শিক্ষা ৭ অক্টোবর, ২০২০ ০১:৩২

করোনায় কমেছে স্কুলের খরচ, বেতন কমেনি বিপাকে অভিভাবকেরা

ফাহিমা আক্তার সুমি

করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এখন অনলাইনে চলছে শিক্ষাকার্যক্রম। কিন্তু আগের মতোই বেতনসহ অন্যান্য খাতে ফি নিচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এতে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকেরা। তাদের অভিযোগ, করোনা মহামারীর এই সময়ে অনেক অভিভাবক চাকরি হারিয়েছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে কেউ পথে বসেছেন। এমন অবস্থায় ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ মিটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন বাস্তবতায় অর্ধেক বেতন নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। তবে জুন থেকে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করে। এতে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খচর (ইন্টারনেটআরও বেড়ে যায়।

ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের ইংলিশ ভার্সনের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র রাকিবুল ইসলাম ফাহাদের মা নুরুন নাহার বেগম। তিনি আমাদের কাগজকে বলেন, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ছেলের অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে। এই ভার্চুয়াল ক্লাসে ছেলের মোটামুটি মনোযোগ থাকলেও শিক্ষকদের কাছে প্রশ্ন করার সুযোগ খুবই কম। তাছাড়া স্কুলে যেহেতু ক্লাস হচ্ছে না সেহেতু আমাদের মূল বেতনটা নিয়ে বাকি চার্জগুলো মওকুফ করা উচিত স্কুল কর্তৃপক্ষের। তিনি আরও জানানস্কুল থেকে এখন কোন রশিদও দেওয়া হচ্ছে না। বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে অনলাইন ব্যাংকিয়ের মাধ্যমে। টিউশন ফির সঙ্গে অন্যান্য ফি গুলোও দিতে হচ্ছে আমাদের। বেতন মওকুফের বিষয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক এম. এ সালাম খান বলেন, আমরা বছরের শেষ দিকে ফুল ফ্রির জন্য আবেদন করতে বলবো অভিভাবকদের। যাদের অর্থনৈতিক দিকটা অস্বচ্ছল তারা বিবেচনায় থাকবেন। বর্তমানে পরিশোধিত বেতন থেকে তাদেরকে টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে কোন ধরনের বেতন মওকুফের কথা ভাবছে না প্রতিষ্ঠান।

আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অভিভাবক ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম দেওয়ান জানানআইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের তিনটি শাখায় (মতিঝিল, বনশ্রী ও মুগদা) ২৬ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। করোনাকালে তাদের অধিকাংশ পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত। অনেকে বাসা ভাড়া দিতে না পেরে পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে গেছে। এমন অবস্থায় বেতন কমাতেই হবে। তিনি বলেন, এই স্কুলের ফান্ডে কোটি কোটি টাকা রয়েছে। স্কুলের আয়-ব্যয়ের হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেনীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী অর্থি বিনতে হাবিবের মা প্রিতি বেগম এসেছিলেন বড় মেয়ে সিনথিয়াকে নিয়ে। সে একাদশ শ্রেনীতে এইবার ভর্তি হয়েছে একই প্রতিষ্ঠানে। প্রিতি বেগম বলেনকরোনার এই সময়ে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। যেহেতু বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে না, তাই তাদের বেতন অর্ধেক নিলে সুবিধা হয়।

উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের এ লেভেলের ছাত্র তাহের হাসান। তিনি বলেন, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছি। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের পূর্বের মতই বেতন নিচ্ছেন।স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন কিছুটা মওকুফ করলে পরিবারের উপর চাপ কমতো।

উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের মনিং শিফটের ভারপ্রাপ্ত শাখা প্রধান এস এম মাসুদ বলেনএই মুহূর্তে টিউশন ফি না কমানোর সুযোগ নেই। কারণ, আমাদের ২০ বছরের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের ধরে রাখতে হবে। এখন বেতনের অভাবে  একজন অভিজ্ঞ শিক্ষককে হারিয়ে ফেললে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে। তবে যাদের দুই এক মাসের বেতন বাকি আছে বা কোন কারণ বশত দিতে সমস্যা হয় তাদের কাছ থেকে কোন জরিমানা নেওয়া হচ্ছে না যেটা করোনার আগে স্কুল রুলস অনুযায়ী নেওয়া হত। এই পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগতভাবে আর কোন পদক্ষেপ নেওয়ার নেই।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, আমরা গত জুন মাসের ১০ তারিখে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর লিখিতভাবে আবেদন করেছি। মন্ত্রণালয় থেকে এখনও পর্যন্ত কোন ধরনের সাড়া পাইনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে সকল শিক্ষাথীঅভিভাবক ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন মিলে সারাদেশে আন্দোলন ও বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করবো। যতদিন টিউশন ফি মওকুফ না করবে ততদিন এই আন্দোলন চালিয়ে যাব আমরা।