সম্পাদকীয় ২৮ জুলাই, ২০১৯ ১০:২৮

বুড়িগঙ্গা দূষণের শেষ কোথায়?

মো: শাহিন রেজা 

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে  প্রতি বছর  শিক্ষা সফরের আয়োজন থাকতো। কিন্তু ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার পর অনেক দিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হচ্ছিল না। রোজার ভিতরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র জানালেন ঈদের পরে আমরা ঘুরতে যাবো।

আমাদের স্থান ঠিক হয় পুরান ঢাকা। মিরপুর থেকে আমি, তমা আপু ও আলিম ভাই রওনা হলাম পুরান ঢাকার পথে । দুপুরে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে রওনা হলাম লঞ্চঘাটের উদ্দেশ্যে । কিছুক্ষন নদী আর প্রকৃতি দেখলাম। প্রচণ্ড গরম ছিল ঐদিন। এর মাঝে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। থেমেও গেল হঠাতই।

এরপর আমরা রওনা হলাম জিনজিরার উদ্দেশ্যে নৌকায় চেপে। আমরা যখন লঞ্চঘাটে তখন লক্ষ্য করলাম বাতাসের সাথে দূর্গন্ধ ভেসে আচ্ছে। আমরা দেখলাম নদীর পানি অনেকটা কালো রংয়ের।

মুঘল আমলে ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী ছিল। তখন যাতায়াত ও বাণিজ্যের কাজে বুড়িগঙ্গা জরুরি ছিল। এ নদীর পানি তখন মানুষজন পানও করত।

বুড়িগঙ্গাকে ঢাকার প্রাণ বলা হলেও বর্তমানে বুড়িগঙ্গা শত সমস্যায় জর্জরিত। জনসংখ্যা বাড়ছে আর তাতে বাড়ছে ভূমি দখল। গার্হস্থ্য বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে।  মিল ও কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য, চিকিৎসা বর্জ্য, প্লাস্টিক, তেলও বুড়িগঙ্গা দূষণের জন্য দায়ী। এর ফলে পানিতে কমে যাচ্ছে অক্সিজেনের পরিমাণ। আর বিপন্ন হয়ে উঠছে জলজ জীব।

নৌকা চলতে থাকলো। আমরা আলোচনা শুরু করলাম বুড়িগঙ্গা নদী নিয়ে। নদী দূষণ নিয়ে তমা আপুই প্রথম কথা শুরু করলেন। তিনি জানালেন, ছোটবেলায় তিনি নদীতে গোসল করেছেন। অথচ ঢাকার অনেক খাল-নদী আজ মৃত প্রায়। ঢাকাতে বেড়ে ওঠা ও শিক্ষকতা পেশার সাথে যুক্ত থাকার কারণে তমা আপু  ঢাকার নদীর দুরবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানালেন।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে ঢাকার প্রধান চার নদী বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীতে প্রতিদিন প্রায় ১৫,০০০ ঘন মিটার বর্জ্য মিশ্রিত পানি গিয়ে মিশছে আশে পাশের কলকারখানা থেকে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ শিল্পবর্জ্য প্রায় ২০০টি উৎস মুখ দিয়ে নদীতে পড়ছে। নদীর নাব্যতা রক্ষায় ও উৎসমুখগুলো বন্ধে ২০০৯ সালে সরকার টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করলেও এই উৎসগুলো বন্ধ করতে পারেনি।

ঢাকার আশেপাশে শিল্পকারখানাগুলোতে তরল বর্জ্য পানি শোধনাগার নেই। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মপরিকল্পনার একটি প্রতিবেদন বলছে, বুড়িগঙ্গার পানিতে ক্রোমিয়াম, নাইট্রেট, সিসাসহ অপরিশোধিত রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে।


পারফরম্যান্স আর্টে নদীতে প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের বার্তা

বুড়িগঙ্গা দূষণ রোধে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে: হাই কোর্ট

নদী নিয়ে ‘কানামাছি’ বন্ধ করতে হবে: হাই কোর্ট

প্লাস্টিক দূষণ বন্ধের ডাক ‘নদীকর্মী’দের


 

আমার মতে, কিছু জরুরি পদক্ষেপ বুড়িগঙ্গাকে নতুন জীবন দান করতে পারে।

– মানুষ তাদের জীবিকার তাগিদে ঢাকা আসছে। ফলে ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এতে করে দূষিত হচ্ছে  নদী। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধি হ্রাস করতে হবে। সেই জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

– পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজ সিস্টেম বাড়াতে হবে এবং পানির প্রবাহ যেন বৃদ্ধি পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে।

– নদীতে বর্জ্য না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে। এজন্য সরকার ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে হতে দ্রুত।

– নদী উন্নয়ন কাজে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

– ট্যানারিশিল্প হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তর করা এবং পরিকল্পিত ভাবে বর্জ্য নিঃষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

– ভূমি দস্যুদের হাত থেকে দখল করা নদীর অংশ উদ্ধারের পাশাপাশি নিয়মিত এই তদারকি চালিয়ে যেতে হবে।

বুড়িগঙ্গার জলপথে  দশ মিনিটে আমাদের নৌকা জিঞ্জিরায় পৌঁছে গেল। কিছুক্ষণ আশেপাশে ঘোরাঘুরির পর আমরা রওনা হলাম মিরপুরের উদ্দেশ্যে। প্রকৃতিতে ঘোরাঘুরি আর নদী ভাবনার মধ্যে দিয়ে শেষ হলো আমাদের দিনটি।