বিনোদন ৭ অক্টোবর, ২০১৯ ০৬:২৮

পরীমনি'র জীবনী: মফস্বল শহর থেকে ঢালিউডের বড় পর্দায়

বিনোদন ডেস্ক।।

ঢাকাই চলচিত্রে সবচেয়ে আলোচিত নায়িকা এখন পরীমনি। সুপারস্টারদের বিপরীতে অভিনয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্তেজক ছবি আর আইটেম গান দিয়ে তিনি সারা বছরই ভাইরাল থাকেন বাংলা অন্তর্জালে। কিন্তু একদিনে একটি মফস্বল শহরের মেয়ে কখনো পরীমনি হয়ে উঠে না। এই জন্য তাকে পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ পথ। অনেক লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে মফস্বল শহরের স্মৃতি নামের কিশোরীটি আজ সবার প্রিয় পরীমনি।

পরিমনির ভাল নাম সামছুন নাহার স্মুতি । তিনি ২৪ অক্টোবর ১৯৯২ সালে সাতক্ষীরা জেলার নড়াইল উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন । তবে শৈশবটা আর অন্য দশটা মেয়ের শৈশবের মত এতো সুন্দর ছিলো না। মাত্র তিনবছর বয়সে যেখানে একটি মেয়ে আধো আধো বলে নিজের মাকে ডাকে। ঠিক সেই সময় পরীমনি তার মাকে হারান। ব্যাবসায় ব্যাস্ত থাকা বাবা সময় দিতে না পারায় তাকে চলে আসতে হয় পিরোজপুরে। পিরোজপুরেই তিনি এসএসসি ও এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হন এবং এইচএসসি শেষ করার পর ঢাকা চলে আসেন । তিনি সাতক্ষীরা সরকালী কলেজ থেকে বাংলা বিষয়ে স্নাতক পাশ করেন । 

ছোটবেলা থেকেই উচ্চাভিলাষী পরিমনি স্বপ্ন দেখতেন একদিন বড় অভিনেত্রী হবেন। তার মনের সেই সুপ্ত বাসনাকে পূর্ণ করতে মডেলিংয়ে নাম লেখান ২০১১ সালে । এবং পর ২০১২ সালে পরিমনি অভিনয় জীবন শুরু করেন টিভি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে। স্বপ্নপূরনের এযাত্রায় আবার দূঃস্বপ্নের মত ঘটনা ঘটে। সে বছরই মারা যায় তার পিতা মনিরুল ইসলাম।

 তবে পরিমনি থেমে থাকেন নি। তিনি সেকেন্ড ইনিংস, এক্সক্লুসিভ, এক্সট্রা ব্যাচেলর, নারী ও নবনীতা তোমার জন্য এ চারটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করেছিলেন। প্রথম অভিনীত নাটকেই তিনি ইলিয়াস কাঞ্চন এবং চম্পার সাথে অভিনয় করেন। পরবর্তীতে চলচ্চিত্র জগতের সাবেক প্রখ্যাত নায়িকা চম্পার পরামর্শেই বড় পর্দায় পা রাখেন এই নায়িকা।

এরপরেই তার এগিয়ে যাওয়ার শুরু। ছোটপর্দার গন্ডি পেরিয়ে অবশেষে ২০১৫ সালে  “ভালোবাসা সীমাহীন “ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে রূপালী পর্দায় পা রাখেন । তার প্রথম চলচিত্র মুক্তির আগেই তিনি আরো ২৩ টি চলচিত্রে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আলোড়ন তুলেন বাংলাদেশের বিনোদন জগতে। 

পরবর্তীতে ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত পাগলা দিওয়ানা ও দরদিয়া, এস এ হক অলীকের আরো ভালোবাসবো তোমায় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

২০১৫ সালে ১০টি চলচিত্র মুক্তিপায় তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হল মনজুড়ে তুই, লাভার নাম্বার ওয়ান, নগর মাস্তান, মহুয়া সুন্দরী ইত্যাদি ।

২০১৬ সালে মুক্তি পায় ৪টি চলচিত্র । এগুলো হলো মন জানে না মনের ঠিকানা, পুড়ে যায় মন, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ওয়াজেদ আলী সুমনের অ্যাকশনধর্মী চলচিত্র রক্ত । এই ছবিতে তার চমৎকার অভিনয় করে পরি সকলের ব্যপক প্রসংশা কুড়ান এবং একই বছর শফিক হাসানের ধূমকেতু ছবিটি মুক্তিপায় যাতে তার নায়ক ছিলেন সাকিব খান।

২০১৭ সালে মুক্তি পায় ৫টি ছবি এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য ছবি হলো, কত স্বপ্ন কত আশা, আপন মানুষ, সোনা বন্ধু, এবং মালেক আফসারীর অন্তর জ্বালা ইত্যাদি ছবিগুলো।

তাছাড়া জনপ্রিয় হবার পর পরীমণি লাক্স, স্যান্ডেলিনা, ওয়ালটনের মত নামকরা প্রতিষ্ঠানের টিভি বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছেন। 

নায়িকা হবার পর থেকেই সবসময় আলোচিত ও সমালেচিত হয়েছেন এই অভিনেত্রী, ২০১৫ সালে পরিমিন একজন পরিচালককে বিয়ে করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠে কিন্তু তিনি সে অভিযোগ অস্বীকার করেন। এছাড়াও ৩১শে জানুয়ারি ২০১৭ সালে অনিক আব্রাহাম নামের এক যুবকের ফেইসবুকে পরিমনি এবং তার কথিত স্বামী ইসমাইলের কিছু অন্তরঙ্গ ছবি ভাইরাল হয়ে যায় । এ ব্যাপারে পরিমনি বলেন এমন আরও হাজারখানেক ছবি আমার অনেকের সাথে আছে সো সবাইতো আর আমার জামাই না । এসবে আপনারা কান দিবেন না বলে সাফ কথা জানান তিনি । এর কিছুদিন পরই পরিমিনি তার ফেসবুকে সাংবাদিক তামিম হাসানের সাথে তার প্রেমের সম্পর্কের কথা জানান এবং ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাতে প্রেমিক তামিমের সঙ্গে তোলা কয়েকটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন পরী। এসব ছবিতে তাদের রোমান্টিক মুহূর্ত ধরা পড়েছে। পরবর্তিতে তাদের বাগদান সম্পন্ন হলেও তা ভেঙ্গে যায়। তাদের বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার কারন পরিমনি কখনো বলেন নি। 

এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উত্তেজক ছবি দিয়ে তিনি ভাইরাল থাকেন সবসময়। 

এই মেধাবী অভিনেত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ আলোচিত, এখন পর্যন্ত ফেইসবুকে এক কোটির অধিক লোক তাকে ফলো করেন । পাঁচ ফিট ছয় ইঞ্চি উচ্চতার পরিমনি প্রতিটি ছবির জন্য পারিশ্রমিক নেন ১০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা। যা নায়িকাদের পারশ্রমিকে ঢালিউডে সর্বোচ্চ।

পরিমনির তার অপরুপ সুন্দর আবেদনময়ী চেহারা এবং দুর্দান্ত অভিনয় মানের জন্য খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন এবং কোটি দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।