অপরাধ ও দুর্নীতি ২৯ জানুয়ারি, ২০২১ ১১:৩৩

ইন্টার্ন চিকিৎসকের হাতে নার্সের যৌন হয়রানি

ডেস্ক রিপোর্ট

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রশিক্ষণার্থী এক চিকিৎসকের হাতে একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। ঘটনাটি সংশ্লিষ্টরা সেবা ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের কাছে গোপন করেছে। সে কারণে ব্যাখ্যা দিতে রাজশাহীর চার কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে তলব করা হয়েছে।

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি তাদের ঢাকায় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।

অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও শিক্ষা) মোহাম্মদ আবদুল হাই স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঘটনার একটি সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদনসহ চার কর্মকর্তাকে ঢাকায় হাজির হতে বলা হয়েছে।

এদিকে ঘটনা গোপন করার অভিযোগে অধিদপ্তরে রাজশাহী চার কর্মকর্তাকে তলব করলেও বিভাগীয় সহকারী পরিচালক (নার্সিং) পদটি ফাঁকা রয়েছে প্রায় দুমাস ধরে। অন্য তিন কর্মকর্তা হলেন- জেলা পাবলিক হেলথ নার্সেস কর্মকর্তা ফ্রান্সিসকা সরেন, রামেক হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক আনোয়ারা খাতুন এবং উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক সুফিয়া খাতুন।

অধিদপ্তরের চিঠিতে বলা হয়েছে, জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় অধিদপ্তরে অবহিত করার জন্য মাঠপর্যায়ে এই চার পদের কর্মকর্তা আছেন। কিন্তু তারা একজন নার্সরর ওপর হওয়া যৌন হয়রানির বিষয়টি অধিদপ্তরকে জানাননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে অধিদপ্তর বিষয়টি অবহিত হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সেবা অধিদপ্তরকে না জানানোর কারণে যৌন হয়রানির শিকার সিনিয়র স্টাফ নার্সের সুরক্ষার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্ণিত চার পদের কর্মকর্তাদের বিষয়টি অধিদপ্তরকে না জানানো দায়িত্বে চরম অবহেলা, অদক্ষতা ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল যা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। তাই সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদনসহ তাদের অধিদপ্তরে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয় চিঠিতে।

এ বিষয়ে কথা বলতে জেলা পাবলিক হেলথ নার্সের বিভাগের কর্মকর্তা ফ্রান্সিসকা সরেনকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।

যৌন হয়রানির বিষয় অধিদপ্তরকে না জানানোর বিষয়ে রামেক হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক আনোয়ারা খাতুন বলেন, এটা তো আমাদের ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা কী করব সেটা আমাদের বিষয়।

অধিদপ্তরে তলবের বিষয়ে তিনি বলেন, চিঠি পেয়েছি। কী করা যায় দেখছি।

উল্লেখ্য, রামেক হাসপাতালে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) গত ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি মামুন-অর-রহমান নামে এক প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স। মামুন সরকারি হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক নন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানেসথেসিয়া ডিপ্লোমা করছেন। সেখান থেকেই কোর্স সম্পন্ন করতে আসেন রামেক হাসপাতালে।

ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করা ডা. মামুন চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত। ছুটি নিয়ে তিনি অ্যানেসথেসিয়া কোর্স করছেন। তবে এরই মধ্যে তাকে প্রশিক্ষণকর্ম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটিতে একজন নার্স, বাকি চারজন চিকিৎসক। তারা ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন নার্সরা। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের রামেক হাসপাতালের ব্যানারে ২৬ জানুয়ারি তারা হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেছেন।

রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, তদন্ত কমিটি এখনও তদন্ত শেষ করতে পারেনি। তারা আরও সময় চেয়েছে। সময় দেয়া হয়েছে।

অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী নার্সিং বিভাগ আলাদা তদন্ত করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলাদা তদন্ত হওয়ার কথা না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে তদন্ত করছে সেই প্রতিবেদনই হয়তো তারা অধিদপ্তরে নিয়ে যাবেন। তবে চাইলে তারা আলাদাভাবেও তদন্ত করতে পারেন।