প্রবাসের কথা ২ নভেম্বর, ২০১৯ ১০:০৫

'স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণের'

আশেক আহমেদ ।। 

বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে কাজী আসমা আজমেরী দেশ ভ্রমণে সেঞ্চুরি করেছেন ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর। আর এই বছরের ২৯ অক্টোবর শততম দেশ ঘোরার একবছর পূর্ণ করলেন তিনি। ২০১৮ সালে তুর্কমেনিস্তানের মাটিতে পা দিয়ে শততম দেশ সফরের আশা পূরণ করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন খুলনার মেয়ে আজমেরী। দেশ সফরের স্বপ্ন পূরণে বিভিন্ন মহাদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ পরিব্রাজক।

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ট্রাভেলার্সদের মধ্যে অন্যতম কাজী আসমা আজমেরী, তিনি শুধু বাংলাদেশ নয় বিদেশেও একজন ট্রাভেলার এবং সমাজকর্মী হিসেবে পরিচিত। তিনিই একমাত্র মেয়ে যে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিশ্বের অনেক দেশ। ভ্রমণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি, প্রকৃতি, দেশের মানুষ সম্পর্কে জানাচ্ছেন। তিনি এখন স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিশ্বভ্রমণের।

খুলনার মত ছোট শহরে বেড়ে ওঠা এই আন্তর্জাতিক ট্রাভেলারের শততম দেশ ভ্রমণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আমাদের কাগজের প্রতিনিধি তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তার বর্তমান ভ্রমণ নিয়ে অনেক কিছু বলেন। দীর্ঘ দশ বছরের দীর্ঘ যাত্রার পর ভ্রমণ সেঞ্চুরির স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছে এবং সেই ১০০ দেশ ভ্রমনের আবার এক বছর পূর্ণ হলো।

এই এক বছরের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে কাজী আসমা আজমেরী বলেন, এই এক বছরে তিনি ১৩টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। সেই দেশ গুলো হলো- স্লোভাকিয়া, নেদারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, সুইজারল্যান্ড, লিচেনস্টেইন ভাদুজ, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, মালটা, সানমেরিনো, মোনাকো, এনডোরা। বর্তমানে তিনি স্পেনের সেভিয়া শহরে অবস্থান করছেন। যে শহরে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের টম রয়েছে এবং কলম্বাসের জন্মস্থান ইতালি জেনেভা শহরে গিয়েছেন। সবচেয়ে কি ভালো লেগেছে তা জানতে চাইলে লোকসান ভার্সিটি তার কাছে স্বপ্নের মতো লেগেছে। অংশগ্রহণ করেছেন সুইডেনে ভাইকিংসদের বিয়েতে। এই ভাইকিংসরা বাংলাদেশের বেদেদের মতই যাযাবর জীবন যাপন করে।  

তিনি বলেন, ‘আমি শৈল্পিকভাবে ইবনে বতুতা, ঠাকুরমার ঝুলি, তেপান্তরের রাজ্যকন্যার গল্পে শুনে আমার শৈশবে কল্পনায় তাদের মনে মনে ভাবতাম। কিন্তু তারপর তাদের ছেড়ে দেয়া যায় না। তাই আমি স্বাবলম্বী হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম।’

‘আমার জনপ্রিয়তার জন্য নয়, আজমেরী দেশ ভ্রমণ করে নিজের শখ থেকে। প্রথম দিকে শখের বশত ভ্রমণ শুরু করলেও এখন আজমেরী অনুভব করেন যে, সে তার ভ্রমণের মাধ্যমে নিজ দেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে পারছেন। সেটা তাকে বেশ আনন্দ দেয়।’

তিনি আরো বলেন, 'আমি খুব সাধারণ একজন ট্রাভেলার। আমার ঘুরতে ভাল লাগে। অন্য দেশের বিভিন্ন মানুষ ও সংস্কৃতির সাথে মিশতে ভাল লাগে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশের নাম ও সংস্কৃতি পৌঁছে দিতে আমি এখন ভ্রমণ করি বলে তিনি জানান। 

আজমেরী তার ভ্রমণ জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, আমি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে ঘুরতে ভালবাসি। সকলবেলা যখন সবাই ঘুমে থাকতো আমি তখন অ্যাম্বাসি পাড়ায় যেতাম। দীর্ঘ ১১ বছরের ভ্রমণ জীবনে প্রত্যেক বছরের প্রায় একশ দিনের মত যেত অ্যাম্বাসি থেকে অ্যাম্বাসিতে।

