শিক্ষা ১ মার্চ, ২০২১ ০৯:০৮

‘আমাকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হয়েছে’

ডেস্ক রিপোর্ট

গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির ঘটনায় শাস্তি হিসেবে পদাবনতি হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান বলেছেন, তাকে ষড়যন্ত্র করে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে তাকেবলির পাঁঠাবানানো হয়েছে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাননি বিষয়ে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কঠোর নির্দেশ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন বিষয়টি নিয়ে তিনি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেও আছেন

আজ সোমবার ( মার্চ) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সামিয়া রহমান জানান, তার বিরুদ্ধে একটি মহল নানা রকমের ষড়যন্ত্র অপপ্রচার চালাচ্ছে এর ফলে তার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক মর্যাদা নষ্ট হচ্ছে

অধ্যাপক সামিয়া রহমান তার যৌথ নামে লেখা হলেও কী কারণে তিনি নিরপরাধ বিষয়টি তুলে ধরেন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমি প্রশাসনের চাপে মুখ বন্ধ রেখেছিলাম গত চার বছর ধরে যে লেখার কারণে আমাকে শাস্তি পেতে হলো এটা আমার লেখাই নয় আমি শুধু আইডিয়া দিয়েছিলাম মারজানকে আমি যে লেখা জমা দিয়েছি এটা ডিন অফিস, ট্রাইব্যুনাল প্রমাণ করতে পারেনি এমনকি আমার কাছে রিভিউয়ের কপিও আসেনি মারজান আমার ছাত্র ছিল এরপর সহকর্মী হয় মারজান তখন নতুন শিক্ষার্থী, সে আমার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে একটি প্রকাশনা বের করতে চেয়েছিল আমি তাকে শুধু আইডিয়া দিয়েছিলাম সে স্বীকার করেছে এটি তার অনভিজ্ঞতাবশত অনিচ্ছাকৃত ভুল আমার প্রশ্ন মারজান নিজে তদন্ত কমিটির কাছে জমা দেওয়া রিভিউ করার কথা বলার পরও কেন দালিলিক প্রমাণ অষ্পষ্ট বলে তদন্ত কমিটি? সংক্রান্ত প্রমাণস্বরূপ মারজানকে দেওয়া আমার মেইল পর্যন্ত তদন্ত কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল

ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে তিনি মেইলটি পাঠান সামিয়া আরও বলেন, ওই প্রতিবেদনে আমার কোন স্বাক্ষর নেই আমার স্বাক্ষর ছাড়া কেন এটি ছাপানো হলো? ডিন অফিসে লেখা জমা দেওয়ার পর, সেটি সম্পাদনা পরিষদ যাচাই-বাছাই করেন, তারপর রিভিউয়ারে কাছে যায়, রিভিউয়ার সেটি বাতিল বা গ্রহণ করলে বা সংশোধনের সুপারিশ করলে সেটি আবার সম্পাদনা পরিষদ বরাবর লেখকের কাছে যায় লেখকের সংশোধনের পর সেটি আবার সম্পাদনা পরিষদ যাচাই-বাছাই করে ছাপার যোগ্য মনে করলে লেখাটি প্রকাশ করেন এই লেখাটি প্রকাশনার জন্য এডিটোরিয়াল বোর্ডে দাখিল থেকে প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত কোনো ধাপেই আমার কোনোরকম দালিলিক প্রমাণ তারা দেখাতে পারেননি এমনকি ট্রাইব্যুনাল পর্যন্ত বলছে ন্যায় বিচার হয়নি অথচ প্রতিহিংসা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতির শিকার হলাম আমি ২০১৭ সালে ফেব্রুয়ারি আমি ডিন অফিসে গিয়ে লেখাটি প্রত্যাহারের আবেদন জানাই যেটির কপিও তদন্ত কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল সিন্ডিকেটে বিষয়টি তোলার জন্য তৎকালীন ভিসি . আরেফিন স্যার তাকে বারবার বলেন, আমি নিজেও . ফরিদ উদ্দীনকে বারবার সিন্ডিকেটে বিষয়টি তোলার অনুরোধ করলেও তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রাখেন সাত মাস

