জাতীয় ১৮ অক্টোবর, ২০২২ ০১:২০

তথ্য সচিবের অবসর: নেপথ্যে কি এমন রাজনীতি !

ইউসুফ দিপু: সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’র ধারা ৪৫ অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি হতে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেনকে।তবে তার এই অবসরের বিষয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে নানা রকম গুঞ্জন। অবসরের বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোন কারন উল্লেখ করা হয়নি।

মকবুলের এই বাধ্যতামূলক অবসরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত অনেকের মনে নানারকম কৌতূহল ও প্রশ্ন জন্মেছে। কী এমন ঘটনা ঘটল সেই নেপথ্যের রহস্য খুজছে সবাই।

তবে বাধ্যতামূলক অবসরের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়াও বিএনপি সরকারের আমলেও এ ধরনের অবসর দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান সরকারের শুরুর দিকে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হেয় করে কবিতা লেখার দায়ে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় তৎকালীন তথ্য সচিব আ ত ম ফজলুল করিমকে (আবু করিম)।

মকবুল হোসেনকে হঠাৎ করে একেবারে চাকরি থেকে সরিয়ে দেয়ার পিছনে নিশ্চয় সুনির্দিষ্ট কোন না কোন কারণ অবশ্যই আছে বলছে অনেকে। এদিকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাসান মাহমুদ জানিয়েছেন প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে অবগত থাকলেও অবসরের কারন তার জানা নেই তার।

আবার বিদায়ের আগে সাংবাদিক সম্মেলনে মকবুল হোসেনের কাছে কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি সরকারের প্রতি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। আমার জ্ঞানের ভেতর নেই, আমার কোনো অপরাধ ছিল কি না বা কোন অপরাধের কারণে অবসরে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু এটি সরকার পারে, আইনের ভেতরেই পারে; সেজন্য এটি কার্যকর।

তবে অবসরের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি যে গুঞ্জনটি শোনা যাচ্ছে সেটি হলো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি। এ প্রসঙ্গে মকবুল হোসেন জানান, বিএনপি ও সরকার বিরোধী কোনো কাজে তার কোনোরকম সম্পর্ক ছিল না। তারেক রহমানকে সরাসরি কখনো দেখিনি এবং তাকে দেখার কোনো ইচ্ছেও তার নেই। যদি এমন কোনো কর্মকাণ্ডের কোনো তথ্য পাওয়া যায়, সেটি সাংবাদিকরা প্রচার করতে পারবেন।

তিনি লন্ডনে গিয়ে কারও সঙ্গে বৈঠক করেছেন; এমন একটি কথা শোনা যাচ্ছিল। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদায়ী তথ্য ও সম্প্রচার সচিব বলেন, আমরা লন্ডনে গিয়েছি গত মার্চে। আমরা একটা টিম নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের আশিকুন্নবী আছেন, আমাদের প্রেস। তাকে জিজ্ঞাসা করেন তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমি তারেক রহমানকে কোনোদিন দেখেছি বলে মনে হয় না। তাকে দেখার ইচ্ছাও আমার নেই।

যে সব অভিযোগ এসেছে সেগুলো বস্তুনিষ্ঠ হলে সাংবাদিকদের প্রকাশ করার অনুরোধ তিনি বলেন, যদি প্রমাণ হয় বিএনপির সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল; আমি যেখানেই থাকি আমাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে, সে বিএনপির লোকের সঙ্গে কানেকশন রাখবে, এটা হয় না। আমি জানি না কেন আমাকে অবসরে পাঠানো হলো! কিন্তু সরকারের এ রাইট আছে। এ বিষয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অতৃপ্তি দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যেকটি মানুষ নিজেই সবচেয়ে বড় বিচারক। সুতরাং আমি সেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে সবসময় প্রস্তুত।

আবার তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মকবুলের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষ অনেক কথাই বলে। অনেক কিছুই শোনা যায়। শোনা কথা বিশ্বাস না করাই ভালো। আমার পক্ষ থেকে মন্ত্রীর সাথে কেন দূরত্ব থাকবে? আমরা তো সবাই মিলেই কাজ করি।    দূরত্বের কথা কেন আসছে আমি জানি না। আমি উনাকে সম্মান করি।

তার অবসরের প্রেক্ষাপটে প্রশাসনের অনেকে মনে করেন, সচিব পদে এমন কাউকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না, যাকে ভবিষ্যতে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়ে বাড়ি পাঠাতে হবে। সঙ্গতকারণে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলবে- তাহলে এমন সচিব বানালেন কেন? অতএব নিয়োগ দেওয়ার সময়ই সব দিক বিচার-বিশ্লেষণ করে সমগ্র চাকরিজীবন সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া উচিত। যদি চাকরিজীবনে কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারি কিংবা গুরুতর কোনো অভিযোগ ওঠে, তাহলে তাকে আর যাই কিছু হোক না কেন, সচিব করা ঠিক হবে না।

প্রসঙ্গত, চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মকবুল হোসেনকে সরকার অবসরে পাঠিয়ে দিয়েছে। মকবুল বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১০ম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি  বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। মাঠ প্রশাসনে সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো এ সরকারি কর্মকর্তা।

আমাদের কাগজ/ ইহা