রাজনীতি ১০ নভেম্বর, ২০১৯ ০২:০৯

প্রধানমন্ত্রীর কাছে মাগুরার প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা নুরুজ্জামানের খোলা চিঠি

ডেস্ক রিপোর্ট ।।

মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ১৯৮০ সালের বিজয়ী জিএস এসকে নুরুজ্জামান পেশায় একজন শিক্ষক। দীর্ঘদিন যাবৎ আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তিনি। মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম রব্বানি’র মৃত্যুর পর তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

শনিবার (৯ নভেম্বর) মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রবীন নেতা এসকে নুরুজ্জামান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’কে উদ্দেশ্য করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি খোলা চিঠি পোস্ট করেছেন। সেখানে বিভিন্ন মানুষের মন্তব্য এবং প্রতিক্রিয়ার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নিজের ওয়ালে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে লেখা তার খোলা চিঠিটি আমাদের কাগজ পাঠকদের জন্যে হুবহু তুলে ধরা হলো-

'মাননীয় নেত্রী'
জাতির জনকের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের প্রারম্ভিক শব্দ চয়ন “অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে”
আপনার বরাবর খোলা চিঠি লিখলাম। বেয়াদবি হলে নগণ্য মুজিব ভক্ত বলে ক্ষমা করবেন –!

আমি শেখ নুরুজজামান ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য ছিলাম।
১৯৮০ সালে মাগুরা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ সংসদের নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে AGS নির্বাচিত হয়েছিলাম। ১৯৮৬ সালে শিক্ষকতা পেশায় প্রবেশ করে ঐ বত্সরই মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মনোনীত হই। পরবর্তী কাউন্সিলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। ঐ কমিটির সভাপতি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় মরহুম গোলাম রব্বানী সাহেব। সর্বশেষ সম্মেলনে আমি সিনিয়র সহ সভাপতি নির্বাচিত হই।

মাননীয় নেত্রী একনিষ্ঠ ভাবে আজীবন দল করে আসছি। কোন লোভ লালসা আমাকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করতে পারে নাই। নেত্রী দলের প্রতি কতো মায়া মমতা সে বিষয়ে আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ১৯৯৪ সালের উপনির্বাচনে আমি ব্যাক্তিগত উদ্যোগে বাচ্চুর নির্বাচনী পরিবেশ বেগবান করতে ৫২ হাত বিশিষ্ট নৌকা তৈরী করি। আপনি আমাদের গ্রামের ভিতর দিয়ে নির্বাচনী কাজে অতিক্রম করার সময় জনগণের দাবীর মুখে আমার ঐ নৌকার উপর দাঁড়িয়ে রাত সাড়ে দশটার সময় ৫ মিনিট বক্তব্য রেখেছিলেন।

ঐ নির্বাচনেরপর আমি দারুণ ভাবে অত্যাচারের স্বীকার হই। অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে দুই বার করে আমার বাড়ি ডাকাতি করা হয়। আমি শেখ বংশের মানুষ ।আমি হলপ করে বলতে পারি আমার বংশে নৌকার বাইরে একটি ভোটারও নেই! আওয়ামীলীগ করে কতজন কতকিছু পেয়েছে, লক্ষপতি কোটিপতি হয়েছে কিন্তু আমি দলের কাছ থেকে কিছু পাইনি বা নেয়নি এবং আশাও করিনি কোনদিন। শুধু জাতির জনকের আদর্শ বুকে লালন করে আজীবন দল করে যাচ্ছি এ শাশ্বত সত্যকে জেনে ” জনক তো আমাদের একটি
স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন “এর চেয়ে একটি জাতির আর কি পাওয়ার থাকে।

মাননীয় নেত্রী; বর্তমানে আমি এই জনপদের সর্বপ্রথম ঐতিহ্যবাহী মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিনোদপুর বি কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি।

উল্লেখ্য, যে বিদ্যালয়ে মহম্মদপুর উপজেলার ৪৫ বছরের আওয়ামীলীগের সভাপতি মরহুম গোলাম রব্বানী সাহেব ৩২ বছর প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আমি আমার সাধ্যমত দলীয় নেতা কর্মীদের অনেক উপকার করেছি যা বিশেষ করে আমার এলাকার দলীয় শিক্ষক গোষ্ঠিসহ নিরীহ নেতাকর্মীরা জানে। মাননীয় নেত্রী, অশুভ শক্তির সাথে কোনদিন আপোষ করতে শিখি নাই এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। জনাব গোলাম রব্বানী সাহেব মারা যাওয়ার পর আওয়ামীলীগের গঠণতন্ত্র অনুযায়ী আমি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পদে আসীন হই। এবং একনিষ্ঠ নেতাকর্মীদের মুখে মুখে ফিরছিলো নুরুজজামান স্যার এবার এমনিতেই সভাপতি হবেন।

কিন্তু অত্যন্ত কষ্টের বিষয় বিগত উপজেলা নির্বাচনে আমি বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি এই ধুয়া
তুলে মাগুরা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জনাব তানজেল হোসেন খান ফেসবুকে আমাকে ভারপ্রাপ্ত
সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করে তার পছন্দনীয় ৭ নম্বর সহ সভাপতি তোতা মিয়াকে সভাপতি ঘোষণা করেন। আমাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পূর্বে কেন্দ্র বা জেলা আওয়ামীলীগের তরফ থেকে কোন কারণ দর্শানো নোটিশ বা আমার কাছে ডাকযোগে কোন অব্যাহতি পত্র প্রেরণ করা হয় নাই।

শ্রদ্ধাভাজন নেত্রী :- আমার দেখা রাজনীতির ৪০ বছরের মধ্যে যে রাজনীতি বর্তমান দেখছি তার বর্ণনা
দিতে পরিপার্শ্বিক কারণে আমি অক্ষম।

পরিশেষে আপনাকে অতি বিণয়ের সাথে জানাচ্ছি যে, ১১ নভেম্বর তারিখে মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন।ঐ সম্মেলনে আওয়ামীলীগের গঠণতন্ত্রের কোন ধারা বলে বা নিজস্ব কোন নির্বাহী ক্ষমতা বলে জনাব তানজেল হোসেন খান আমাকে বাদ দিয়ে তোতা মিয়াকে সভাপতি নিয়োগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে আপনার দৃঢ় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বিনীত 
আপনার স্নেহধন্য 
শেখ নুরুজজামান; 
প্রধান শিক্ষক,
বিনোদপুর বি কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
মহম্মদপুর – মাগুরা।