আন্তর্জাতিক ২২ নভেম্বর, ২০১৯ ০৪:০১

যাকে চাকরির জন্য নিজে ফোন করেছিলেন রতন টাটা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

একটি ভালো চাকরিকে বলা হয় 'সোনার হরিণ'। আর টাটা গ্রুপে চাকরি পাওয়া স্বপ্ন পূরণের মতো। অথচ টাটা গ্রুপের কর্ণধার রতন টাটা নিজেই সরাসরি ফোন করে এক যুবককে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছেন। চাকরির আবেদন না করেও চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন তিনি। এমনটা সবার জীবনে ঘটে না। কিন্তু ভারতের মুম্বাইয়ের বাসিন্দা শান্তনু নায়ডুর ক্ষেত্রে তেমনটাই ঘটেছে। 

২০১৪ সালে রতন টাটার সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়। পাঁচ বছর পর সম্প্রতি তার সংস্থায় কাজ করার প্রস্তাবসহ রতন টাটার ফোন পেলেন শান্তনু। ২৭ বছরের শান্তনুর স্বপ্নের এই গল্প পোস্ট হয়েছে ‘হিউম্যানস অব বম্বে’ নামে এক ফেসবুক পেজে।

সেখানে তিনি লেখেন, সেটা ২০১৪। একদিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরছেন। সেই সময় দেখেন, একটি কুকুর রাস্তায় মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সম্ভবত কোনো গাড়ির তলায় চাপা পড়েছিল কুকুরটি। বিষয়টি শান্তনুকে নাড়িয়ে দেয়। এরপর তিনি ভাবতে থাকেন, পথকুকুরদের এভাবে মৃত্যু কীভাবে ঠেকানো যায়। কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও করেন তিনি। এরপর তিনি শহরের একটা অংশের পথকুকুরদের গলায় একটা করে কলার পরিয়ে দিলেন। ওই কলারগুলিতে আলো পড়লেই তা ঝলমলে হয়ে ওঠে। ফলে রাতে গাড়ির আলো দূর থেকে পড়লেই কলারগুলো নজরে আসবে চালকের। সঙ্গে নজরে পড়বে কুকুরগুলোও।
শান্তনুদের এই কাজ টাটা গ্রুপের নিউজ লেটারেও প্রকাশ পায়। এরপর প্রচুর মানুষ তার কাছে কুকুরের জন্য এই কলার কিনতে চান। কিন্তু ওই পরিমাণে কলার সরবরাহ করার সামর্থ ছিল না শান্তনুর। তার বাবা একদিন দিন শান্তনুকে বিষয়টি রতন টাটাকে বলার কথা বলেন। প্রথমে ইতস্তত করলেও শেষ পর্যন্ত রতনকে একটি চিঠি লিখে ফেলেন শান্তনু।

এর প্রায় দু’ মাস পর একটি চিঠি পান তিনি। সেই চিঠিতে রতন টাটার স্বাক্ষর। তার দিন কয়েক পর রতন টাটার মুম্বাইয়ের অফিসে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন শান্তনু। রতন তার কাজে যে ভীষণ আপ্লুত সে কথাও জানান। এরপর রতন তার ব্যক্তিগত কুকুরগুলি দেখানোর জন্য শান্তনুকে নিয়ে যান। এই ভাবেই দু’জনের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। 

টাটাদের পক্ষ থেকে শান্তনুর কাজের জন্য আর্থিক সাহায্যও করা হয়। এরপর বন্ধুরা মিলে মুম্বাইয়ের পথকুকুরদের গলায় এই কলার পরানোর কাজ জোর কদমে শুরু হয় বলে জানিয়েছেন শান্তনু।

তারপর পাঁচ বছর কেটে গেছে। ফেসবুকের ওই পোস্টে শান্তনু জানিয়েছেন, সম্প্রতি একটি ফোন পান তিনি। উল্টো দিক থেকে বলা হয়, আমার অফিসে প্রচুর কাজ রয়েছে। একজন সহকারী প্রয়োজন। আপনি কি আমার সহকারী হিসাবে কাজ করবেন?

ফোন পেয়ে শান্তনু কয়েক মুহূর্ত কোনো কথা বলতে পারেননি। কারণ ফোনের উল্টো দিকে যিনি ছিলেন, তার নাম রতন টাটা। নিজের সহকারীর খোঁজে শান্তনুকে নিজেই ফোন করেছেন! উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলেন শান্তনু।