নিজস্ব প্রতিবেদক: তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি আমলের শেষে ২০০৬ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও কম, যা শেখ হাসিনার আমলে ১২গুণ বৃদ্ধি পেয়ে এখন প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি বা পিপিপি ভিত্তিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩১তম অর্থনীতির দেশ।
তিনি বলেন, করোনা ও যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে এখন বিশ্বের প্রায় সব দেশই রিজার্ভের সঞ্চয় ভেঙ্গে চলছে। একটি দেশে ৩ মাসের আমাদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকাই যথেষ্ট, সেখানে আমাদের ৫ মাসের রিজার্ভ রয়েছে। সুতরাং রিজার্ভ নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ডিআরইউ সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ ও সদস্য লেখক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সমসাময়িক প্রসঙ্গে মন্ত্রী এ কথা বলেন। ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠুর সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নেতৃবৃন্দ রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে অথচ বিএনপি যখন ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ে তখন রিজার্ভ ছিল সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের কম, ৩.৪৬ বিলিয়ন ডলার। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন ক্ষমতা ছাড়ে তখন রিজার্ভ ছিল ৬.১ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটিকে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গেছেন এবং তখন করোনার কারণে আমদানি বন্ধ ছিলো। এখন করোনা যখন একটু কমেছে, বিনিয়োগ শুরু হয়েছে, আমদানি বেড়েছে, সে কারণে রিজার্ভ কিছুটা কমে ৩৬.৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। কমলেও যেখানে দেশে ৩ মাসের আমাদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকাই যথেষ্ট, সেখানে আমাদের ৫ মাসের রিজার্ভ রয়েছে।’
পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি দেশ এখন সঞ্চয় ভেঙ্গে খাচ্ছে অর্থাৎ রিজার্ভ থেকে খরচ করছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পৃথিবীর পঞ্চম অর্থনীতি ভারতে রিজার্ভের পরিমাণ গত দুই বছরের মধ্যে এখন সর্বনিম্ন। পাকিস্তান রিজার্ভ ভেঙ্গে খাচ্ছে। মাত্র ৫ লাখ মানুষের দেশ যে ভুটানের অর্থনীতি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বলে আমরা জানতাম, সেই ভুটান এবং এমন কি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ রিজার্ভ ভেঙ্গে খাচ্ছে। যে যুক্তরাষ্ট্র রিজার্ভ জ্বালানি কখনো ব্যবহার করে না, সবসময় আমদানির জ্বালানি ব্যবহার করে, জ্বালানি কেনার পয়সা যথেষ্ট না থাকার কারণে সেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের রিজার্ভ জ্বালানি খরচ করছে। ‘দিজ আর ডকুমেন্টেড এন্ড পাবলিশড এভরিহোয়ার’, ইন্টারনেটে খুঁজলে আপনারাও এ তথ্যগুলো পাবেন। সুতরাং এই বিশ্ব প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশ পরিচালনা করছেন তাতে অনেক দেশের তুলনায় আমরা ভালো আছি।’
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তুরস্ক থেকে পরশুদিন এসেছি, সেখানে ৮০% মূল্যস্ফীতি, পাকিস্তানে ৩০% মূল্যস্ফীতি, যুক্তরাষ্ট্রে ১০% এর বেশি, যুক্তরাজ্যে খাদ্যের ক্ষেত্রে প্রায় ২০% মূল্যস্ফীতি, আমাদের দেশে সেই পরিস্থিতি হয়নি, কয়েক মাস আগের তুলনায় একটু বেড়েছে। যেভাবে অনেকে ‘হৈ হৈ রৈ রৈ’ রব তুলে এই বিশ্ব পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, তখন আমি সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধ জানাবো মানুষের সামনে বিশ্ব পরিস্থিতিটা উপস্থাপনের জন্য। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে।’
মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীতে কোনো সংকট তৈরি হলে, দেশে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাক তৈরি হলে একটি পক্ষ এই হবে, সেই হবে বলে মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চারের অপচেষ্টা চালায়। করোনার শুরুতে তারা বললো ‘লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা যাবে, রাস্তায় মানুষের লাশ পড়ে থাকবে’। স্রষ্টার কৃপায় একজন মানুষও না খেয়ে মারা যায়নি। আবার যখন সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে করোনার টিকা আনা হলো, তখন বিএনপির পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে গুজব রটানো হলো যে এই ভারতীয় টিকায় কাজ হবে না, এটি গ্রহণ করবেন না। এটি কি একটি দায়িত্বশীল বিরোধী দল বলতে পারে! সেটির সমালোচনা তো দেখি নাই। পরে তারাই আবার কেউ গোপনে, কেউ প্রকাশ্যে টিকা নিলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যারা সাংবাদিক, যারা রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে কাজ করেন, যারা সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করেন, সমাজের দর্পণকে সচল রাখার জন্য কাজ করেন, তাদের এই বিষয়গুলো জনগণের সামনে উপস্থাপন করা প্রয়োজন। কারণ, আপনারা জাতির বিবেক হিসেবে কাজ করেন, সমাজকে সঠিক তথ্য দেন, সমাজকে সঠিকখাতে প্রবাহিত করেন।
জুরিবোর্ড গঠন করে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সাহিত্য পুরস্কার প্রদানের জন্য ডিআরইউকে অভিনন্দন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এই উদ্যোগের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের লেখনী আরো উৎসাহিত হবে। অনেক প্রথিতযশা সাহিত্যিকই জীবনের কোনো এক পর্যায়ে সাংবাদিকতা করেছেন। গল্প-উপন্যাস বিভাগে সাংবাদিক রাজীব নূর, কবিতা-ছড়া বিভাগে সাংবাদিক হাসান হাফিজ এবং প্রবন্ধ ও গবেষণা বিভাগে সাংবাদিক এম মামুন হোসেনের হাতে ডিআরইউ সাহিত্য পুরস্কার তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী। ৩৫জন সাংবাদিক পান লেখক সম্মাননা।
আমাদের কাগজ/ ইদি