শিক্ষা ৬ অক্টোবর, ২০২০ ০৩:০৫

প্রকাশ্যে ঘুরছেন নুরু, গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ

রায়হান শোভন

ধর্ষণে সহযোগিতা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হকের বিরুদ্ধে দুই সপ্তাহ আগে রাজধানীর পৃথক দুইটি থানায় মামলা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ফলে নিরপত্তাহীনতায় ভুগছেন ধর্ষণের শিকার এই ছাত্রী।

নূরুল হক ছাড়াও এই দুটি মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও পাঁচজন ছাত্রকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক বহিস্কৃত আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ ও সাইফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সহসভাপতি নাজমুল হুদা ও শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ হিল বাকি। তাদের মধ্যে মামুন এই দুটি মামলার প্রধান আসামি। তাকেও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

মামলার বাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ধর্ষণে সহযোগিতা করার অভিযোগে লালবাগ থানায় প্রথম মামলাটি করেন তিনি। এই মামলার প্রতিবাদে নূরুল হক ফেসবুক লাইভে ওই নারীকে নিয়ে কুটক্তি করেন। এর তিনদিন পর এই ছয়জনকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় আরেকটি মামলা করেন ওই ছাত্রী।

লালবাগ থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রী নিজেকে হাসান আল মামুনের বন্ধু পরিচয় দিয়েছেন। তার অভিযোগ, তিনি এবং হাসান আল মামুন একই বিভাগের শিক্ষার্থী। ২০১৮ সালে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ
পরিষদের কোটা আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়।

এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের কথোপকথন চলে। একপর্যায়ে তার সঙ্গে মামুনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ৩ জানুয়ারি দুপুরে মামুন তাকে লালবাগের বাসায় ডেকে নেয়। তিনি বাসায় গেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মামুন তাকে ধর্ষণ করেন। কিছুদিন পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১২ জানুয়ারি আরেক আসামি নাজমুল হাসান সোহাগের মাধ্যমে ওই ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান মামুন। এ সময় ওই ছাত্রী মামুনকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। কিন্তু মামুন টালবাহানা শুরু করেন।

সম্প্রতি ওই ছাত্রী সাংবাদিকদের বলেন, কোনো উপায় না দেখে গত ২০ জুন বিষয়টি নুরুল হককে মোবাইলে মৌখিকভাবে জানাই। তিনি বিষয়টির সুরাহা করার আশ্বাস দেন। নীলক্ষেতে তাকে দেখা করতে বলেন। সেখানে গেলে মীমাংসার কথা এড়িয়ে তাকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দেন। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে নূর তার ভক্তদের দিয়ে উল্টাপাল্টা পোস্ট দেওয়াবেন বলেও হুমকি দেন। তাকে (বাদীকে) পতিতা বলে ছাত্র অধিকার পরিষদের লাখ লাখ মেম্বারের গ্রুপে প্রচার চালানোরও হুমকি দেন। তার একটি লাইভে সব সম্মান চলে যাবে বলেও তাকে শাসান। এ সময় বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্য আসামি সাইফুল, নাজমুল ও আব্দুল্লাহ হিল বাকি তাকে মানসিকভাবে চাপ দেন। পরে বাধ্য হয়ে লালবাগ থানায় ওই মামলা দায়ের করি।

গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে এই মামলার প্রতিবাদে মৎস ভবন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। মিছিল থেকে নূরসহ ৭ জনকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। তারপর নানান নাটকীয়তা শেষে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর গত রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা আক্তারের আদালতে ধর্ষণের শিকার সেই শিক্ষার্থী নুরুল হক নুরুসহ ৬ জনের গ্রেপ্তারের নির্দেশনা চেয়ে আদালতে আবেদন করেন।

মামলার বাদীর আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ অজ্ঞাত কারণে এই দুটি মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না। বাদী চরম নিরপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আসামিরা গ্রেপ্তার না হলে মামলার তদন্ত প্রভাবিত
হওয়ায় সম্ভবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাদী ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। লালবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় নূরুল হকের সম্পৃক্তা নেই বলে তিনি দাবি করছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে গতকাল তার মোবাইলে একাধিবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে গত রোববার জাতীয় জাদুঘর তথা শাহবাগ থানার সামনে নোয়াখালীতে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে আয়োজিত এক সভায় নূরুল হককে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।

মামলার বিষয়ে লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ উদ্দীন আমাদের কাগজকে জানান, আমরা তাদের গ্রেপ্তারের জন্য সচেষ্ট আছি। আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছি। তিনি বলেন, মামলা সংশ্লিষ্ট যাদেরকে দরকার আমারা তাদেরকেই গ্রেপ্তার করবো। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। ছাত্র আন্দোলন বা অন্য কোনো চাপের কারণে মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি জানান, আমাদের উপর কোনো মহল থেকে কোনো প্রকার চাপ নেই। আমরা স্বাধীনভাবে আমাদের তদন্ত পরিচালনা করছি।