রাজনীতি ১৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০৪:৩৯

স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন নেতৃত্বে আসছেন যারা

ইসতিয়াক ইসতি।। 

ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের পর আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। এসব সহযোগী সংগঠনের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগ অন্যতম শক্তিশালী একটি সংগঠন। আগামী ১৬ ই নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। এর আগে ১১ ও ১২ ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিনের সম্মেলন। 

দীর্ঘ সাত বছর পর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণায়,সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা । এক কথায় দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নেতৃত্বের পালাবদলের এই সম্মেলন ঘিরে এরই মধ্যে নেতাকার্মীদের কাছে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। ক্যাসিনো কান্ডের পর বিতর্কিত অনেক নেতাই এখন গাঢাকা দিয়েছে আর ত্যাগী নেতারা এখন মাঠে সক্রিয়। সেই সাথে পদ প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে গিয়েছে।  ইতোমধ্যে একাধিক সূত্র থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ আর পুনরায় বহাল থাকছে না। 

ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে সামনে এসেছে ক্লাবগুলো থেকে নামে বেনামে টাকা উঠাতেন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা নাম। সুতরাং যারা সংগঠনের নাম ব্যবহার করে দুর্নাম কুড়িয়েছেন তারা এবার বাদ পড়বেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এছাড়া এরই মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এসব কালো তালিকাভুক্ত নেতাদের তালিকা সরকারের শীর্ষ মহলে দিয়েছেন।

কাজেই আলোচনা শুরু হয়েছে কারা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ক্লিন ইমেজের নেতা। কারা শেখ হাসিনা তথা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ছায়াতলে  উন্নয়নের মহাসড়কে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিজের লোভ লালসা ত্যাগ করতে পারবেন। দলের জন্য অতীতের অবদান, বর্তমান কর্মকান্ড এবং সর্বপোরি দেশ রত্নের প্রতি অনুগত এমন ক্লিন ইমেজের নেতাদের খোজা হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের আগামী সম্মেলনের জন্যে। 


স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদের জন্য ১৫ জনের মত নেতা দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। এ প্রসঙ্গে  আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা জানান, দুর্নীতির সাথে যুক্ত  ও যারা বিতর্কিত তারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসতে পারবে না। বিশেষ করে যারা সাংগঠনিক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তারাই নেতৃত্বে আসবে। 

কেন্দ্রীয় সভাপতির দৌড়ে এগিয়ে আছেন, বর্তমান কমিটির যুগ্ন সাধারন সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু। গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু সাধারন সম্পাদক প্রার্থী হলেও কেন্দ্রীয়, মহানগর ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায় বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক লীগে যে কয়জন প্রার্থী আছেন তাদের মধ্যে সাংগঠনিক দক্ষতা, নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই সাচ্চু এগিয়ে। তাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা সাচ্চুকে সভাপতি হিসাবে দেখতে চায়। 


তৃণমূল থেকে ওঠে আসা সাচ্চুর রাজনীতির হাতেখড়ি ছাত্রলীগ থেকে। বৃহত্তর ক্যান্টনমেন্ট থানা ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য থেকে শুরু করে নির্বাচিত হয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রলীগের পর পর দু’বার সহ-সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক।  বিরোধী দলে থাকাকালীন সময়ে বার বার বিএনপি জামায়ত নেতাদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন তিনি। 

এছাড়া সভাপতি পদের জন্য আরও আছেন, নির্মল রন্জন গুহ, মতিউর রহমান মতি, আফজাল বাবু , আব্দুল আলীম ব্যাপারীসহ প্রমুখ।

সাধারন সম্পাদক পদের জন্যে খোজা হচ্ছে ক্লিন ইমেজের সাবেক ছাত্র নেতাদের। যারা সাংগঠনিক ও কোন রকম সিন্ডিকেটের সদস্য না। এমন নেতাদের খোজে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও বতর্মান স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ সাকীব বাদশা। ১/১১ এর সময় কারাবন্দি শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের সংগঠিত করেন বাদশা। পরবর্তিতে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর বাদশা ছাত্রলীগের  সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়েও কখনই ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। এমনকি তার সময়ের ছাত্রলীগ নেতারা অনেকে ব্যাংকের পরিচালক, বড় ব্যবসায়ীতে রুপান্তরিত হলো। ছাত্র রাজনীতির পর যোগ দেন স্বেচ্ছাসেবক লীগে, কাজ শুরু করেন আওয়ামীলীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআই এ। এখনও কাজ করে যাচ্ছেন সেখানেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন ছাত্রদের কাছে আইডল ছিলেন বাদশা। 

সাবেক ছাত্রনেতারা অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্লিন জেন্টেলম্যান বলতে যা বোঝায় বাদশা তাই। 

এছাড়াও সাধারন সম্পাদক হতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক একেএম আজীম, সাবেক সভাপতি সোহেল রানা টিপু, খায়রুল হাসান জুয়েলসহ প্রমুখ।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক একেএম আজিম আমাদের কাগজের প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে স্বেচ্ছাসেবক লীগকে ক্লীন ইমেজের একটি সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেন। তাদের আসন্ন সম্মেলনে নেতৃত্বে কারা আসতে পারেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আসন্ন কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বের বিষয়ে যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তা তৃণমূল ও ব্যাক্তিগত ভাবে তিনি নিজেও মেনে নেবেন।

আমাদের কাগজের প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বের বিষয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খায়রুল হাসান জুয়েল জানিয়েছেন, তরুণ ও পরীক্ষিত সাবেক ছাত্র নেতাদেরই চায় তৃণমূল। স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদ পেলে তিনি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠভাবে পালন করার চেষ্টা করবেন বলে এমনটাই জানিয়েছেন আমাদের কাগজের প্রতিবেদককে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার দুর্নীতি বিরোধী অভিযান তখনই সফল হবে যখন স্বেচ্ছাসেবক লীগের মত শক্তিশালী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে কোটি টাকার ব্যবসায়ী, কালো তালিকাভুক্ত নেতাদের সিন্ডিকেট সদস্য ও  সর্বোপরি এসব কলঙ্কিত ব্যক্তি বাদ যাবে।