খেলাধুলা ৮ নভেম্বর, ২০১৯ ১১:০৩

মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান থেকে একজন সফল ওপেনার হওয়ার গল্প

স্পোর্টস ডেস্ক।।

ভারতীয় হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মার ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল ২০০৭ সালে। অভিষেকের পর থেকে প্রায় অর্ধ যুগ মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে খেলেছিলেন তিনি। মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি। মিডল-অর্ডারে ৮৪ ম্যাচ খেলে ৩১.৭২ ব্যাটিং গড়ে ১,৯৬৭ রান করেছিলেন তিনি। এর মধ্যে ২০১১ সালে ১৩ ম্যাচে ৭২.৭৫ ব্যাটিং গড়ে ৫৮২ রান করেছিলেন। ২০১১ সালে ধারাবাহিকভাবে রান পাওয়ার পর ২০১২ সালে নিয়মিত দলে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ১৪ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে ১২.৯২ ব্যাটিং গড়ে মাত্র ১৬৮ রান তুলে সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি।

ভারতীয় দলে এমন টানা ব্যর্থতার পর আরও সুযোগ পাওয়ার ঘটনা কম। তবে তৎকালীন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি তাকে আরও সুযোগ দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। বীরেন্দর শেবাগের অবসরের পর তাকে ২০১৩ সালে ওয়ানডেতে ইনিংস উদ্বোধন করতে পাঠানো হয়। একই বছর টেস্ট ক্রিকেটেও অভিষেক ঘটে তার। ওয়ানডেতে ওপেনার হিসাবে খেললেও টেস্ট খেলেছিলেন মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে। ওয়ানডেতে ওপেনার হিসাবে ব্যাট করতে নামার পর থেকেই রোহিতের ক্যারিয়ার বদলে যায়। এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে ১৩২ ইনিংসে ওপেনিং করে ২৫টি শতকের সাহায্যে ৫৭.৪৩ ব্যাটিং গড়ে ৬,৭১৯ রান সংগ্রহ করেছেন। 

ওয়ানডে ক্রিকেটে ওপেনার হিসাবে ধারাবাহিকভাবে রান করলেও টেস্ট ক্রিকেটে মিডল-অর্ডারে ব্যাট করে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি। দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থেকে মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে খেলেছিলেন ২৭টি টেস্ট। এই ২৭ ম্যাচে ৩৯.৬২ ব্যাটিং গড়ে ১,৫৮৫ রান করেছিলেন, যার মধ্যে ঘরের মাঠে নয় ম্যাচে ৮৫.৪৪ গড়ে ৭৬৯ রান এবং বাইরের দেশে ১৮ ম্যাচে মাত্র ২৬.৩২ গড়ে ৮১৬ রান করেছিলেন।

রোহিত শর্মা ওয়ানডে ক্রিকেটে নিয়মিত বড় বড় ইনিংস খেলছিলেন বটে, তবে টেস্ট ক্রিকেটে মিডল-অর্ডারে রাহানের সাথে প্রতিযোগিতা করে পেরে উঠছিলেন না, বিশেষ করে দেশের বাইরে। অন্যদিকে, টেস্ট ক্রিকেটে গত কয়েক বছরে ভারতীয় ওপেনাররা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। মুরালি বিজয়, শিখর ধাওয়ান এবং লোকেশ রাহুল কেউই ধারাবাহিকভাবে রান পাননি। নবাগত পৃথ্বী শ' ডোপ টেস্টে উত্তীর্ণ হতে না পেরে বর্তমানে নির্বাসনে আছেন। এমতাবস্থায় রোহিত শর্মাকে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে ওপেনার হিসাবে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওপেনার হিসাবে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত করেন রোহিত শর্মা। প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রানের ইনিংস খেলার পর দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেন ১২৭ রানের ইনিংস। তিনি প্রথম ওপেনার হিসাবে নিজের অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসে শতক হাঁকান। সুনীল গাভাস্কারের পর ভারতের দ্বিতীয় ওপেনার হিসাবে জোড়া শতক হাঁকানোর রেকর্ডও গড়েন ওপেনার হিসাবে নিজের প্রথম টেস্টেই। দ্রুত রান তোলার দিকে মনোযোগী থাকা রোহিত ম্যাচে মোট ১৩টি ছয় হাঁকিয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেটে এর আগে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ১২টি ছয় হাঁকিয়েছিলেন পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম। মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে ক্যারিয়ার শুরু করা রোহিত শর্মার ওপেনার হওয়ার গল্পটা এমনই।

সিরিজের প্রথম টেস্টে জোড়া শতক হাঁকানোর পর দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৪ রান করে আউট হন, এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে হয়নি। দ্বিতীয় টেস্টে রানের দেখা না পেলেও তৃতীয় টেস্টে রোহিত রানের দেখা পান। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বি-শতক হাঁকিয়ে ২১২ রানে থামেন তিনি। ওপেনার হিসাবে নিজের প্রথম সিরিজে চার ইনিংসে ১৩২.২৫ ব্যাটিং গড়ে ৫৩৪ রান করেন তিনি। ভারতীয় ওপেনারদের মধ্যে এক সিরিজে তার চেয়ে বেশি রান করেছেন শুধুমাত্র বীরেন্দর শেবাগ। তিনি পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০০৪ সালে ছয় ইনিংসে ৫৪৪ রান করেছিলেন। চার ইনিংস ব্যাট করেছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এক সিরিজে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন রোহিত শর্মাই। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ফলস্বরূপ সিরিজসেরার পুরষ্কার জেতেন তিনি।