অপরাধ ও দুর্নীতি ৪ নভেম্বর, ২০১৯ ০১:১৪

ধানমণ্ডিতে জোড়া খুন: যেভাবে খুন করা হয় তাদের

ডেস্ক রিপোর্ট ।। 

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ২৮ নম্বর রোডের ২১ নম্বর বাসার শিল্পপতি মনির উদ্দিনের ফ্ল্যাটে তার শাশুড়ি আফরোজা বেগম ও গৃহকর্মী দিতিকে খুনের কাণ্ডটি ছিল পরিকল্পিত! নিহত দুজনেরই পেছন থেকে ফল কাটার ছুরি দিয়ে এক টানে গলা কেটে ফেলা হয়। প্রথমে হত্যা করা হয় গৃহকর্মীকে পরে গৃহকর্ত্রীকে। 

গলা কেটে ফেলার পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কোপায় দুর্বৃত্তরা। এর পর এটি ডাকাতির ঘটনা হিসেবে সাজাতে খুনিরা আলমারি ভাঙে, ঘরের মালামাল এলোমেলো করে নিয়ে যায় কয়েকটি মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান সামগ্রী।

এ কিলিং মিশনে অংশ নেয় হত্যার দিনই নিয়োগ পাওয়া আনুমানিক ২১ বছরের নতুন গৃহকর্মী ছাড়াও কয়েকজন। খুনের আগে ওই শিল্পপতির বাড়ির সামনে জড়ো হয় ওই গৃহকর্মীসহ খুনির দল। জোড়া খুনের পর ঠাণ্ডা মাথায় ফ্ল্যাট ও ভবন থেকে বেরিয়ে এলাকা ছাড়ে তারা। 

তবে চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের কারণ সম্পর্কে গতকাল রাত পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেননি তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নিহত আফরোজা বেগমের ছোট মেয়ে অ্যাডভোকেট দিলরুবা সুলতানা রুবা বাদী হয়ে নতুন ওই গৃহকর্মীসহ ৭/৮ জনকে আসামি করে ধানমণ্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। জোড়া খুনের মোটিভ ও হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে ধানমণ্ডি থানা পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মাঠে নেমেছে। হত্যায় ব্যবহৃত হাতল ভাঙা একটি ছুরি জব্দ করা হয়েছে।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পপতি মনির উদ্দিনের ধানমন্ডি ২৮ নম্বর সড়কের ২১ নম্বর বাসার পঞ্চম তলায় খুন হন আফরোজা ও দিতি। লাশগুলোর ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে গতকাল তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। 

একই দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে তিন সদস্যের বোর্ড গঠন করে ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। বোর্ডের প্রধান ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. সোহেল মাহমুদ জানান, নিহত দুজনের শরীরে ছুরিকাঘাতের একাধিক জখম রয়েছে। আফরোজা বেগমের গলা কাটা ছাড়াও পেটে, বুকে একাধিক ছুরিকাঘাত করা হয়। এর মধ্যে একটি আঘাত তার কিডনি ভেদ করে। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান তিনি। অন্য দিকে গৃহকর্মী দিতির গলা কাটা ছাড়াও শরীরের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয়। তবে গলা কাটার কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় তার।

ময়নাতদন্ত বোর্ডের অপর দুই সদস্য প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস ও ডা. কবির সোহেল। ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. কবির সোহেল জানান, পরীক্ষার জন্য গৃহকর্ত্রীর ভিসেরা ও গৃহকর্মী দিতির হাই ভেজাইনাল টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে দিতি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা, পরীক্ষার পর তা জানা যাবে।

এ জোড়া হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমণ্ডি থানার এসআই এনামুল হক বলেন, ধারণা করছি, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এতে ওই বাসার নতুন এক গৃহকর্মী জড়িত। 

তদন্ত কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে বাচ্চু দাবি করেছেন, তিনি রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো এক পান দোকানদারের মাধ্যমে পরিচিত হওয়া ওই তরুণীকে কাজের বুয়া হিসেবে বাসায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনিও তার পরিচয় ঠিকঠাক জানতেন না।

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এর পরও মেয়েটির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তার স্থায়ী ঠিকানা বের করা হয়েছে। সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার পর থেকে সে বাড়িতেই যায়নি। রাজধানীর কোথাও আত্মগোপন করে আছে। আশা করছি, শিগগিরই তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার করা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এ হত্যার সঙ্গে নতুন গৃহকর্মীর সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনুযায়ী শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ওই নারী কাজের বুয়ার বেশে বাসায় ঢুকেছিলেন সঙ্গে ছিলেন গৃহকর্ত্রী আফরোজা বেগমের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত কেয়ারটেকার বাচ্চু। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে বাচ্চু চতুর্থ তলার ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যান। সন্ধ্যা ৫টা ৩২ মিনিটে ওই নতুন গৃহকর্মী ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে তৃতীয় তলায় নামেন। এরপর তিনি লিফটে ওঠেন। এ সময় লিফটের সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় ওই নারীর দুই পায়ের স্যান্ডেলে রক্ত লেগে থাকতে দেখা যায়।