সারাদেশ ৭ অক্টোবর, ২০২২ ০২:৩৩

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

দালালদের দৌরাত্মে রোগীদের ভোগান্তি

সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি কোটি মানুষের উন্নত চিকিৎসার ভরসাস্থল।  প্রতিদিন হাসপাতালের নির্ধারিত আসনের প্রায় তিন গুণ রোগীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সেবার ক্ষেত্রে দেশসেরা সরকারি হাসপাতাল হওয়ার সাফল্যও রয়েছে ওসমানীর। সেবার মান বৃদ্ধির জন্য দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে নানা কার্যক্রম চললেও চোর ও দালাল সিন্ডিকেটের কারণে সব অর্জন যেন ম্লান হতে চলেছে। শক্তিশালী এ সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় রোগীরা। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও যেন পেরে উঠছে না তাদের সঙ্গে। কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীর সঙ্গে অধিক দর্শনার্থী আসায় চোর ও দালালদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে এদের দৌরাত্ম্য বন্ধে এবার দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতে যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সার্বক্ষণিক গলায় ঝুলিয়ে রাখতে দর্শনার্থীদের জন্য পরিচয়পত্র তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, জানালেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া। রাতে ওসমানী হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডের সামনের খালি জায়গায় বিছানা পেতে শুয়ে আছেন শত শত মানুষ। কেউ গভীর নিদ্রায় মগ্ন, কেউ জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। দেখে মনে হচ্ছিল পুরো হাসপাতাল যেন একটি আবাসিক হোটেল। 

কথা হয় সুনামগঞ্জের শাল্লা থেকে আসা এক রোগীর স্বজন তানভীরের সঙ্গে। রাতে হাসপাতালে অবস্থান প্রসঙ্গে জানালেন, তার ভাতিজা গাছ থেকে পড়ে পা ভেঙেছে। তাকে নিয়ে পরিবারের চার সদস্য হাসপাতালে এসেছেন। হোটেল ভাড়া বাঁচাতে রাতে ওয়ার্ডের বাইরে তারা বিছানা পেতেছেন। দিনে হাসপাতালে শোনা যায় রোগীদের নানা অভিযোগ। দক্ষিণ সুরমার জালালপুর থেকে অসুস্থ বাবাকে এনে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন জাহেদ আহমদ নামে এক যুবক। ভর্তির পর চিকিৎসকরা কয়েকটি পরীক্ষা লিখে দেন। এরপর এক যুবক এসে দেখা করে জাহেদকে বলে এ পরীক্ষাগুলো ওসমানীতে হবে না। দ্রুত রিপোর্ট পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষাগুলো করান ওই যুবক। পরে জানতে পারেন পরীক্ষাগুলো নামমাত্র মূল্যে ওসমানীতেই করা যেত।

সূত্র জানান, গেল চার বছরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম অনেক বেড়েছে। যুক্ত হয়েছে নতুন সেবা। সেবার মান বৃদ্ধির জন্য পরিচালক তাঁর টিম নিয়ে দিনের পাশাপাশি রাতেও নিয়মিত হাসপাতাল পরিদর্শন করছেন। এত কিছুর পরও দালালদের কারণে কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে না ওসমানী। এ প্রসঙ্গে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে কারও অভিযোগ থাকার কথা নয়। চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা তাদের সাধ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে রোগীদের সেবা করছেন। হাসপাতালের পরিবেশ ও সেবার মান বৃদ্ধির জন্য ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের উৎপাত ও বহিরাগত অ্যাম্বুলেন্স চালকদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়েছে। দালালমুক্ত করতে অনেকবার অভিযান চালানো হয়েছে। দালালদের আটক করে মামলা দেওয়া হয়েছে।

পরিচালক বলেন, হাসপাতালে একজন রোগীর সঙ্গে পাঁচ-ছয় জন পর্যন্ত দর্শনার্থী আসেন। আইসিইউ বিভাগের সামনে তারা বাসাবাড়ির মতো পরিবেশ তৈরি করে ফেলেন। ওয়ার্ডগুলোর অবস্থা তো আরও শোচনীয়। নিয়ন্ত্রণহীন দর্শনার্থীদের কারণে চোর ও দালাল শনাক্ত করা কঠিন। দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও পুরোপুরি সুফল মেলেনি। এবার দর্শনার্থীদের জন্য পরিচয়পত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একজন রোগীর বিপরীতে একজন দর্শনার্থী ভিতরে ঢুকতে পারবেন। পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে না রাখলে তাকে জরিমানা করা হবে। এতে সহজে চোর, দালাল ও দুষ্কতিকারী চিহ্নিত করা যাবে।