আমাদের কাগজ রিপোর্ট: গত জানুয়ারিতে সবাইকে অবাক করে মাত্র ২০ বছর বয়সে ফুটবল ছাড়ার ঘোষণা দেন আনুচিং মগিনি। খাগড়াছড়ি থেকে উঠে আসা এই ফুটবলার দেশের নারী ফুটবলে অনেক সাফল্যের অংশ ছিলেন। গত বছর নেপালে অনুষ্ঠিত সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ী দলেও ছিলেন।
অবসর নেওয়ার আগে জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়েন আনুচিং। জানা যায় আনুচিংয়ের সঙ্গে আরও কয়েকজন ফুটবলার সেই সময় অভিমানে ফুটবল ছেড়ে দেন, ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ায়।
তবে গতকাল জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সিরাজ জাহান স্বপ্না ফর্মের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ফুটবলকে বিদায় বলে দিয়েছেন। ফেসবুকে তিনি সেই ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই নারী ফুটবল দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনও জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী মাস থেকে তিনি বাফুফের সঙ্গে নেই।
দেশের নারী ফুটবলে যে দ্রোহের আগুন জ্বলছে, স্বপ্না-ছোটনদের সিদ্ধান্তগুলো যেন সেটাই জানান দিয়ে যাচ্ছে। না হলে, ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে থাকা অবস্থায় একজন ফুটবলার কেন অবসরের সিদ্ধান্ত নেবেন? দীর্ঘ ১৪ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমে মেয়েদের ফুটবল এগিয়ে নিয়েছেন ছোটন। খুব সহজেই কি আর তিনি সেই বাঁধন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন!
মেয়েদের বয়সভিত্তিক থেকে শুরু করে জাতীয় দল সব আন্তর্জাতিক সাফল্যই এসেছে ছোটনের কোচিংয়ে। আজকের সাবিনা, সানজিদা, কৃষ্ণা, মারিয়াদের নিজের সন্তানের মতো লালন করে গড়ে তুলে দিয়েছেন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মন্ত্র। অথচ তার কাজের যোগ্য মূল্যায়ন করেনি বাফুফে।
এই তো কিছুদিন আগেও খোদ বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ভিনদেশি টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলির কাজের ফিরিস্তি গাইতে গিয়ে সরাসরি অস্বীকার করেছেন ছোটনের অবদান। নিজেদের মধ্যে আলোচনায় প্রায়ই সালাউদ্দিন বলে থাকেন, মেয়েদের ফুটবলে ছোটনের তেমন কোনো অবদান নেই। সবকিছুই নাকি করেছেন পল স্মলি। পল চলে গেলে নাকি ৯ মাসেই ভেঙে পড়বে মেয়েদের ফুটবলের অবকাঠামো।
এতদিন এসব মুখ বুঝেই সহ্য করেছেন ছোটন। নিজের কাজটুকুতেই দিয়েছেন সব মনোযোগ। তবে সহ্যেরও একটা সীমা থাকে। সেই ২০০৯ সাল থেকে মেয়েদের ফুটবলের দায়িত্বে তিনি। ভোরের সূর্য ওঠার আগে থেকেই শুরু হয় তার ব্যস্ততা। কখনো সিনিয়র জাতীয় দল, কখনোবা বয়সভিত্তিক দল। ক্লান্তিহীন চলে তাদের নিয়ে কাজ। এরপর তো আছে পল স্মলির অযাচিত হস্তক্ষেপ ও খবরদারি।
পদে পদে ছোটনদের পলের কাছে দিতে হয় জবাবদিহিতা। সেটাও মানা যেত, যদি কাজের মূল্যায়ন হতো, মিলত যোগ্য পারিশ্রমিক। সেটাও তো হচ্ছে না। এমনকি বাফুফের সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে সুইপার পর্যন্ত যখন ঈদ বোনাস পান, তখন কোচদের ভাগ্যে জুটে না উৎসব-ভাতা। এভাবে আর কতদিন? ছোটন তাই সরে দাঁড়াচ্ছেন?
আর স্বপ্না? রংপুর থেকে উঠে আসা এই ফুটবলার অবসর প্রসঙ্গে নিজে কিছু বলতে চাইছেন না। তবে তিনি ছোটনেরই আবিস্কার। সেই ছোটন বলছেন হতাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত স্বপ্নার, ‘খেলা না থাকায় হতাশা ছিল তার মধ্যে। হয়তো অনিশ্চয়তা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। গত বছর সাফ খেলা হওয়ার পর আর জাতীয় দলের কোনো খেলা নেই। সামনে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হওয়ার কথা। কিন্তু সেটাও অনিশ্চিত। এগুলোই হয়তো কারণ।’
কিছুদিন আগে বাফুফের ক্যাম্পে থাকা নারী ফুটবলাররা বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন বলে শোনা যায়। নারী ফুটবলারদের চাপা ক্ষোভগুলো আসলে ফুঁসে উঠতে শুরু করেছে। জ্বলছে দ্রোহের আগুন!
আমাদের কাগজ/টিআর