অর্থ ও বাণিজ্য ১০ অক্টোবর, ২০২২ ০৬:০৮

নিরাপদ-সবুজ পোশাক শিল্পে আইটিসির মর্যাদা পেল বাংলাদেশ

ডেস্ক রিপোর্ট: ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার (আইটিসি) এর স্বীকৃতি অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ এবং সবুজ পোশাক কারখানার দেশ হিসেবে মর্যাদা পেল বাংলাদেশ।

আইটিসির ওয়েব সাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়াও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) কে  ‘ইফেকটিভ ম্যানেজমেন্ট অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন’  ক্যাটাগরিতে সেরা হিসেবে মনোনীত করা হয়।

সংস্থাটি জানিয়েছে, রফতানিমুখী তৈরি পোশাক উৎপাদনের নিরাপদ কর্ম পরিবেশ হিসেবে অনেক ভালো অনুশীলন আছে বাংলাদেশে। পোশাক খাত নিরাপদ এবং সবুজ কারখানার দেশে পরিণত হওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আগামী ১৩ অক্টোবর এক ওয়েবিনারের আয়জন করেছে সংস্থাটি। আয়োজনে  বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসানকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ওয়েবিনারে পোশাক খাতের ভালো অনুশীলন এবং বিজিএমইএর পক্ষ থেকে নেওয়া বিভিন্ন সময়ের পদক্ষেপের বিস্তারিত তুলে ধরবেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা বাড়াতে সবুজ ভবনে বিনিয়োগ করছেন আমাদের উদ্যোক্তারা। এর ফলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বর্তমানে একটি নিরাপদ শিল্প হিসেবে বিশ্বে রোল মডেল তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ এবং সবুজ পোশাক কারখানার দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ, এটা সবার জন্য গর্বের। এ ধরনের খবর শিল্প ও দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে বলে মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালক ও মুখপাত্র মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘গ্রিন ফ্যাক্টরিতে বাংলাদেশ সবার শীর্ষে। এটা একদিকে আনন্দের, অন্যদিকে মর্যাদার। এটি দেশের পোশাক খাতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।’

তিনি বলেন, ‘একসময় কারখানার মালিকরা চিন্তা করতেন, এত টাকা খরচ করে কেন এলইইডি (লিড) সার্টিফিকেট নেবেন? কিন্তু এখন তারা বুঝতে পারছেন, সাসটেইনেবল হতে গেলে এর কোনও বিকল্প নেই। তিনি মনে করেন, পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা ও প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে লিড সার্টিফিকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মূলত, সাধারণ স্থাপনার চেয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ৫-২০ শতাংশ খরচ বেশি হয়। এছাড়া ইউএসজিবিসি লিড সনদ পেতে স্থাপনা নির্মাণে অন্তত ৯টি শর্ত পরিপালন করতে হয়। 

এই সনদ পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিংবা পুরনো ভবন সংস্কার করেও লিড সনদের জন্য আবেদন করা যায়। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি।

এর আগে, গত বছর (২০২১ সালে) সবুজায়নে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) পক্ষ থেকে লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড তথা বিশ্বে প্রথম ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল অ্যাওয়ার্ড পায় বিজিএমইএ।

বৈশ্বিক পোশাক শিল্প জগতে বিজিএমইএ-ই হচ্ছে একমাত্র সংগঠন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই পদক অর্জন করে। এছাড়াও, বিশ্বের শীর্ষ ১০ পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার মধ্যে ৯টির মালিক বাংলাদেশ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১৭৩টি সবুজ পোশাক কারখানাকে হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন বিজিএমইএ। সংখ্যায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সবুজ পোশাক কারখানা বাংলাদেশে অবস্থিত। দীর্ঘদিন শীর্ষস্থানটি দখল করে আছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৫৪টি কারখানা প্লাটিনাম রেটিং, ১০৫টি গোল্ড রেটিং ও ১০টি সিলভার রেটিং পেয়েছে। এ ছাড়া চারটি কারখানা কোনও রেটিং পায়নি, তবে সনদ পেয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ইউএসজিবিসি এই কারখানাগুলোকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে। সবুজ কারখানার তালিকায় বাংলাদেশের পরের অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া।

আইটিসি ছাড়াও বিশ্বের বেশ কিছু সংস্থা পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল-ইউএসজিবিসি। তারা ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। লিড হলো লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন। এর আগে, ২০১২ সালের মে মাসে বাংলাদেশের ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও বিশ্বের প্রথম এলইইডি প্লাটিনাম সার্টিফায়েড কারখানা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর পরের বছর, ২০১৩ সালে রাজধানীতে রানা প্লাজা ভবন ধসে ২ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হওয়ার পাশাপাশি প্রাণ হারান ১ হাজার ১৩৪ জন। সেই ঘটনার পর, সবুজ উদ্যোগে প্রচুর বিনিয়োগ শুরু করেন পোশাক উদ্যোক্তারা।

আমাদের কাগজ//জেডআই