কৃষি ২৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০৪:৫৯

ব্যস্ত সময় পার করছে মৌচাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এখন চলছে শীতকালীন শস্য সরিষার মৌসুম। এই মৌসুমে সরিষা ক্ষেতের মধু সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত কুমিল্লার মধু চাষিরা। ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে তা বাজারজাত করার মাঝে নেই কোন শ্বাস ফেলার জো।

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা ঘুরে দেখা যায় মৌচাষিদের বিশাল কর্মযজ্ঞ। সরিষা মধু সংগ্রহ করতে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে শুরু করেছে মৌচাষিরা।

সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে রংপুর সদরের বাসিন্দা ওয়াজেদ আলী জানান, মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয় বাক্স। যার উপরের অংশটা কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো থাকে। বাক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি সাতটি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো বিশেষ কায়দায় লাগানো থাকে এক ধরনের সিট। পরবর্তীতে বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। পাশাপাশি বাক্সগুলোর ভেতরে দেওয়া হয় রানি মৌমাছি। যাকে ঘিরে আনাগোনা করে হাজারো পুরুষ মৌমাছি। রানির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা। একটি রানি মৌমাছির বিপরীতে প্রায় তিন থেকে চার হাজারের মতো পুরুষ মৌমাছি থাকে একেকটি বাক্সে।

এরপর মৌমাছিতে টুইটম্বর বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে লাগোয়া স্থানে সারিবদ্ধভাবে রেখে দেওয়া হয়। পরে সেসব বাক্স থেকে সরিষা ক্ষেতের ফুলে ফুলে ভো ভো শব্দ তুলে ঘুরতে থাকে প্রশিক্ষিত মৌমাছিরা। এভাবে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে চলে আসে বাক্সে।

তিনি জানান, প্রতিবছরের এ সময়টাতে তারা এভাবে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। একই ধারাবাহিকতায় এবারও সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন তারা। সম্প্রতি তারা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা থেকে বগুড়ায় এসেছেন। থাকবেন দুই সপ্তাহ। গেল কয়েকদিন আবহাওয়া ভালো না থাকায় তারা আরও বাড়তি কয়েকদিন থাকতে পারেন এ স্থানে।

পঞ্চগড় সদরের বাসিন্দা মৌচাষি মো. মনির হোসেন জানান, তারা কয়েকজন মিলে দুপচাঁচিয়া উপজেলায় মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন। উপজেলার চৌমুনী গ্রামের বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতে ১৪০টি বাক্স বসিয়েছেন তারা। এসব বাক্স থেকে প্রতি আট দিনে গড়ে প্রায় ৫৬০ কেজির মতো মধু পাওয়া যায়।

kk

উপজেলার বাজারদিঘী, আলতাব নগর, কালুচসহ বিভিন্ন এলাকার মৌচাষিরা জানান, সরিষা ফুলের মধু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররাও কেনেন। চাহিদা অনুযায়ী মধু বিক্রি করেন তারা। চাহিদা বেশি হলে দাম কিছুটা বেশি পান। আবার তুলনামূলক চাহিদা কম হলে দামও কিছুটা কম পান। সরিষার মধু জমে যায় বলেও যোগ করেন তারা। প্রতিকেজি সরিষা ফুলের সব থেকে ভালো মানের মধু পাইকারি ২০০-২৫০ টাকা ও মধ্যম মানের ১৭৫ টাকা দরে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে ২৩ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ২৬ হাজার ৭১৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে এসব সরিষা ফুল থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের মাধ্যমে অনেককেই মধু সংগ্রহের কিছু সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনেক চাষি জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মধু সংগ্রহ করছেন।

সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু গুণে মানে অত্যন্ত ভালো। এ ফুলের মধুতে কোনো প্রকার ভেজাল থাকে না। একেবারে খাঁটি। আর এভাবে অনেকটা সহজ প্রক্রিয়ায় মধু আহরণের মাধ্যমে চাষিরা বাড়তি আয় করতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।