার সম্ভাবনা নেই। আর তাই বিষয়টি ভবিষ্যতে ব্যাপক উদ্বেগের বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন যে বর্তমানে দেশের অর্থনীতির যে অবস্থা তাতে হঠাৎ করেই রিজার্ভ ঘুরে দাঁড়াবে না। ফলে, সামনের মাসগুলোতে রিজার্ভ নিয়ে সঙ্কটে পড়তে পারে সরকার। 

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলছেন, আগামী পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে রিজার্ভ বাড়ার মতো কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ফলে সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগের কারণ রয়েছে। যেহেতু এটি এই মুহূর্তে একটি চলন্ত সূচক এবং এটি স্থির নয়। এটির ক্রমাবনতি হচ্ছে এবং এর বাড়ার সম্ভাবনা কম। তার মতে, আমদানি নিয়ন্ত্রণ করার পরও আমদানি-রফতানির ভারসাম্য ঠিক রাখা যাচ্ছে না। আর রেমিটেন্সের প্রবাহও এখনো ঋণাত্মক। এর পাশাপাশি বৈদেশিক সাহায্যের প্রবাহ কম।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম বড় দুটি মাধ্যম হলো রেমিটেন্স ও রফতানি আয়। এই দুই ক্ষেত্রে ডলারের প্রবাহ না বাড়লে ভবিষ্যতে সঙ্কটে পড়ার কথা বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে দায় পরিশোধের পর রিজার্ভের পরিমাণ হয়েছে ৩১.১৯ বিলিয়ন ডলার। বলা হচ্ছে, গত ছয় বছরের তুলনায় এটি সবচেয়ে কম পরিমাণ রিজার্ভ। জানুয়ারিতেও এর পরিমাণ ছিল ৩২ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের যে হিসাব দিচ্ছে তাতে ফাঁক রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে রিজার্ভের পরিমাণ আরো কম।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, রফতানি উন্নয়ন তহবিলে সাত বিলিয়ন বা সাত শ’ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা রয়েছে।ওই হিসাবে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ সরকারি হিসাবেই দাঁড়ায় ২৪ বিলিয়নে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর পরিমাণ ২০ থেকে ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে না।

রিজার্ভ থেকে ২০২২ সালে ১২.৬১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশে এখনো রিজার্ভ বাড়ানো সম্ভব ও বেশ কিছু উপায় রয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘রেমিটেন্সের প্রবাহ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ গত দু’বছরে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিদেশে শ্রমিক হিসেবে পাড়ি জমিয়েছে। এর মধ্যে ২০২২ সালে প্রায় ১১ লাখ নতুন শ্রমিক বিদেশ গিয়েছে। আর এর আগের বছর গেছে প্রায় ছয় লাখ। গত দু’বছরে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১০ ভাগ বেড়েছে।

তবে রেমিটেন্সের দিকে তাকালে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরের পর থেকে রেমিটেন্স আসায় একটা পতন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রেমিটেন্সের প্রবাহ ২.০৩ শতাংশ কমে গিয়েছিল। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে ১৫.১১ শতাংশ।

হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতেও রেমিটেন্স কমেছে ২০ শতাংশ। এ মাসে রেমিটেন্স এসেছে ১৫৬ কোটি ডলার। এর আগের মাসে অর্থাৎ জানুয়ারিতে রেমিটেন্স এসেছিল ১৯৬ কোটি ডলার।

চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট রেমিটেন্স এসেছে ১৪.০১ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ১৩.৪৩ বিলিয়ন ডলার।

দেশে বর্তমানে ডলারের বিনিময়ের সরকারি হার ১০৮ টাকা করে হলেও কার্ব মার্কেটে ডলার ১১৬ থেকে ১১৭ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

ডলারের বিনিময় হারের এই পার্থক্য রোধ করা গেলে বৈধপথে আরো অন্তত ৫০ কোটি ডলার রেমিটেন্স আয় আনা সম্ভব বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

সূত্র : বিবিসি


 আমাদের কাগজ/এমটি