??????? ২১ আগস্ট, ২০২৩ ১১:৩৩

অষ্টম গ্রেনেডটি ছুঁড়ে মারার পরও ২১ আগস্ট যেভাবে রক্ষা পান শেখ হাসিনা 

ছবি - সংগৃহীত

ছবি - সংগৃহীত

আমাদের কাগজ ডেস্কঃ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টকে বলা হয় কালো অধ্যায়। সেদিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ২৪ জন নিহত ও অপর ৫০০ জন আহত হয়। 

মূলত, দেশের রাজনীতির গতিপথ পরিবর্তন করতেই এ বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছিল। ঘটনাটি ঘটেছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে। 

জানা যায়, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে লক্ষ্য করে ৮টি আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় খুনিরা, যদিও ওই ভয়াবহ হামলা থেকে তিনি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। পরে ঘটনাস্থলের কাছে বেশকিছু অবিস্ফোরিত গ্রেনেড পাওয়া যায়। 

এই ঘটনার তদন্তে ও আইনি কার্যক্রমে জানা যায়, সেনা ও বিমান বাহিনীর সাবেক দুই কর্মকর্তা- মেজর (অব:) শোয়েইব মো. তরিকুল্লাহ্ ও স্কোয়াড্রন লিডার (অব:) আব্দুল্লাহ আল মামুন শেখ হাসিনাকে ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। তারা দুজনেই এলিট স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) এর সাবেক সদস্য। সুরক্ষা প্রদানের জন্য তারা বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলেন।

মামলার নথি ও তদন্তের নথিপত্রে দেখা যায়, বিকেল ৫টা ১৮ মিনিট থেকে প্রায় ৪৫ সেকেন্ড ধরে এই হামলা চালানো হয়। এ সময় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ এবং ওই দুই সাবেক কর্মকর্তা ট্রাকে উপর ছিলেন। ট্রাকটিকে তখন জনসভার অস্থায়ী মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল।

ওঈ দিন বিকেল ৫টা ১৮ মিনিট-শেখ হাসিনা জনসভার সভাপতির ভাষণ শেষ করে ট্রাক থেকে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় আততায়ী প্রথম গ্রেনেড ছুঁড়ে মারে এবং তা বিস্ফোরিত হলে ট্রাক ও ট্রাকের আশপাশের মানুষ আতঙ্কে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে।

দলীয় নেতৃবৃন্দ ট্রাকের সামনের দিকে শেখ হাসিনাকে ঘিরে মানব ঢাল তৈরি করে তাকে রক্ষার চেষ্টা করেন। দ্বিতীয় গ্রেনেডটি ট্রাকের সবাইকে বসে পড়তে বাধ্য করে। এ সময় মামুন শেখ হাসিনাকে রক্ষার জন্য তাকে টেনে ট্রাকে রাখা একটি ছোট টেবিলের নিচে ঢুকিয়ে দেন এবং তাকে নিচু করে রাখেন।

এ সময় শোয়েইব চিৎকার করে মামুনকে শেখ হাসিনাকে নিচু করতে বলেন এবং পরিস্থিতি বুঝতে কয়েকবার বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে ট্রাকে ওঠানামা করে। পাশের ভবনগুলোর ছাদ থেকে গ্রেনেড ছোঁড়া হচ্ছিল।

সপ্তম গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হওয়ার আগ পর্যন্ত হামলাকারীরা একের পর এক গ্রেনেড ছুঁড়ছিল। এ সময় শোয়েইব মামুনকে চিৎকার করে বলেন, “আপাকে (শেখ হাসিনা) বের করে আনো।” মামুন নিচু করেই তাঁকে টেবিলের নিচ থেকে বের করে এনে শোয়েইবকে চিৎকার করে বলেন, “জিপের দরজা খোল।” জানা যায়, মামুন যখন শেখ হাসিনাকে ট্রাকের সিঁড়ির কাছে আনলেন, শোয়েইব তখন সিঁড়ির মাঝামাঝিতে ছিলেন।

শেখ হাসিনাকে ট্রাকে দেখতে পেয়ে হামলাকারীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রমনা ভবন থেকে অষ্টম গ্রেনেডটি ছুঁড়ে মারে। গ্রেনেডটি ঘুরতে ঘুরতে বিস্ফোরিত হয় এবং জ্বালানী ট্যাংকে গ্রেনেডের স্প্লিনটার ঢুকলে সেখান থেকে চুইয়ে চুইয়ে তেল পড়তে থাকে।

মামুন আবারও তাকে রক্ষা করতে ট্রাকের নিচে রাখেন। কয়েক মুহূর্ত পর শোয়েইব ট্রাক থেকে নিচে নেমে জিপের দরজা খুলে এবং ট্রাকের সিঁড়ির কাছে যান। সেখানে মামুন শেখ হাসিনাকে নিয়ে এলে তারা দু’জন মিলে দ্রুত তাকে জিপে ঢুকিয়ে দেন।

৫টা ১৯ মিনিট- শেখ হাসিনা জিপে ওঠা মাত্র তা ধানমন্ডি সুধাসদনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। উভয় নিরাপত্তা এজেন্টের দেহেই তখন গ্রেনেডের স্প্লিনটার ঢুকে থাকায় তাদেরও চিকিৎসা নেয়ার প্রয়োজন ছিল।

উল্লেখ্য, সেদিন যদি নেতাকর্মীদের বা  সিকিউরিটি ফোর্স এমন সাহসী পদক্ষেপ না নিতেন তাহলে হয়ত বাবা শেখ মুজিবের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করতে ব্যাহত হতেন। 

আমাদেরকাগজ/এমটি