হঠাৎ করে গর্ভধারণ, খেয়াল রাখবেন যে বিষয়গুলো
ছবি - সংগৃহীত
আমাদের কাগজ ডেস্কঃ মা হতে চাওয়ার সিদ্ধান্ত খুব সহজ কিছু নয়। নিজের ভেতরে আরেকটি প্রাণ একটু একটু করে বড় করা, তাকে পৃথিবীর আলো দেখানো অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তবু পৃথিবীর শুরু থেকেই মায়েরা এই চ্যালেঞ্জটি হাসিমুখে নেয়। তবে পরিকল্পনা ছাড়া কোনোকিছুই গোছানো হয় না।
মা হওয়ার জন্য আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ভালো। এতে গর্ভধারণের পর বেশ কিছু জটিলতা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। অনেক সময় গর্ভধারণের পরিকল্পনার সময় কিছু ভুল হয়ে যায়। এর ফলে গর্ভধারণের পর নানা সমস্যায় পড়তে হয়। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের নানারকম শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তাই মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, কিছু পরিকল্পনা আগে থেকেই করা ভালো।
চলুন জেনে নিন, গর্ভবতী হওয়ার আগে যে যে বিষয়গুলোতে মনযোগী হওয়া উচিত-
প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
গর্ভধারণের পরিকল্পনা করলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। শুরুতেই একজন বিশেষজ্ঞের কাছে বেসিক চেকআপ করিয়ে নেওয়া ভালো। এতে আপনি এখন গর্ভধারণের জন্য শারীরিকভাবে প্রস্তুত কি না তা বুঝতে পারবেন। চিকিৎসক আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা, ওষুধপত্র খেলে সেগুলো খাওয়া যাবে কি না সবকিছু দেখবেন। কিছু ওষুধ গর্ভস্থ শিশুর জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। সেরকমটা হলে চিকিৎসক পরবর্তী করণীয় বলে দেবেন।
ভিটামিন এ এবং ফলিক এসিড
বিশেষজ্ঞরা শিশু গর্ভে আসার একমাস আগে থেকে গর্ভধারণের প্রথম তিনমাস ফলিক এসিড খাওয়ার পরামর্শ দেন। শিশুর সঠিক গঠনের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেইসঙ্গে মাল্টিভিটামিন খাওয়ারও পরামর্শ দিতে পারে। তবে এগুলো কেবল চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করবেন। কারণ ভিটামিন অতিরিক্ত গ্রহণ করলে তা শিশুর জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে। কোনোভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করবেন না।
খেতে হবে স্বাস্থ্যকর খাবার
কেবল মা হওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, সবার জন্যই প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর খাবার। তবে মা হওয়ার ক্ষেত্রে এদিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে। কারণ মায়ের খাবার থেকে গর্ভস্থ শিশুও পুষ্টি পেয়ে থাকে। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে যেন আপনার শরীর প্রস্তুত থাকে। দিনে অন্তত আড়াই কাপ সবজি, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, দুই কাপ ফল, শস্য জাতীয় খাবার ইত্যাদি খেতে হবে। সেইসঙ্গে খেতে হবে প্রোটিনযুক্ত বিভিন্ন খাবার।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
গর্ভধারণের আগেই উচ্চতা এবং বয়স অনুযায়ী ওজন সঠিক রাখতে হবে। কারণ ওজন বেশি বা কম হলে দুটিই গর্ভধারণের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সেখান থেকে দেখা দিতে পারে নানা জটিলতা। তাই গর্ভধারণের পরিকল্পনা করলে শুরুতেই সঠিক ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ব্যায়াম
অনেকের ধারণা গর্ভধারণের পরিকল্পনা থাকলে ব্যায়াম এড়িয়ে যেতে হয়। এটি একদমই ঠিক নয়। প্রতিদিন অন্তত আধাঘণ্টা সময় ব্যায়ামের জন্য বরাদ্দ রাখুন। তবে ভারী কোনো ব্যায়াম নয়, এই সময়ের জন্য উপযুক্ত ব্যায়াম বেছে নিন। বেছে নিতে পারেন যোগব্যায়াম। তবে এসময় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া কোনো ব্যায়াম করা ঠিক নয়। আর কোনো ব্যায়াম না পারলে দিনে দশ থেকে বিশ মিনিট হাঁটুন। নিজেকে সচল ও কর্মমুখর রাখুন। এতে অনেক বেশি নির্ভার থাকবেন।
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন
শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও যত্নশীল হতে হবে। গর্ভধারণের পর হরমোনের নানা পরিবর্তন ও নানা চাপের কারণে হবু মায়ের মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল নাও থাকতে পারে। মা হওয়ার পরেও থাকতে পারে এই ঝুঁকি। তাই মানসিক প্রস্তুতি না থাকলে গর্ভধারণের মতো এত বড় সিদ্ধান্ত নেবেন না। নিজের মন ও শরীর আগে প্রস্তুত করুন। স্বামী ও স্ত্রী দুজনকেই নিতে হবে এই মানসিক প্রস্তুতি। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
আর্থিক বিষয়েও খেয়াল রাখুন
আর্থিক বিষয় কখনো মুখের কথায় সমাধান হয় না। একটি নতুন প্রাণ পৃথিবীতে আনা মানে আরও অনেক খরচ বৃদ্ধি। আপনাদের আর্থিক সঙ্গতির দিকটিও নজরে রাখুন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, খাবার, ওষুধ, ধাত্রী বা হাসপাতাল খরচের বিষয় মাথায় রাখুন। এটি এড়িয়ে যাবেন না।
মা হওয়ার পরিকল্পনা শুরু করতে হলে সবচেয়ে আগে নিজের শারীরিক সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। বেশ কিছু রোগ জিনে প্রচ্ছন্ন থাকে। যা শিশুর জিনে গিয়ে প্রকট হওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই এই সময় মায়ের পাশাপাশি বাবাকেও কিছু পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
ডায়াবিটিস, হাঁপানি, কিডনির সমস্যা, থাইরয়েড, হৃদরোগের মতো জটিল সমস্যা থাকলে অবশ্যই গর্ভধারণের আগে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।
এ ছাড়াও ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা থাকলে তা নিয়ে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা জরুরি।
আমাদের কাগজ/এমটি