বিশ্ব ভ্রমণে আনন্দময় ঘটনার পাশাপাশি নিরানন্দময় ঘটনার সম্মুখীনও হয়েছেন কখনও কখনও। ২০১৭ সালে কিউবায় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এরপর ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট হারিয়েছেন পাসপোর্ট। এই সময় পাসপোর্ট উঠানোর বিল দিতে এগিয়ে এসেছেন অনেক মানুষ। অ্যাম্বাসি থেকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ভ্রমণের জন্য টিকেট পর্যন্ত করে দিয়েছে অনেকেই। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সমিতি-সংস্থা আমার দুঃসময়য়ের সময় আমকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে। মানুষের এই ভালবাসা তাকে এখন ভ্রমণের জন্য উৎসাহী করে বলে জানান তিনি। এই ভালবাসাকে অনুপ্রেরণা করে, বাংলাদেশের পাসপোর্ট হাতে নিয়ে তিনি ঘুরতে চান সারা বিশ্ব।

১০০ দেশ ভ্রমণের পর এই এক বছরে তিনি কি করলেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে থাকা কালীন প্রায় পাঁচ হাজার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের তাদের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য মটিভেট করার চেষ্টা করেন। তাছাড়া ভারতের আলীগড়ে ১২৯টি অপারেশনে স্বেচ্ছা সেবক নার্স হিসেবে কাজ করেছেন। লুক্সেমবার্গের একটি বৃদ্ধাশ্রমে দুই দিন থেকে স্বেচ্ছায় তাদের সেবা করেন। এছাড়াও ইতালিতে দুই দিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি মোটিভেট স্পিকার হিসেবে কাজ করছেন।

আজমেরী সুইডেনের তালেবো শহরের মেয়রের আমন্ত্রণে গেস্ট স্পিকার হিসেবে ভাষণ দিয়েছেন। এছাড়া জার্মান ব্র্যায়ন-২ নামের রেডিওতে অনুপ্রেরণা মূলক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। তরুণ সমাজকে অনুপ্রেরণা দিতে ভ্রমণের মাধ্যমে বিশ্ব জ্ঞানার্জনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।

অবৈধভাবে বিদেশে ভ্রমণ, দালালের মাধ্যমে বিদেশে চাকরিকে নিরুৎসাহিত করেন। বাড়ি গৃহপরিচালিকা, দারোয়ান কিংবা সিকিউরিটি গার্ডের সাথে কিংবা রিকশাআলা সাথে ভালো ব্যবহার এবং শ্রম সংখ্যালঘু শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের কাজ করছেন।

এছাড়া বাংলাদেশের নারীদের নিয়েও ভাবেন তিনি। তার মতে, নারীদের আত্মকর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। সেটি পুতুল বিক্রি হোক আর যে পেশাই হোক না কেন। গহনার আকর্ষণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গহনাই জীবনের সব নয়। সুন্দর মনের মানুষ হতে হবে। প্রসাধনী মেখে সুন্দর হওয়ার দরকার নেই। কাউকে অনুকরণেরও দরকার নেই। দেশের অসহায় মেয়েদের পাশে দাঁড়াতে চান তিনি। বিবাহ বিচ্ছেদ, প্রেমের সম্পর্কের কারণে যারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এমন মেয়েদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস যোগাতে চান। পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে চান কাজী আসমা আজমেরী।

তিনি স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে একদিন বিশ্বের দরবারে উন্নত দেশগুলোর পাসপোর্ট এর সমমর্যাদা পাবে। তিনি বলেন আমেরিকান, অস্ট্রেলিয়ান, ফ্রান্সের বন্ধুরা ভুটানে যেতে পারে না, এবং তাদেরকে প্রতিদিন ২৫০ ডলার দিয়ে ভ্রমণ করতে হবে ভুটানে। অথচ বাংলাদেশীদের বিনা ভিসা ভ্রমণ করতে পারে। তিনি মনে করেন বাংলাদেশের সরকার একটু সুদৃষ্টি দিলে বহিঃবিশ্বের সাথে বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক ভালো হবে তাতে করে আমরা যারা ভ্রমণকারী আছি সহজে বিভিন্ন দেশে ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারব।