রাজনীতি ২৯ অক্টোবর, ২০১৯ ১০:৩৭

ছাত্রত্ব না থাকলেও ছাত্রলীগ নেতাকে পরীক্ষার সুযোগ

ডেস্ক রিপোর্ট।। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার ছাত্রত্ব না থাকলেও বিশেষ বিবেচনায় তাকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছে সিন্ডিকেট। ৪৯০তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ সুযোগ প্রদান করে। ছাত্রলীগের ওই সাবেক নেতা মোস্তাকিম বিল্লাহ ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন। তিনি মিজানুর রহমান রানা ও খালিদ হাসান বিপ্লবের কমিটির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী- একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি হওয়ার তিন একাডেমিক বছরের মধ্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে হয়। সে হিসেবে মোস্তাকিম বিল্লাহর ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে। কিন্তু তিনি সম্প্রতি বিভাগে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্সের পরীক্ষার ফরম পূরণ করেন।

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মোস্তাকিম ২০১৫-১৬ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেননি। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয় ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। ওই পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। পরে ২৬ ফেব্রুয়ারি ৫০৪ কোর্স পরীক্ষায় হল পরিদর্শক সহযোগী অধ্যাপক সুলতান মাহমুদ রানার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বিল্লাহ। ওই দিনই বিভাগ থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দফতর হয়ে অভিযোগটি শৃংখলা কমিটিতে যায়। এ কমিটির সুপারিশক্রমে ৪৮১তম সিন্ডিকেট সভায় বিল্লাহকে দুই বছরের জন্য সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ফলে তিনি ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স পরীক্ষা দিতে পারেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিল্লাহ তার রাজনৈতিক আধিপত্য দেখিয়ে বিভাগের অনেক শিক্ষকের সঙ্গে বিভিন্ন সময় অশালীন আচরণ করেছেন। এছাড়া ২০১৪ সালে ১৩ মে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মাস্টার্সের পরীক্ষা কক্ষে শিক্ষকদের পিস্তল দেখিয়ে পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগে তাকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এর আগে ২০১৪ সালে ২ ফেব্রুয়ারি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার সময় মোস্তাকিম বিল্লাহকে অস্ত্র নিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে।

জানা যায়, চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল বিভাগের সভাপতিকে মাধ্যম করে উপাচার্য বরাবর শাস্তি মওকুফের একটি আবেদন করেন বিল্লাহ্। বিভাগের কোনো সুপারিশ ছাড়াই আবেদনের উপর শুধু প্রেরিত হলো লিখে উপাচার্যের কাছে পাঠানো হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বিষয়টি ৪৯০তম সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে তার শাস্তি মওকুফ করে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেন।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক একরাম উল্লাহ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থীকে সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে মাস্টার্স সম্পন্ন করতে হবে। সে হিসেবে মোস্তাকিম বিল্লাহ ছাত্রত্ব শেষ। বিল্লাহ বিভাগে একটি আবেদন করলে আমরা একাডেমিক সভায় আলোচনা করি। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো প্রকার সুপারিশ না করে ‘প্রেরিত হল’ এই মর্মে লিখিত দিয়ে প্রশাসনে পাঠানো হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিন্ডিকেট সদস্য বলেন, ‘সিন্ডিকেটে শিক্ষার্থীর একাডেমিক সেশন উল্লেখ না থাকলেও শাস্তি মওকুফ করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু একাডেমিকভাবে তিন বছর শেষ হলে ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারেন না। বিগত সময়ে এমনটাই হয়েছে।’

জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাবুল ইসলাম বলেন, ‘কিসের বিবেচনায় তার শাস্তির মওকুফ করে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেটি আমার জানা নেই। আমি সিন্ডিকেট সদস্য নই।’

ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাকিম বিল্লাহ বলেন, ‘আমি ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সবগুলো পরীক্ষায় দিয়েছিলাম। ভাইভা শেষে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়, আমাকে ওই বছরসহ আগামী দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। পরে আমি শাস্তি মওকুফের আবেদন করেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মানবিক দিক বিবেচনা করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আমার শাস্তি মওকুফ করেছে।’

শাস্তি মওকুফের বিষয়ে জানতে চাইলে রাবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারী বলেন, ‘সিন্ডিকেট চাইলে বিশেষ বিবেচনায় অধ্যাদেশের বাইরে গিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দিতে পারে।’