২০০৪ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন কামরুল হাসান খোকন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও তার পরবর্তী সময়ে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ওপর তৎকালীন সরকারের দালাল পুলিশ বাহিনী যে নির্যাতন ও হামলা চালায় তারই একটি ঘটনা তিনি তার ফেসবুকে লেখেন। তার পোস্টটি নিচে তুলে ধরা হল-
শ্রদ্ধেয়া শ্রদ্ধেয়া আইভি রহমান -এর মৃত্যু পরবর্তী
বায়তুল মোকাররম মসজিদে জানাযার নামাজ শেষে পুলিশ নামাজে অংশগ্রহণকারীদের আচমকা লাঠিচার্জ করতে থাকে। এর-ই জেরে বিক্ষুব্ধ জনতার ক্রোধে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কিছু গাড়ি ভাংচুর হয়। জোট সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী আরও রুদ্রমূর্তি ধারণ করে বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। সেদিন পথচারী-সহ দলীয় কর্মীদের অনেকেই আহত হন। পুলিশ এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা দের আসামী করে মামলা দায়ের করে।
আমি তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক। কঠিনতম দুঃসহ সে দিনগুলোতেও প্রতিদিন দাপ্তরিক কাজকর্মের দায়িত্ব পালনে পার্টি অফিসে যাই। সিনিয়র নেতৃবৃন্দের মধ্যে শ্রদ্ধেয় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ভাই, জাহাঙ্গীর কবীর নানক ভাই, মির্জা আজম ভাই, শাহে আলম মুরাদ ভাই ২১ আগষ্ট পরবর্তী দিন থেকেই অফিসে যেতেন। অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পার্টি অফিস কন্টিনিউ করতেন। বেরুবার সময় গোয়েন্দা ও পুলিশের চোখ আড়াল করে বেড়িয়ে পড়তেন।
আরো পড়ুন: ২১শে আগস্টের হামলা একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাস: সজীব ওয়াজেদ
সেদিন ছিল ২৯ আগষ্ট। আমি সকাল সকাল অফিসে ঢুকি। বিকেলে মুক্তাঙ্গনে চার দলীয় জোটের সমাবেশ চলছিল। সন্ধ্যের আগে দিয়ে ছাত্রলীগ অফিসের পেছন অংশের জানালার ভেতরের গোপন ছোট জানালা দিয়ে ইম্পেরিয়াল হোটেল পেরিয়ে জিপিও’ র সামনে পৌঁছুতেই গোয়েন্দা কর্মকর্তার ডাক এড়াতে পারিনি। আমাকে ঘিরে তারা বৃত্ত তৈরী করেছিল। মাঝখানে আমাকে রেখে সামনে-পেছনে সাদা পোশাকধারী, এগুচ্ছিলাম সচিবালয় রাস্তায়। নুর হোসেন স্কয়ার পেরুতেই মাইক্রোবাসে বস্তার মত ফেলা হল আমাকে।
প্রথমে ডি.বি অফিস। ঘন্টা তিনেক পর রমনা থানায়।
ও.সি রমনা তখন মাহাবুব। সভাপতি লিয়াকত ভাই ইতোমধ্যে জানলেন, জেনে গেলেন মা-দাদা-স্বজন সহকর্মী সহ সবাই।
আওয়ামী লীগ তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জলিল ভাই রমনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফোন দিলেন। আমাকে গ্রেপ্তার করবার কারণ জানার জন্যে। জেনে রিকোয়েষ্ট করেন যাতে রিমান্ডে নেয়া না হয়। রাতেই গ্রেপ্তার করে আনা হল ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় অফিসের অফিস সহকারী মিন্টু ভাই, যুবলীগ অফিসের দীনেশ’ দা কে।
আরো পড়ুন: কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষনের অভিযোগ নোবেলের বিরুদ্ধে
রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের নামে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন। আজগুবি প্রশ্নসব ওসি মাহাবুবের। যাক সেসব। প্রশ্নমালা আর মাইরচোট নিয়ে বলা যাবে আরেক লেখায়। সকালে চালান দেয়া হল। গ্রেপ্তার দেখানো হল।
আজকের তারিখে - শ্রদ্ধেয়া আইভি রহমান এর নামাজে জানাযা শেষে গাড়ি ভাংচুরের মামলায়। আসামী আমি সহ তিনজন। মিন্টু ভাই, দীনেশ দা। ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী আপা, নজিবুল্লাহ হিরু ভাই, সাগর ভাই আমাদের জামিন চাইলেন। না-মঞ্জুর। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকি রাত ১১ টা নাগাদ।
অন্য একদিন জেল-জীবন নিয়ে লেখা যাবে।
( ২০০৪-এর আজকের তারিখে দেয়া মামলায়
গ্রেপ্তার হয়েছিলাম - প্রাসঙ্গিক বিধায় এ লেখার অবতারণা। )