আন্তর্জাতিক ১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০৪:২৮

গাড়ির ভেতরে এমপির হস্তমৈথুন, বেরিয়ে আসছে নারীদের না বলা কথা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে গাড়িতে বসে এক ব্যক্তি হস্তমৈথুন করছিলেন। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়াতে নারীরা তাদের ওপর যৌন নির্যাতন আর নিপীড়নের কথা প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছেন। তারা #এনাজেডার মাধ্যমে এসব জানাচ্ছেন। তিউনিশিয়ার আরবিতে ওই শব্দযুগল #মিটু’র সমার্থক।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ছবিতে যে ব্যক্তিটিকে হস্তমৈথুন করতে দেখা যাচ্ছে তিনি সম্প্রতি দেশটির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নাম জোহেইর মাখলোফ। তবে তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ায় ওই গাড়িতে বসেই একটা বোতল প্রস্রাব করছিলেন তিনি।

চলতি মাসের শুরুতে এক নারী তিউনিশিয়ার সংসদ ভবনের সামনে #এনাজেডা লেখা টি-শার্ট পরে এর প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। ওই সময় দেশটির সংসদে সদ্য নির্বাচিত আইনপ্রণেতারা শপথ নিচ্ছিলেন। প্রতিবাদী ওই নারী অভিযুক্ত ওই এমপির প্রকাশ্যে হস্তমৈথুন করার ঘটনার তদন্ত দাবি করেন।

একজন বিচারক বিষয়টি পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখছেন তবুও যে আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হস্তমৈথুনের অভিযোগ উঠেছে তিনি কৌশলে এখনও তার সংসদীয় সুবিধা ভোগ করছেন। ছবিটি তোলা হয়েছে গত অক্টোবরে। যে শিক্ষার্থী ছবিটি তুলেছেন তিনি নিজেও ওই এমপির দ্বারা নিপীড়নের স্বীকার বলে জানিয়েছেন।

তবে ‘আওয়াত নিসা’ অর্থাৎ ‘নারীদের কণ্ঠস্বর’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা #এনাজেডা নামে একটি গোপন ফেসবুক গ্রুপ খোলার পর গোটা দেশের নারীরা প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। গ্রুপটিতে যুক্ত হওয়া নারীরা তাদের ওপর হওয়া যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতার কথা নিরাপদে জানাতে পারছেন।

তবে বিপুলসংখ্যক নারী তাদের নির্যাতনের কথা স্বীকার করার বিষয়টিতে হতবাক গ্রুপটির মডারেটর। বিবিসিকে রানিয়া নামের ওই নারী বলেন, ‘যৌন শোষণ এবং পারিবারিক অজাচারগুলো আমরা প্রকাশ করার চেয়ে লুকিয়ে রাখতেই বেশি পছন্দ করি। অনেক পরিবার এটা গোপন রাখে এবং তারা জানেও না কীভাবে এর মোকাবিলা সম্ভব।’

গ্রুপটির সদস্য সংখ্যা ইতোমধ্যে ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়া আরও হাজার হাজার নারীর গ্রুপটিতে সদস্য হওয়ার আবেদন অপেক্ষামাণ (ফেসবুকের ভাষায় পেনডিং) রয়েছে। সেখানে নারীরা ধর্ষণ, বিবাহপরবর্তী সময়ে সঙ্গীর হাতে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন।

সামরিক বাহিনীর সদস্য, পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, গণমাধ্যম এবং আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে এসব নিপীড়নের অভিযোগ ও সেইসব অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন তারা। তবে ব্যতিক্রমী বিষয় হলো শুধু নারীরা নয় কিছু পুরুষও গ্রুপটিত তাদের বিরুদ্ধে হওয়া যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন।

গ্রুপটিতে এত মানুষের যুক্ততা নিয়ে ‘নারীদের কন্ঠস্বর‘ নামে ওই বেসরকারি সংস্থা যারপরনাই বিস্মিত হয়েছে। বিশেষ করে পরিবারের ভেতরে শিশুদের যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার বিষয়টিতে। সংস্থাটির একজন জানালেন, ‘এসব নিপীড়নের অভিজ্ঞতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চাচা, ভাই, প্রতিবেশী ও বাড়ির আশপাশের দোকানদারদের মাধ্যমে শুরু।’