সারাদেশ ২১ নভেম্বর, ২০১৯ ১০:৫৫

প্রতিবন্ধীদের ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তি বাড়াচ্ছে সরকার

ডেস্ক রিপোর্ট ।। 

সরকার এবার প্রতিবন্ধীদের ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তি বাড়াচ্ছে। ভাতা চালু হয় ২০০০ সালে তখন জনপ্রতি ভাতা বরাদ্দ ছিল ২০০ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সে ভাতা দাঁড়িয়েছে ৭৫০ টাকায়। এ ভাতা যে কোনো অসচ্ছল প্রতিবন্ধীর দৈনন্দিন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

রুপা জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। কোমরের নিচ থেকে তার পা সরু, চিকন। সে একা হাঁটতে পারে না, লাঠি ছাড়া উঠে দাঁড়াতে পারে না। সে পড়াশোনা করে। লাঠিতে ভর করে সে স্কুলে যায়। রুপা সাভারের ষোলমাসী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সে এলাকার গণ্যমান্য মানুষের সহযোগিতা যেমন পায়, তেমনি সরকারের উপবৃত্তিও পায়। এবারের বাজেটে প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা ও উপবৃত্তি বাড়ায় সে খুব খুশি।

রুপা প্রতিবেদককে জানায়, সরকার যদি এ ভাতাটা না দিত, তবে আমার লেখাপড়া হতো না। আমার গরিব বাবা-মায়ের পক্ষে কোনোভাবেই আমাকে পড়ালেখা করানো হতো না। সরকার ভাতা দেয়, শিক্ষাবৃত্তি দেয়, বিনা পয়সায় বই দেয় বলেই আমরা গরিব মানুষরা পড়ালেখা করতে পারছি। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীবান্ধব। তাদের জীবন মান উন্নয়নে এ সরকার বহুমুখী কল্যাণধর্মী কর্মকা- হাতে নিয়েছে। দেশের অনগ্রসর, বঞ্চিত, দরিদ্র, অসহায় প্রতিবন্ধী, অটিস্টিকদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রতি বছর প্রতিবন্ধীদের ভাতা ও উপবৃত্তি বৃদ্ধিতে এ জনগোষ্ঠী উপকৃত হচ্ছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য যে জরিপ পরিচালিত হয়, তাতে দেশে ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৩০ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ হচ্ছে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে প্রায় সব ধরনের ভাতা, সম্মানী ও অনুদান বেড়েছে। বর্তমানে ১৬টি নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে প্রতিবন্ধী ভাতাও। বর্তমানে ১৬ লাখ প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেওয়া হয়। প্রতিবন্ধীরা বর্তমানে ৭৫০ টাকা করে ভাতা পায়।

গেল অর্থ বছরে এজন্য ৮৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে রাখা হয়েছে ১ হাজার ৯০ কোটি টাকা। প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ ভাতা প্রতি বছরই বাড়ছে। ২০০০ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ভাতা ছিল ২০০ টাকা। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে তা হয় ২২০ টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২৫০ টাকা। ২০০৯-১০ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছর অর্থাৎ ৫ বছর ভাতা ছিল ৩০০ টাকা। ২০১৫-১৬ পর্যন্ত ভাতা বেড়ে হয় ৫০০ টাকা।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা হয় ৬০০ টাকা। ২০১৮-১৯ পর্যন্ত ভাতা বরাদ্দ হয় ৭০০ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ ভাতা দাঁড়ায় ৭৫০ টাকায়। এদিকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রমও বাড়ানো হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ভাতাভোগীর সংখ্যা ও বরাদ্দ বেড়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে রাখা হয়েছে ৯৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ভাতাভোগীর সংখ্যাও ৯০ থেকে বাড়িয়ে ১ লাখে উন্নীত করা হয়েছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯০ হাজার উপকারভোগী বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থী বিভিন্ন হারে এ ভাতা পেতেন। এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৮০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। মোট ১৫ কোটি বাড়ানো হয়েছে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দরিদ্র, অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের শিক্ষা লাভের সহায়তা হিসেবে ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে শুরুতে ১২ হাজার ২০৯ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়। এ কর্মসূচির আওতায় মাসিক উপবৃত্তির হার প্রাথমিক স্তরে ৩০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৪৫০, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ এবং উচ্চতর স্তরে ১ হাজার টাকা।

বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় অর্থাৎ ২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রতিবন্ধী উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল ১৩ হাজর ৪১ জন এবং বার্ষিক বরাদ্দ ছিল ৬.০০ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ১৭ হাজার ১৫০ জনে এবং বার্ষিক বরাদ্দ ৬ কোটি টাকা থেকে ৮ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। ২০১০-১১ অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৬২০ জনে এবং বার্ষিক বরাদ্দ ৮.৮০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮০ হাজার জনের জন্য বরাদ্দ ৫৪.৫০ কোটি টাকা প্রদান করা হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।

জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের মহাসচিব ড. সেলিনা আক্তার বলেন, গ্রামে গঞ্জে অনেক হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী আছে, যাদের মা-বাবা শুধু এ ভাতার জন্যই তাদের পরিবারের সঙ্গে রাখে। তাই এ ধরনের কর্মসূচি হাতে রেখেই দীর্ঘমেয়াদে প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান ও স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করতে হবে।