Notice: Trying to access array offset on value of type null in /home/u863453615/domains/amaderkagoj.com/public_html/includes/frontend/contents/post.php on line 46

ইসলামে গোসলের বিধান 

নিউজ ডেস্ক

তিনটি পদ্ধতিতে মানুষ পরিপূর্ণ শারীরিক পবিত্রতা অর্জন করে। পবিত্রতা অর্জনের এসব মাধ্যম হলো অজু, গোসল ও তায়াম্মুম। গোসল হলো সর্ববৃহৎ ও পরিপূর্ণ পবিত্রতা; যেটি এমন একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ পবিত্রতা অর্জনের পাশাপাশি শারীরিকভাবে মানুষ পবিত্রতা ও প্রশান্তি পেয়ে থাকে। ক্লান্তি দূর হয়, মন প্রফুল্ল হয়, শয়তানের ওয়াসওয়াসা দূর হয়, নফস কুলুষমুক্ত হয়। ইবাদতের আগ্রহ তৈরি হয়। আল্লাহ তাআলা নিজে পবিত্র, তিনি পবিত্রতাকে ভালোবাসেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘এবং যারা পবিত্র থাকে, তাদের আল্লাহ ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২২২)

গোসল কী?
গোসল শব্দটি আরবি। গোসল শব্দের অর্থ হচ্ছে সমস্ত শরীর ধোয়া। 
 ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় পবিত্রতা ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে পবিত্র পানি দ্বারা সমস্ত শরীর ধোয়াকে ‘গোসল’ বলা হয়। হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি পবিত্রতার উদ্দেশ্যে গোসল করে, তার পাপগুলো ঝরে যায় এবং ঝরে পড়া প্রতিটি পানির ফোঁটা ও কণা একেকটি নেকি রূপে গণ্য হয়।’

গোসলের প্রকারভেদ ও নিয়ম

১. ফরজ গোসল

জানাবাত তথা যৌন মিলনের পর; মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধের পর; সন্তান জন্মদানের রক্ত বন্ধ হওয়ার পর পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করা ফরজ। গোসল ফরজ হলে বিনা কারণে দেরি করা ঠিক নয়। একবার গোসল করার পর উল্লেখিত কোনোটি সংঘটিত না হলে গোসল ফরজ হবে না।

গোসলের ফরজ তিনটি

> কুলি করা,

> নাকে পানি দেওয়া,

> সমস্ত শরীর পানি দিয়ে ধোয়া যাতে চুল পরিমাণও শুকনো না থাকে।

২. সুন্নত গোসল

জুমার নামাজের জন্য গোসল; দুই ঈদের নামাজের জন্য গোসল; হজ ও ওমরার ইহরামের জন্য গোসল এবং আরাফাহ দিন দুপুরের গোসল।

গোসলের সুন্নতগুলো হলো

> গোসলের আগে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সম্পন্ন করা;

> শরীরে বা কাপড়ে কোনো নাপাক লেগে থাকলে তা পরিষ্কার করা;

> গোসলের আগে অজু কর;

> পবিত্রতা অর্জন ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে গোসলের নিয়ত করা;

> গোসলের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা;

> ডান হাতে পানি নিয়ে উভয় হাত কবজি পর্যন্ত ধোয়া;

> লজ্জাস্থান ধোয়া;

> শরীরের কোথাও নাপাকি থাকলে তা পরিস্কার করা;

> উভয় হাত ভালো করে ধুয়ে নামাজের ওজুর ন্যায় ওজু করা;

> ভালোভাবে কুলি করা;

> সমস্ত শরীর ভালো করে ধোয়া। প্রথমে ডান কাধের ওপর তিনবার পানি ঢালা, দ্বিতীয়বার বাম কাঁধে তিন বার পানি ঢালা, এরপর মাথা ও সমস্ত শরীরের ওপর তিনবার পানি ঢালা; নারীদের কানে ও নাকে অলংকারাদি থাকলে তার ছিদ্রে পানি পৌঁছানো এবং আংটি, চুড়ি বা বালা ইত্যাদি নাড়াচাড়া করে ওই জায়গায় পানি পৌঁছে দেওয়া। শরীরের যেসব অঙ্গে সাধারণত স্বাভাবিকভাবে সহজে পানি পৌঁছায় না; যেমন- কান, আঙুলের ফাঁকা, বগলের নিচ, চোখের কিনারা, চুলের গোড়া ইত্যাদি ওই সব জায়গায় সযত্নে পানি পৌঁছানো।

> গোসলের স্থান থেকে সরে গিয়ে উভয় পা ধোয়া। এসবই হলো গোসলের সুন্নত কাজ।

উল্লেখ্য, নখে নেইলপলিশ লাগানো থাকলে তা সম্পূর্ণ ওঠানো ছাড়া অজু-গোসল শুদ্ধ হবে না, পানির স্পর্শ পরিপূর্ণভাবে থাকতে হবে। কাপড়ে নাপাক লেগে থাকলে তিনবার কচলে ধুতে হবে এবং প্রতিবার ধোয়ার পর এমনভাবে নিংড়াতে হবে, যাতে ঝুলিয়ে রেখে দিলে তা থেকে পানির ফোঁটা টপকে না পড়ে

৩. মুস্তাহাব গোসল

ইসলাম গ্রহণের জন্য, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর অর্থাৎ ১৫ বৎসর হওয়ার পর, মস্তিষ্ক বিকৃতি ও সংজ্ঞাহীনতা দূর হওয়ার পর, সিঙ্গা লাগানোর পর, মৃত ব্যক্তির গোসল, ধর্মীয় উৎসব, মদিনা মুনাওয়ারায় প্রবেশকালে, মুযদালিফায় অবস্থানের জন্য ১০ জিলহজ সুবহে সাদিকের পর, মক্কায় প্রবেশকালে, তাওয়াফে জিয়ারতের জন্য, সূর্য ও চন্দ্রগ্রহনের সময়, ইস্তিস্কার নামাজের জন্য, ভয়ের নামজের জন্য গোসল করা মুস্তাহাব।

গোসল ওয়াজিব হওয়ার কারণ

১. ইহতিলাম- সহবাস ছাড়া নারী-পুরুষের বীর্য বের হলে, তা যেভাবেই হোক;

২. স্ত্রী সহবাস করলে;

৩. স্বপ্নদোষ হলে,

৪. হস্তমৈথুন করলে,

৫. হায়েজ বা ঋতুস্রাব বন্ধ হলে,

৬. নেফাস বা সন্তান প্রসব পরবর্তী ইদ্দতকালীন সময় শেষ হলে।

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রত্যেক কাজ ও কর্মে ইসলামি অনুশাসন মেনে চলা অত্যন্ত আবশ্যক। তাই শারীরিক পবিত্রতায় গোসলের বিধানগুলো যথাযথভাবে মেনে চলা  জরুরি। আল্লাহ তাআলা পবিত্রতা অর্জনকারীকের ভালোবাসেন। এ  ঘোষণাটি কোরআনুল কারিমে এভাবেও এসেছে-

فِیۡهِ رِجَالٌ یُّحِبُّوۡنَ اَنۡ یَّتَطَهَّرُوۡا ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الۡمُطَّهِّرِیۡنَ

‘সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা তওবা : আয়াত ১০৮)

আমাদের কাগজ//টিএ


আরো খবর