কৃষি ২১ মার্চ, ২০২৩ ০৪:২৬

১০-১২ কিঃ মিঃ ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম দ্বিগুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রংপুরের চরাঞ্চল ঘেষা কাউনিয়া বাজারে এক সপ্তাহ আগে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছিলো ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি পাইকারি দরে। কিন্তু বাজারে বর্তমানে সেই মরিচ দাম কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজি দরে।  আর এর ১০-১২ কিলোমিটার দূরে রংপুর শহরের বিভিন্ন খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে। এতে করে কৃষরা যেমন ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অপরদিকে প্রান্তিক পর্যায়ে ভোক্তারাও কিনছেন পাইকারি বাজারের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি চড়া দামে।

বৈরী আবহাওয়া আর চরে জোয়ারের আতঙ্কে কাউনিয়াসহ আশপাশের বাজারগুলোতে এখন কাঁচা মরিচ বিক্রির হিড়িক পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে চর থেকে  কৃষকরা পরিপক্ক ও অপরিপক্ক মরিচ তুলে বিক্রির জন্য আনছেন বাজারে। 

হাট ইজারাদাররা বলছেন, বাজারে মরিচের সরবারহের তুলনায় পাইকার কম থাকায় দাম কমে অর্ধেকে নেমেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়ায় জেগে ওঠা তিস্তার চরবেস্টিত এলাকায় অন্যান্য সবজি জাতীয় ফসলের সঙ্গে কাঁচা মরিচের আবাদ হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। জেগে ওঠা এসব চরে বন্যার প্রারম্ভে আতঙ্কে থাকেন চাষিরা। ফলে দামের কথা চিন্তা না করেই পরিপক্ক-অপরিপক্ক মরিচ বাজারে তুলে বিক্রি শুরু করছেন চাষিরা। এতেই এখানকার স্থানীয় পাইকারি বাজারে হঠাৎ করেই নেমে যায় কাঁচা মরিচের দামের ঝাঁজ।

মঙ্গলবার, ২১ মার্চ কাউনিয়া উপজেলা শহরের একমাত্র হাট তকিপল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচ চাষিরা বস্তায় ভর্তি করে বাজারে আনছেন। দেশের দূর দূরান্ত থেকে অনেক পাইকাররাও এসেছেন মরিচ কিনতে। তবে বাজারে ওঠা মরিচের তুলনায় পাইকারদের চাহিদা অনেক কম মনে হয়েছে তাদের হাঁক-ডাকে।

এই বাজারে পাইকারি দরে কাঁচা মরিচ (দেশি) বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৯০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকায়। যা কেজিতে পরে ২৩-২৫ টাকা। আর হারব্রিট জাতের কাঁচা মরিচ প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকায়। যা কেজিতে পরে ২৮-৩২ টাকা।

নিজের ২৭ শতক জমির তিন বস্তা মরিচ নিয়ে কাউনিয়া বাজারে বিক্রি করতে আসা তিস্তার চরের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো থাকায় গত ১২-১৫ দিন আগেও এই বাজারে মরিচ বিক্রি করেছি প্রতি মন ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ হিসেবে। তখন আমার মরিচ সবে মাত্র নামতে শুরু করেছিলো। এখন পুরা মৌসুমে এসে দাম অনেক কমে গেছে। এছাড়া বৃষ্টি আর বৈরি আবহাওয়ায় অনেকে বেশি বেশি করে মরিচ গাছ থেকে তুলতে শুরু করেছেন। ফলে পাইকারও হিমশিম খাচ্ছেন।

এই বাজারে আসা মরিচ চাষি সবজল প্রধান বলেন, ‘কাঁচা মরিচ নিয়ে এসেছি বাবা। পাইকাররা যা দাম বলে এতেই বিক্রি করতে হবে। এই মরিচ বিক্রি না করে বাড়িতে ফেরত নিয়ে গেলেই লস। দেশি জাতের কাঁচা মরিচ কুষ্টিয়া চুয়াডাঙ্গার পাইকাররা দাম করছেন ৯০০ টাকা মণ। দেখি আর ৫০-১০০ টাকা বেশি বললেই ছেড়ে দেবো।’

এদিকে খুচরা বাজারে এক ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘পাইকারি বাজারে খুচরা ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী আধা কেজি বা এক কেজি করে মরিচ বিক্রি হয় না। তাই খুচরা ক্রেতারা পাইকারি দামের ঝাঁজ নিতে না পেরে চড়া দামেই কিনছেন মরিচ।’ 

পাইকারি বাজারের তুলনায় অধিক দামে বিক্রির বিষয়ে খুচরা বাজারের কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, আড়ৎ ভাড়া, পরিবহন খরচ, ইজারাদারের টোল আর পচনের ঘাটতি মিলে খুচরাতে মরিচের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। শুধু কাঁচা মরিচে না দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে সবজি জাতীয় প্রায় প্রতিটি কাচামালের দাম পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা দ্বিগুণ।

কাউনিয়ার পাইকারি বাজারে কুষ্টিয়া থেকে আসা শাহাবুদ্দিন নামের এক পাইকার বলেন, গত ৭-৮ বছর ধরে কাউনিয়ার এই হাট থেকে মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ বিভিন্ন সবজি কিনে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে আসছি। গত সপ্তাহ থেকে এই বাজারে মরিচের দাম কম শুনে পিকআপ নিয়ে এসেছি। পাইকারি বাজারে এসব মরিচ কিনে নিয়ে পরিবহন, আড়ৎসহ আনুষাঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে কিছু লাভে বিক্রি করি। তবে রংপুরে তুলনায় কুষ্টিয়ায় মরিচের দাম দ্বিগুণ।’ 

কাউনিয়ার তকিপল কাঁচাবাজার হাট ইজারাদার হাফিজার রহমান বলেন, ‘বাজারে এখন প্রচুর কাঁচা মরিচ উঠেছে। এসব মরিচ অধিকাংশই চরের চাষিদের। মরিচের ভরা মৌসুম আর বৃষ্টি জনিত আবহাওয়ার কারণে কাঁচা মরিচের দাম পরে গেছে। আজ বাজারে কাঁচা মরিচ (দেশি) মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০০-৯৫০ টাকা। হাইব্রিড জাতের মরিচের দাম রয়েছে ১১০০-১২০০ টাকা মণ।

আমাদেরকাগজ/ এইচকে