আইন ও আদালত ২ অক্টোবর, ২০২০ ১২:০৩

হত্যা করেন সৎ বাবা, লাশ গুম করেন আপন মা

ডেস্ক রিপোর্ট 

বছর বয়সী জান্নাতুলকে মায়ের গর্ভে রেখেই মারা যান বাবা এরপর নতুন সংসার পাতে মা সে সংসারে উচ্ছিষ্ট হয় জান্নাতুল সৎ মেয়েকে সহ্য করতে না পেরে গলাটিপে হত্যা করেন বাবা জান্নাতের মা সেই দৃশ্য দেখে মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টাও করেন কিন্তু ব্যর্থ হয়ে নিজের মেয়ের লাশ নিজেই রেললাইনের পাশে ফেলে চলে যান বাবা-মা

শিশু জান্নাতুল হত্যাকাণ্ডের প্রায় মাস পর রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই মা সৎ বাবা শুক্রবার হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ও দিয়েছেন আদালতে লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে

শুক্রবার পিবিআই থেকে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, জন্নাতুল মায়ের পেটে থাকতেই প্রায় তিন বছর আগে বাবা আতিকুল ইসলাম (৪০) মারা যান জান্নাতুল জন্মের কিছুদিন পরেই মা আকলিমা খাতুন (৩৫) খাতুন নতুন সংসার পাতেন গৌরীপুরের কোনাবাড়ি গ্রামের বাবুল মিয়ার সঙ্গে বাবুলের তৃতীয় স্ত্রী আকলিমা আকলিমা বাবুল দুজনই রাস্তা মেরামত শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন কখনও গাজীপুর, কখনও নারায়নগঞ্জ এলাকায় তারা কাজ করেন আকলিমাকে বিয়ে করলেও তার শিশু কন্যাকে সহ্য করতে পারতেন না বাবুল ছোট্ট জান্নাতুলকে মারধর করতেন তিনি করোনার প্রাদুর্ভাবে বাইরে কাজ না থাকায় বাবুল মিয়া স্ত্রীকে নিয়ে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন পরে গত ১৮ মার্চ সকালে বাজার থেকে বাড়িতে ফিরে বাবুল শিশু কন্যা জান্নাতুলকে বারান্দায় একা পান শিশুটিকে বরান্দায় বসিয়ে রেখে বাড়ির পেছনে লাকড়ি কুড়াতে গিয়েছিলেন মা ওই সময় শিশুটি পায়খানা করে সব নষ্ট করে দেওয়ায় পৈশাচিকতা জেগে উঠে বাবুলের ভেতর শিশুটি কান্নাকাটি করতে থাকায় চরথাপ্পর দিয়ে এক পর্যায়ে গলাটিপে ধরেন মেয়ের কান্না শুনে মা আকলিমা দৌঁড়ে বাড়িতে এসে দেখেন তার মেয়ে ছটফট করছে ওই সময় শিশুটিকে বারান্দা থেকে উঠানে ফেলে দেন বাবুল জান্নাতের প্রাণ ফেরাতে মা অনেক চেষ্টা করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন পরে পুলিশি ঝামেলা এড়াতে এবং গ্রামের ফিরলে খুনের রহস্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে এই ভেবে লাশ গুম করার পরিকল্পনা শুরু করেন মা সৎ বাবা বাড়িওয়ালাপাড়া এলাকায় বাবুলের এক বোনের বাড়িতে শিশুটির লাশ নিয়ে যায় তারা পরে সেখান থেকে গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনের নম্বর গেটের কাছে নিয়ে রাতের বেলা লাশ রেললাইনের পাশে ফেলে চলে যান গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায়

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, এদিকে রেললাইনের পাশে কাপড় মোড়ানো লাশ পেয়ে গৌরীপুর থানা পুলিশ উদ্ধার করে ১৯ মার্চ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় ময়নাতদন্তে বেরিয়ে আসে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে ওই অবস্থায় গৌরীপুর থানার এসআই উজ্জ্বল মিয়া বাদি হয়ে গত ১৭ আগস্ট গৌরীপুর থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন থানা পুলিশ প্রায় দেড়মাস তদন্তের পর পুলিশ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্ত শুরু করে প্রযুক্তির সহায়তায় প্রধান আসামি বাবুল মিয়া শিশুটির মা আকলিমা খাতুনকে বৃহস্পতিবার আটক করা হয় টঙ্গী পূর্বথানা এলাকার অরিচপুর থেকে তাদের আটক করা হয় জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন তারা পরে আজ শুক্রবার বিকেলে সৎ বাবা মাকে ময়মনসিংহ আদালতে হাজির করা হলে হত্যার স্বীকারোক্তমূলক জবানবন্দী দেন

মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল কাশেম জানান, দুই বছরের শিশুটিকে সহ্য করতে পারতেন না সৎ বাবা সে কারণেই হত্যা করে ফেলেন আর লাশটি গুম করতে সহায়তা করেন শিশুটিরই মা ঘটনার প্রায় মাস পর রহস্য উদ্ঘাটন আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার দায় স্বীকার করেছেন