দুর্যোগ ২৫ অক্টোবর, ২০২২ ০৩:৫৫

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: ক্ষয়ক্ষতিতে চট্টগ্রাম ও বরিশালের পর ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে ভেঙে পড়েছে গাছ ও ঘরবাড়ি। ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে ঢাকা বিভাগ। আর এরমধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকাতেই ক্ষয়ক্ষতি বেশি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকালে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাতভর তুমুল বৃষ্টির ফলে রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল ও নয়াবাজার এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকার শতাধিক দোকানে পানি উঠেছে। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

রাজধানীর কাওরানবাজার, শাহবাগ, ঢাবি ক্যাম্পাস, আগারগাঁও, ধানমন্ডি লেকসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে পড়ে আছে ছোট-বড় গাছ। এসব গাছ সড়াতে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। রাজধানীর সড়কগুলোকে গণপরিবহনের চাপ কম থাকলেও যেসব সড়কে গাছ ভেঙে পড়েছে সেগুলোতে জানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে গুলিস্তান ভাসানী স্টোডিয়ামের পাশে একটি গাছ ভেঙে পড়ায় পল্টন মোড় থেকে দীর্ঘ গাড়ির লাইন হয়ে আছে। এদিকে শান্তিনগরের দিকেও গাড়ির চাপ কিছুটা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, একদিনে সারাদেশে ঝড় ও বৃষ্টিতে ৩২৯টি স্থানে গাছ ভেঙে পড়েছে। এরমধ্যে ঘরের ওপর পড়েছে ১৮টি গাছ। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ৩৪টি। তার মধ্যে ১৭টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঢাকায়। সড়ক দুর্ঘটনা চারটি, নৌ দুর্ঘটনা একটি, অন্যান্য দুর্ঘটনা একটি। এছাড়া সারাদেশের ১৫টি স্থানে মাইকিং করে সচেতনা কার্যক্রম অংশ নেন ফায়ার সার্ভিস।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন তথ্য বলছে, দুই সিটিতেই তিন থেকে চার’শ ছোট-বড় গাছ ভেঙে পড়েছে। এরমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কুইক রেসপন্স টিম ঝড়ে উপচে পড়া প্রায় দুই শতাধিক গাছপালা অপসারণ করেছে বলে জানান। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এখনও নির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও আনুমানিক দেড়-দুইশ গাছ ভেঙে পড়েছে বলে জানান।

ফায়ার সার্ভিসের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১৬টি, বরিশালে ৬৪টি, ঢাকায় ৫৬টি, খুলনায় ২৬টি, রাজশাহী ১৭টি, সিলেটটে ৪টি, ময়মনসিংহে ৩টি এবং রংপুরে একটি গাছ ভেঙে পড়েছে। আর ঘরের ওপরে খুলনায় ১০টি, বরিশালে ৪টি, ঢাকায় ৩টি এবং চট্টগ্রামে একটি গাছ ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। 

এই ঝড় ও বৃষ্টির মধ্যে সারাদেশে ৩৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে চারটি, নৌ দুর্ঘটনা একটি এবং ১৩ জনকে আহত উদ্ধার ও তিন জনকে মৃত উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে চট্টগ্রাম নগরী ও নিম্নাঞ্চল। নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় বেড়িবাঁধ টপকে আশপাশের এলাকায় পানি উঠেছে। নগরীর বাকলিয়া, খাতুনগঞ্জ, চাকতাই, আছাদগঞ্জ, ফিরিঙ্গিবাজার, পাথরঘাটা হাজী নজুমিয়া লেইন, ইপিজেড, খলিফাপট্টি, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, কাট্টলী রাসমনিরঘাট, জেলেপাড়াসহ বেশকিছু স্থানে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ঢাকাসহ সারাদেশে নিহত বেড়ে দাড়িয়েছে ১৬ জনে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ভোর পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। নিহতের মধ্যে কুমিল্লায় তিনজন, সিরাজগঞ্জে দুজন, ভোলায় চারজন, গোপালগঞ্জে দুজন ও নড়াইল, ঢাকা, শরীয়তপুর, বরগুনায় একজন নিহত হয়েছেন।

আমাদের কাগজ//জেডআই