মুক্তমত ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০৪:৫৯

রাজারহাটে শীতের সমাপ্তিতে ঋতুরাজ বসন্তের বার্তা

এ.এস.লিমন

মাঘ মাসের আর বাকি কয়েক দিন তারপরেই আগমন ঘটবে ঋতুরাজ বসন্তের। শীতের সমাপ্তিতে বসন্তের বার্তা নিয়ে প্রকৃতি রাঙিয়ে ফোটে শিমুল ফুল। তবে এবার শীতের বুড়ি বিদায় নিতে না নিতেই এবার রাজারহাটে রাস্তার পাশে ফুটতে শুরু করেছে শিমুল ফুল। উড়ে বেড়াচ্ছে নানা প্রজাতির পাখি। পাখির কিচিরমিচির শব্দে গাছতলার নিচে গেলেই ভিন্ন এক অনুভূতিতে হারিয়ে যাবে যেকেউ!

আজ বৃহস্পতিবার ১১ই ফেব্রুয়ারী সকালে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার মেকুরটারী গ্রামে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় চোখে পড়ে শিমুল ফুল ফোটার দৃশ্য। ২৫ থেকে ২৮ ফুট লম্বা মাঝারি আকারের দুটি গাছ। খুব বেশি শাখা-প্রশাখা নেই। পাতা ঝরে পুরো গাছের শাখে এখন শিমুল ফুলের কুঁড়ি। সেই কুঁড়ি ফুটে গাঢ় লাল রঙের আভা নিয়ে বেরুচ্ছে অপরূপ শিমুল ফুল।

দু একটি ফুল পুরোপুরি ফুটেছে। তবে গাছের তলায় ঝরে পড়ার সেই চিরচেনা দৃশ্যে চোখ জুড়াতে অপেক্ষা করতে হবে আরও সপ্তাহখানেক। আলাদা কোনো গন্ধ না থাকলেও পথচারীদের বিমোহিত করে শিমুল ফুল। আর সূর্যের খরতাপে সেদিকে তাকালে চোখে ভেসে ওঠে অনন্য সৌন্দর্য্য।

রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শিমুল গাছের দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলেন আর্দশ বি.এল.উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান আশু। এগিয়ে গিয়ে তাঁর কাছে অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কালের বিবর্তনে আগুন ঝরা ফাগুনে চোখ ধাঁধানো গাঢ় লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল গাছ এখন বিলুপ্তপ্রায়। এক যুগ আগেও রাজারহাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আনাচে কানাচে আর রাস্তায় প্রচুর শিমুল গাছ দেখা যেতো। প্রতিটি গাছে গাছে ফোটা শিমুল ফুলই স্মরণ করিয়ে দিতো বসন্তের আগমন। কিন্তু অনেকদিন পর আজ এখানে শিমুল গাছে পাখির কিচিরমিচির শুনলাম। সেজন্য তাকিয়ে দেখছিলাম। এখনও সেভাবে ফুল ফোটে নি। তবুও শিমুল ফুলের দৃশ্য দেখতে দারুণ লাগে।

শিমুল গাছের মালিক সাইদুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পুরো শীতে গাছগুলো পাতা ঝরায়। ফাল্গুনের প্রথম সপ্তাহে কুঁড়ি এবং মাঝামাঝি সময়ে পুরো গাছজুড়ে ফুল আসে। কখনও কখনও একটু আগে-পরেও ফুল ফোটে। ফুলের পাপঁড়ি ১০-১২ সেন্টিমিটার হয়। পরে মোচাকৃতির ফল ধরে এবং বৈশাখ মাসে তা ফেটে বীজ ও তুলা বের হতে থাকে। একটি বড় ধরনের গাছ থেকে তুলা বিক্রি করে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আগের তুলনায় এখন শিমুলের তুলার দাম অনেক বেড়ে গেছে। তাই গাছ দু'টি কেঁটে ফেলি নি।

কুঁড়িগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুস ছালাম বলেন, এই শিমুল ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত। অন্যান্য গাছের মত এ গাছ কেউ শখ করে লাগায় না। নেওয়া হয় না কোন যত্ন। অযত্ন আর অনাদরে প্রাকৃতিকভাবেই এ গাছ বেড়ে ওঠে। এ গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর খুব প্রিয় খাদ্য। বালিশ, লেপ ও তোষক তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই।

তিনি আরো বলেন, অথচ বর্তমানে মানুষ এ গাছকে তুচ্ছ মনে করে কারণে অকারণে কেটে ফেলছে। অতীতে ব্যাপকহারে নির্মাণ কাজ, টুথপিকসহ নানা ধরনের প্যাকিং বাক্স তৈরি ও ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হলেও সেই তুলনায় রোপণ করা হয়নি শিমুল গাছ। ফলে আজ বিলুপ্তির পথে শিমুল গাছ।