অপরাধ ও দুর্নীতি ১২ নভেম্বর, ২০১৯ ০৪:১৭

অবশেষে মুক্তি পেল র‌্যাব কর্তৃক দণ্ডিত ১২১ শিশু

ডেস্ক রিপোর্ট।। 

টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা ১২১ শিশুকে অবশেষে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যাদের সবাই র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত হয়ে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন।  এর মধ্যে ১২ বছরের নিচে থাকা ১১ শিশুকে সোমবার রাত ৯টার দিকে অভিভাবকদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। বাকিদের ( ১২-১৮ বছর) শিশু আদালতের মাধ্যমে জামিন দেওয়া হয়েছে।  

কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ এহিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশটি আমরা আজই হাতে পেয়েছি। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ১২ বছরের নিচে থাকা ১১ শিশুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ বাকি যাদের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে, তাদের সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে ৬ মাসের জামিন দেওয়া হয়েছে৷ এ বিষয়ে শিশু আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শিশু আইন অনুযায়ী, অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন , অপরাধে জড়িত শিশুর বিচার শুধু শিশু আদালতেই হবে। কিন্তু তা না করে বিভিন্ন সময় শিশুদের দণ্ড দিয়েছে র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে ১২১ শিশু রয়েছে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে। এ নিয়ে গত ৩১অক্টোবর ‘আইনে মানা, তবুও ১২১ শিশুর দণ্ড’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে এলে ওই দিনই টঙ্গী ও যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা শিশুদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে কেন্দ্র দুটির তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেন আদালত। পরে সেই আদেশের কপি টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন তত্ত্বাবধায়কের হাতে পৌঁছা মাত্রই মুক্তি দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে সোমবার সকাল পর্যন্ত মোট বন্দী শিশুর সংখ্যা ছিল ৯৭৯ জন। এর মধ্যে এ বছরের ৩মে থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত শিশু রয়েছে ১২১ জন। তাদের মধ্যে ৬ মাসের সাজা শেষে রোববার মুক্তি পেয়েছে একজন। বাকি ১২০ জনের মধ্যে ২৮ জনের বয়স ১৭ বছর। ১৬ বছরের আছে ২৬জন। ১৫ বছরের ২০, ১৪ বছরের ১৬, ১২ বছরের ১১ জন। ৭ জনের বয়স ১৩। বাকি ১২জনের বয়স ৮ থেকে ১১ বছর।

শিশুদের ছেড়ে দেওয়াতে আনন্দিত অভিভাবকেরা। মোহাম্মদপুর থেকে ছেলেকে নিতে এসে রেখা নামের এক মা বলেন, আমার ছেলের কোনো দোষ ছিল না। তারপরেও তাকে ধরে নিয়ে আসছে। আর এত তাড়াতাড়ি ছাড়া পাবে ভাবতেই পারিনি। একই এলাকার মো. রাজ্জাক নামের আরেকজন অভিভাবক ছেলেকে কাছে পেয়ে কেঁদে ফেলেন। বলেন, ‘আমি এখন থেকে ছেলেকে চোখে চোখে রাখব। আবার সে লেখাপড়া করবে।’

আইন কী বলে
২০১৩ সালের শিশু আইন বলছে, ‘বিদ্যমান অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সকল ব্যক্তি শিশু হিসেবে গণ্য হবে।’ ১৬ ধারা বলছে, ‘আইনের সঙ্গে সংঘাতে আসা শিশু কর্তৃক সংঘটিত যেকোনো অপরাধের বিচার করবার জন্য প্রত্যেক জেলা সদরে এক বা একাধিক শিশু আদালত থাকবে। কোনো অপরাধ সংঘটনে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু একত্রে জড়িত থাকলেও শিশুর বিচার শুধু শিশু আদালতই করবে। শিশু আদালতেরও সাজসজ্জা ও ধরন ভিন্ন হতে হবে। অপরাধ অজামিনযোগ্য হোক বা না হোক, আদালত শিশুকে জামিনে মুক্তি দিতে পারবে। এমনকি আদালতে শিশুর প্রথম হাজির করবার ২১ দিনের মধ্যে প্রবেশন কর্মকর্তা একটি সামাজিক অনুসন্ধান দাখিল করবেন। প্রবেশন কর্মকর্তা বা বৈধ অভিভাবকসহ আইনজীবীর উপস্থিতি আদালতে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।’