জাতীয় ৬ মার্চ, ২০২১ ০১:১৬

আইনমন্ত্রীর সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি

ডেস্ক রিপোর্ট

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সামনে শুক্রবার (০৫ মার্চ) সংঘর্ষের পর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। তবে পুলিশ বলছে, ঘটনা অনুসন্ধান করে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে শুক্রবারের ঘটনার জন্য বর্তমান মেয়র এমরান উদ্দিন জুয়েল এর পক্ষ এবং তার প্রতিপক্ষ মেয়র প্রার্থী এমএ আজিজ একে অপরকে দায়ী করেছেন। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আইনমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে পাল্টা পাল্টি স্লোগান দেওয়া নিয়ে আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হকের সামনে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় দলীয় নেতাকর্মীরা। এক পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন বর্তমান মেয়র এমরান উদ্দিন জুয়েল এর কর্মী সমর্থকেরা, অন্যপক্ষে নেতৃত্ব দেন মেয়র প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এম আজিজ সহ তার সমর্থকেরা।

দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যেই বেলা পৌনে ১১টায় মন্ত্রী উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে তার নির্ধারিত সভায় যোগদান করেন। পরে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারন করায় মন্ত্রী তার বক্তব্য অসম্পূর্ণ রেখেই সংঘর্ষের মাঝেই করা পুলিশি প্রহরায় সভাস্থল ত্যাগ করেন। পরে পুলিশ দুই ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে সংঘর্ষে অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনার জন্যে এক পক্ষ অপর পক্ষকে দায়ী করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

এ ঘটনা সম্পর্কে কসবা যুবলীগের সভাপতি এম এ আজিজ বলেন, আমরা শুক্রবার মন্ত্রী মহোদয়কে স্বাগত জানানোর জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ করে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য উপজেলা পাশের একটি স্থান থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেন মেয়রের লোকজন। আমার সাথে কারো কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমাকে হেয় করতেই পরিকল্পিতভাবে আমার লোকজনের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয় নিজেই দেখেছেন কারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছে। আমি এ ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। 

এদিকে এ ঘটনায় বক্তব্য নেওয়ার জন্য কসবার পৌরসভার মেয়র এমরান জুয়েলকে পাওয়া যায়নি।

তবে জুয়েলের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত কসবা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মনির হোসেন বলেন, কসবা পৌরসভা মেয়র এমরান উদ্দিন জুয়েলের দুই থেকে তিন হাজার নেতাকর্মী নিয়ে মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য উপজেলা চত্বর এলাকায় জড়ো হয়েছিল। কিন্তু যুবলীগের সভাপতি এম এ আজিজের সমর্থকেরা লোকজনের ওপর মোটরসাইকেল তুলে দেয়। পরে এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। পরবর্তীতে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। এর মধ্যে আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন করেন। মন্ত্রীর সাথে আমি ছিলাম। উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক তিনিও ছিলেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন এমএ আজিজের লোকজন বাজারে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। বিশৃঙ্খলার কারণে মন্ত্রী মহোদয় বক্তব্য সমাপ্ত করতে পারেননি। আমি এ ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের বিচার দাবি করছি। কারা অস্ত্র নিয়ে এসেছিল। কারা মোটরসাইকেল পুড়িয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত হলে ভালো হয়।

মন্ত্রীর সামনে এমন ঘটনাকে লজ্জাজনক ও অনঅভিপ্রেত আখ্যায়িত করেন উপজেলা সুজনের সভাপতি সোলেমান খান। তিনি বলেন, রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবে। কিন্তু অস্ত্র প্রদর্শন বা মহড়া কোনোভাবে গ্রহণ যোগ্য নয়। রাজনৈতিক কর্মীদেরকে আরেও সহিষ্ণু হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে, প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন এবং হামলা ভাঙচুরের ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও থানায় এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি।

কসবা থানার ওসি মো. আলমগীর ভূঁইয়া জানান, অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো পক্ষই অভিযোগ করেনি। তাই এখনো আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

প্রায় এক বছর পর মন্ত্রী তার নিজ নির্বাচনী এলাকায় একদিনের সফরে আসেন। এ সময় তিনি সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন শেষ বিকেলে ট্রেনযোগে ঢাকায় চলে যান।

প্রসঙ্গত, গতকালের হামলা চলাকালে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়। ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয় অন্তত দশটি মোটরসাইকেলে। দফায় দফায় সংঘর্ষের কারণে কসবা পৌর এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। এ সময় আতঙ্কিত লোকজন দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়।