রাজনীতি ১০ নভেম্বর, ২০১৯ ০৬:২৮

অহেতুক আন্দোলন করার জন্য টাকা দেবে না সরকার : প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উসকানি দিয়ে ছাত্রদের বিপথে নেওয়া আর মুখরোচক কথা বলা এটা কখনো কেউ মেনে নিতে পারে না। তা যদি করতে হয় তবে নিজেদের বেতন নিজেদের দিতে হবে। নিজেদের খরচ নিজেরা চালাবে। সরকার সব টাকা বন্ধ করে দেবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক লীগের ১৩ তম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইদানীং দেখছি কোনো কথাবার্তা নেই, ব্যবস্থা নেওয়ার পরও কয়েকজন মিলে অহেতুক অভিযোগ তোলে। আইনে আছে, কারও বিরুদ্ধে কেউ যদি কোনো অভিযোগ তোলে সেটা যদি প্রমাণ না হয় তবে সেই অভিযোগকারীর বিচার হয়, সাজা হয়। কথায় বলে–স্বাধীনতা ভালো তবে বালকের জন্য নহে। এটাও মাথায় রাখতে হবে। কাজেই আমি মনে করব এ ধরনের বালকসুলভ কথাবার্তা না বলাই ভালো। বরং ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করবে, তাদের সময় যেন নষ্ট না হয়, উপযুক্ত সময়ে ভালো রেজাল্ট করে জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে সেটাই আমরা চাই।

তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসন আছে। কিন্তু টাকা তো সরকার দিচ্ছে। সরকারের টাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে যায়। সেখান থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনভাতা দেওয়া হয়। একজন শিক্ষার্থীর মাসে মাত্র ১৫০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু এই টাকায় কি উচ্চশিক্ষার খরচ হয়? প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কত লাখ টাকা খরচ হয় প্রতি সেমিস্টারে। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কত লাগে। সেই টাকার জোগান দেয় সরকার। দুই লাখ আড়াই লাখ টাকা খরচ হয় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পেছনে।

ইঞ্জিনিয়ার, মেডিকেল ও কারিগরিতে খরচ আরও বেশি হয়। সব টাকা তো সরকারের পক্ষ থেকে যাচ্ছে। কাজেই সেখানে ডিসিপ্লিন দরকার। শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা পাবে, নিজেদের জীবনকে উন্নত করবে সেটাই আমরা চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু আমরা দেখি অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নাকি আমরা বুঝি না। যারা কথা বলছেন তারাই বোঝেন। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন তারাই বোঝেন। পড়াশোনা নষ্ট করে স্ট্রাইক করে দিনের পর দিন কর্মঘণ্টা নষ্ট করবেন, যারা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ব্যাহত করবেন, তারাই বোঝেন। আর বুঝব না আমরা। এটা তো হয় না। অর্থ দেবে সরকার, সব রকম উন্নয়ন প্রকল্প সরকার করবে। সেটা নিতে খুব ভালো লাগবে আর সরকার সেখানে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না, এটা কখনো হতে পারে না।

তিনি বলেন, দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, গণতন্ত্রকে সুসংহত এবং বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা এ লক্ষ্য সামনে নিয়ে বঙ্গবন্ধু সকল দল, মত, সরকারি-বেসরকারি, সামরিক সব প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে একত্রিত করে একটি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে সকলে এক হয়ে কাজ করে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন তখন বাংলাদেশে ১৯টি জেলা ছিল। এই বাংলাদেশকে তিনি সাতটি জেলায় ভাগ করেছিলেন। যতগুলো সাব-ডিভিশন অর্থাৎ মহকুমা ছিল প্রত্যেকটা মহকুমা তিনি একটা জেলায় রূপান্তর করে সাতটি জেলায় উন্নীত করে সেখানে গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন যাতে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে একবারে তৃণমূল মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়া যায়। তিনি সকলকে নিয়ে যে প্ল্যাটফর্ম করেছিলেন তা ছিল ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম যাকে সবাই বাকশাল বলে। তার এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি দ্রুত করতে।

নির্বাচন পরিচালনায় বঙ্গবন্ধুর ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা জনগণের জন্য কাজ করবেন তারা যেন জনগণের ভোট পান সেটা নিশ্চিত করার ব্যবস্থাও তিনি নিয়েছিলেন। তখন যে দুটি নির্বাচন ও উপনির্বাচন হয়েছে সেখানে দুজন স্কুল মাস্টার জয়ী হয়েছিলেন। কারণ তাদের কোনো অর্থ খরচ করতে হয়নি। রাষ্ট্রের পক্ষে থেকে প্রতি প্রার্থীর প্রচারের ব্যবস্থা করা হতো। শুধু মানুষের কাছে গিয়ে প্রার্থীরা ভোট চাইতে পারতেন। কোনো অর্থ খরচ করতে হতো না। এ রকম একটা ব্যবস্থা তিনি চালু করেছিলেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শ্রম এবং কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এবং আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা’র (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর তুয়োমো পটিয়াইনেন, আন্তর্জাতিক টেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন এশিয়া প্যাসিফিক’র (আইটিইউসি-এপি) সাধারণ সম্পাদক শোভা ইওশিদা এবং দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক ট্রেড ইউনিয়ন কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক লক্ষণ বাহাদুর বাসনেতও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। জাতীয় শ্রমিক লীগ সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে করেন। দলের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এবং সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে এই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।