জাতীয় ২৬ নভেম্বর, ২০১৯ ১০:০১

শ্রদ্ধা জানাতে রবিউল হুসাইনের ধানমন্ডির বাসায় প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট ।। 

একুশে পদকজয়ী কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে তার ধানমন্ডির বাসায় গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় আধাঘণ্টা কবির বাসায় উপস্থিত থেকে তিনি কবির চিকিৎসার বিষয়ে এবং তার পরিবারের খোঁজ-খবর নেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন রবিউল হুসাইনের চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রবিউল হুসাইন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তার ধানমন্ডির বাসায় আসেন। আমি সেখানে ছিলাম। আমার কাছে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান— রবিউল হুসাইনের কী কী হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীকে বিস্তারিত জানালাম।’

ডা. হারিসুল হক বলেন, ‘‘বুধবার (২৭ নভেম্বর) প্রথমে বাংলা অ্যাকাডেমি, পরে শহীদ মিনারে সর্বসাধারণর শ্রদ্ধা নিবেদনের কথা জেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকাল ১১টায় একবারেই তাকে শহীদ মিনারে নেওয়া হোক।’ আর যেহেতু বাংলা অ্যাকাডেমি এবং শহীদ মিনার কাছাকাছি, তাই ঠিক করা হয়েছে একবারেই শহীদ মিনারেই নেওয়া হবে। পরে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।’’

প্রধানমন্ত্রী প্রায় আধাঘণ্টার মতো কবির বাসায় অবস্থান করেন বলেও জানান অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক।

তিনি বলেন, ‘এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া এবং রবিউল হুসাইনের চিকিৎসায় নিয়োজিত অন্য চিকিৎসকরাও সেখানে উপিস্থিত ছিলেন।’

ডা. হারিসুল হক বলেন, ‘‘রবিউল হুসাইন ‘এ প্ল্যাস্টিক অ্যানিমিয়াতে’ ভুগছিলেন। এটি এক ধরনের ‘বোন ক্যানসার’। এতে করে শরীরে রক্ত উৎপাদন হয় না। তার রক্ত কমে যাচ্ছিল। ১৬ নভেম্বর রবিউল হুসাইন বিএসএমএমইউতে হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক মাসুদা বেগমের অধীনে ভর্তি হন। ১৮ নভেম্বর তার চিকিৎসায় একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। বিএসএমএমইউতে ভর্তির আগে তিনি দেশের বাইরে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।’’

ধানমন্ডির বাসায় নেওয়ার আগে রবিউল হুসাইনকে দেখতে বিএসএমএমইউতে আসেন সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, বাংলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরসহ অনেকে। তারা বলেন, ‘রবিউল হুসাইন নিভৃতচারী মানুষ ছিলেন। তার চলে যাওয়া আমাদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা একজন অভিভাবক হারালাম।’

শাহরিয়ার কবির এসময় জানিয়েছিলেন, বুধবার প্রথমে বাংলা অ্যাকাডেমিতে এবং পরে সকাল সাড়ে ১০টায় শ্রদ্ধা জানাতে রবিউল হুসাইনের মরদেহ শহীদ মিনারে আনা হবে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে তার জানাজা হবে। বাদ জোহর মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

রবিউল হুসাইন ১৯৪৩ সালে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় জন্মগ্রহণ করেন। ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক পাওয়া এই কবি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের জন্যও কাজ করেছেন।

তিনি ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্রের ট্রাস্টি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী পরিষদের সদস্য।

রবিউল হুসাইনের লেখা উল্লেখযোগ্য বই হলো— ‘কী আছে এই অন্ধকারের গভীরে’, ‘আরও ঊনত্রিশটি চাঁদ’, ‘স্থিরবিন্দুর মোহন সংকট’, ‘কর্পূরের ডানাঅলা পাখি’, ‘আমগ্ন কাটাকুটি খেলা’, ‘বিষুবরেখা’, ‘দুর্দান্ত’, ‘অমনিবাস’, ‘কবিতাপুঞ্জ’, ‘স্বপ্নের সাহসী মানুষেরা’, ‘যে নদী রাত্রির’, ‘এইসব নীল অপমান’, ‘অপ্রয়োজনীয় প্রবন্ধ’, ‘দুরন্ত কিশোর’, ‘বাংলাদেশের স্থাপত্য সংস্কৃতি’, ‘নির্বাচিত কবিতা’, ‘গল্পগাথা’, ‘ছড়িয়ে দিলাম ছড়াগুলি’ ইত্যাদি। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন