অপরাধ ও দুর্নীতি ১৮ অক্টোবর, ২০২০ ০৮:৪৮

৩৫ একর হাসপাতালের ৩০ একরই বেদখলে

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাসপাতালের দেয়াল পাঁচ জায়গায় ভেঙে বানানো হয়েছে সদর দরজা। বেলা ৩টা বাজতেই হাসপাতাল চত্বরে সবজি, মাছ, মুরগির বাজার বসে। সাততলা বস্তির বাসিন্দাদের বিনোদন ও অবসর যাপনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। মহাখালীতে হাসপাতালের ৩৫ একর জায়গার ৩০ একর দখল করে গড়ে উঠেছে সাততলা বস্তি। অবশিষ্ট ৫ একরের অবস্থাও জরাজীর্ণ।

মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, ১৯৬২ সালে মহাখালীতে ট্রপিক্যাল মেডিসিন ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন হাসপাতাল সংক্রামক রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা জেনারেল হাসপাতালে না রেখে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল করার দাবি জানায়। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রপিক্যাল মেডিসিন ইনস্টিটিউটের বদলে ৩৫ একর জমি এবং সাততলা ভবন নিয়ে যাত্রা করে মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল।

কিন্তু এখন হাসপাতালের সাততলা ভবন আর স্টাফ কোয়ার্টার নিয়ে সাকুল্যে হাসপাতালের দখলে আছে মাত্র ৫ একর জায়গা। আর বাকি ৩০ একর ঘিরে গড়ে উঠেছে বস্তি, কাঁচাবাজার ও খাবার হোটেল। এখন এই সাততলা বস্তির নামেই মানুষকে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল চেনাতে হয়।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের দেয়াল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে দোচালা-চারচালা টিনের খুপরি ঘর। একটা ঘরের সঙ্গে এক ইঞ্চি ফাঁক না রেখেই তোলা হয়েছে আরেকটা ঘর। এভাবে হাসপাতালের জায়গা দখল করে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে ঘিঞ্জি বস্তি। হাসপাতালের দেয়াল ভেঙে বানানো হয়েছে পকেট গেট।

হাসপাতালের ভিতরে আম গাছের চারপাশে বাঁধানো বেদিতে বসে খোশগল্পে মেতেছেন বস্তির নারী-পুরুষরা। মাঝের ফাঁকা জায়গায় চলছে খেলাধুলা। এর মধ্যেই চিকিৎসা নিতে আসছেন রোগীরা। হাসপাতালের এক গেট দিয়ে ঢুকে আরেক গেট দিয়ে বস্তির ভিতরে যাতায়াত চলে ২৪ ঘণ্টা।

বস্তির ভিতর গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ঘরেই ফ্যান চলছে, উচ্চস্বরে সাউন্ডবক্স থেকে ভেসে আসছে গান। এসব বস্তিঘরের কোনো হোল্ডিং নম্বর না থাকলেও রয়েছে গ্যাসের লাইন ও বিদ্যুতের মিটার। এ ছাড়া হাসপাতালের পাশের বিদ্যুতের পোল থেকেও অজস্র অবৈধ সংযোগ গিয়ে ঢুকেছে বস্তির ঘরগুলোতে। আর এসব লাইন থেকে ভাড়া নিয়ে চার্জ দেওয়া হচ্ছে এ রুটে চলাচলকারী ইজিবাইক আর মোটরচালিত রিকশায়।

ঢাকায় এ দুই যান চলাচল অবৈধ ঘোষণা করা হলেও মহাখালী জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের মোড় থেকে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল পর্যন্ত রুটে যাতায়াতের জন্য রয়েছে শুধু এই দুটি বাহন। বস্তিতে দুই রুম নিয়ে আছেন বাসিন্দা ফিরোজা বেগম। তিনি বলেন, ‘বড় রুমের ভাড়া ১৪০০ টাকা আর ছোট রুমের ৮০০ টাকা। পাশের ঘরের বাসিন্দার সঙ্গে ভাগে বিদ্যুতের বিল দিই ৩০০ টাকা।