সামিয়া রহমান আরও বলেন, আমি এমনই রাজনীতির শিকার যে- . আরেফিন স্যারকে ভিসির পদ থেকে সরানোর দুদিনের মাথায় আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, এবার তিনি বিষয়টি সিন্ডিকেটে তুলবেন আর . আরেফিন স্যার নাকি তাকে ১০ মিনিটের মাথায় ডিন পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন মারজান তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল এসব কিছুর প্রতিশোধ হবে এটি

তিনি বলেন, একটি অফলাইন জার্নাল শিকাগো ইউনিভার্সিটির কথিত অ্যালেক্স মার্টিনের কাছে চলে যায়? যার সম্পর্কে কোনো খোঁজ-খবর এমনকি কেউ তদন্ত কমিটিরও কেউ দেয়নি আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি এই নামে কোন ব্যক্তি নেই সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাইব্যুনাল নিজেই স্বীকার করেছে বিষয়টি

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কীভাবে ট্রাইব্যুনাল আর সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ভিন্ন হয়? কেন ট্রাইব্যুনালের আহ্বায়ক নিজে গণমাধ্যমকে বলেন, ন্যায় বিচার হয়নি প্লেজারিজম হয়নি কেন আমাকে না দেখিয়ে আমার নামে লেখা প্রকাশ করে? কেন রিভিউয়ার এডিটরের শাস্তির সুপারিশ হওয়ার পরও বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়?

সামিয়া রহমান বলেন, তদন্ত কমিটির সদস্য পরিবর্তনের অধিকার আমার ছিলো এটি পরিবর্তনের জন্য ২০১৯ সালে চিঠি দেওয়া হলে বর্তমান ভিসি সেটি গ্রহণ করেননি আর তদন্ত শেষ না করেই আমাকেই দোষী সাব্যস্ত করে কেন গণমাধ্যমে কথা বলেন তারা? পর্যন্ত অন্তত তিন বার রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত, ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত, তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত চেয়েছি আদালতে যাওয়ার জন্য, এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো কিছুই দিচ্ছে না

তিনি আরও বলেন, আমি ২০১৬ সালে আমেরিকা যাচ্ছিলাম এসময় ডিন অফিস থেকে আমাকে ফোন দেওয়া হয় বলা হয়, আপনার পাঠানো লেখা হারিয়ে গেছে আমি যাতে পুনরায় তা পাঠিয়ে দেই কিন্তু আমি তখন জানাই আমি কোনো লেখা পাঠাইনি আমি ফোন করে মারজানকে লেখাটি বন্ধ করতে বলি মারজান জানায়, রিভিয়ার কমিটি এটি গ্রহণ করেছে এডওয়ার্ড সাঈদ মিশেল ফুকোর উদ্ধৃতি দেওয়া তাই জানতে চাই সঠিকভাবে দেওয়া হয়েছিলো কী-না? মারজান আমাকে আশ্বস্ত করে সব ঠিকভাবে দেওয়া হয়েছে আমি তাকে বলি, আমি আমেরিকা থেকে না আসা পর্যন্ত যেনো লেখাটি না ছাড়ে

এছাড়াও যৌথভাবে ছাপানো লেখাটি দেখিয়ে তিনি বলেন, এই লেখায় দুই লেখকের উদ্ধৃতি দেওয়া হয় যদিও নিয়ম অনুযায়ী ফুট নোট দেওয়া উচিত ছিল মারজান সেটি করেনি যদিও লেখার শেষে রেফারেন্সে তাদের নাম দিয়েছে একটি একটি গবেষণা প্রবন্ধে ফুটনোট দেওয়া অবশ্যই উচিত ছিল

সামিয়া রহমান আরও বলেন, আমি ষড়যন্ত্রেরে শিকার লেখাটি আমার না, আমি শুধু আইডিয়া দিয়েছি আমাকে না জানিয়ে ছাপা হলো আমি নিজেই তদন্ত কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য আবেদন করলাম, সেখানে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হলো আমি রাজনীতির শিকার এতোদিন তদন্ত চলায় আমি চুপ ছিলাম এখন আমি আদালতে যাবো আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে যা যা করা প্রয়োজন করব