জাতীয় ২ নভেম্বর, ২০২২ ০৮:৫৬

সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিরোধীরা অশান্ত রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশ্বিক মন্দার কারণে দেশের বর্তমান ক্রান্তিকালের সুযোগ নিয়ে বিরোধীরা অশান্ত রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে সংসদে অভিযোগ তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। বিএনপি-জাতীয় পার্টিসহ সব বিরোধী দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশ যখন ক্রান্তিলগ্নে পড়ে তখন তাদের মাঝে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে না। বরং এই সুযোগ নিয়ে অশান্ত রাজনৈতিক পরিবেশ কীভাবে সৃষ্টি করা যায় সেটাই যেন তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাহলে অনুভূতিটা কোথায়? ক্রাইসিসের সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থাকে ঘোলাটে করা; আর ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টার প্রবণতা পরিহার করতে হবে।

আজ বুধবার সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে স্পিকার . শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। মুজিবুল হক তাঁর প্রশ্নে বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে কী-না প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বললেন; আমার প্রশ্ন এখানে? দেশ যখন এমন ক্রান্তিলগ্নে পড়ে তখন বিরোধী দলে যারা আছেন; আমি সকলের কথা বলছি- তাদের মাঝে ওই উদ্বেগ দেখিনি। ঐক্যের কথা শুধু মুখে বললে হবে না। নিজ থেকে পাশে দাড়াঁতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো এলাকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে কে আমাদের ভোট দিল, আর কে দিল না, সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয় না। গণমানুষের জন্য আমাদের উন্নয়ন। গণমানুষের কথা চিন্তা করেই কাজ করা হয়। ঠিক তেমনি দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার বসে থাকেনি। অনেকে সমালোচনা করে যাচ্ছেন, বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু একমুঠ চালও দিয়ে বা হাত দিয়ে পানি থেকে কাউকে উদ্ধার করতে দেখা যায়নি। আমরা সবসময়ে ঐক্যে বিশ্বাস করি। যারা আসবেন তাদের সঙ্গে আমরা কাজ করবো। এতে কোন সন্দেহ নেই।

সংসদ নেতা বলেন, যুদ্ধের ভয়ারহতা পণ্য বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন। যদিও অনেকে তাঁর সমালোচনাও করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন- এভাবে কথা বললে মানুষ ভয় পেয়ে যাবে। ভয় নয়, মানুষকে সতর্ক করার জন্য এটা বলা হয়েছে। শুধু সতর্ক নয়, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কষ্টে ভুগছে। পণ্যমূল্য পরিবহনের জন্যও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেখান থেকে খাদ্য বা তেল কেনা হত; যুদ্ধের কারণে তা কেনা যাচ্ছে না। বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করা হয়েছে। সেখান থেকে যাতে খাদ্য, জিজেল, তেল, সার আনা যায় সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমন কী এলএনজি আমদানির জন্য পদক্ষেপ নেওয়াও হয়েছে।

গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশ থেকে এখনও পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে। ইউরোপ, আমেরিকা, গ্রেট ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিটি জায়গায় জ্বালানি তেলের অভাব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সব জায়গায় লোডশেডিং। গ্রেট ব্রিটেনে বিদ্যুতের দাম ৮০ ভাগ বেড়েছে। তারা সব কিছু রেশন করে দিচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে যাতে প্রভাবটা না পড়ে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

বাজার থেকে পণ্য গায়েব হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে, মানুষের দুর্ভোগের কথাটা চিন্তা করে না। এজন্য তারা অনেক সময় পণ্য লুকিয়ে রাখে এবং কৃত্রিম উপায়ে জিনিসের দাম বাড়ায়। এতে অনেকের ইন্ধনও থাকতে পারে। তবে সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থায় তাদের সঙ্গে সঙ্গে খোজা হয়, ধরা হয়। এরই মধ্যে অনেক পণ্য কিন্তু খুঁজে বের করা হয়েছে এবং তা বাজারজাত করা হয়েছে। বিষয়ে সব সময় সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। এভাবে পণ্য কোনো না কোনোভাবে পণ্য লুকিয়ে রেখে মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ চলমান থাকবে।

বিএনপির রুমিন ফারহানা সম্পূরক প্রশ্নে একটি শীর্ষ স্থানীয় জাতীয় দৈনিকের রিপোর্ট, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির প্রতিবেদন ওয়ার্ল্ড ফুড প্রজেক্টের রিপোর্টের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বাংলাদেশে ৬৮ শতাংশ মানুষ খাবার কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে খাবারের দাম সবচেয়ে বেশি। দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় থাকা ৪২টি দেশের একটি বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চান।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার কিছু লোক থাকে এবং সেইসব লোকের কথাই তিনি (রুমিন) বলেছেন। যে পত্রিকাগুলোর নাম নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে একটা পত্রিকা তিনি কখনও পড়েন না। কারণ তারা সবসময় উল্টো দিকে থাকে। এরা কখনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক তা চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তারা পছন্দ করে। নিজেদের কদর বাড়ানোর জন্য তারা এটা করে। আর যে প্রতিষ্ঠানটির কথা বলেছেন, তারা কোন জায়গা থেকে হিসাব পায় জানি না। এই হিসাব তাদের কখনোই সঠিক হিসাব হয় না। দাম বৃদ্ধির কথা তিনি অস্বীকার করছি না। আর দাম বেড়েছে বলেই ভর্তুকি দিয়ে স্বল্পমূল্যে যারা ক্রয় করার সক্ষমতা রাখে না তাদের দেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পত্রিকায় হেডলাইন দিয়েছে-সব দেশের থেকে বাংলাদেশে পণ্যমূল্য বেশি। কিন্তু ভেতরে যে ডাটা দিয়েছে সেখানে বাংলাদেশের হিসাবে আসে না। বাংলাদেশ কয়েকটা দেশ থেকেই ভাল অবস্থায় আছে। এরা কারসাজিটা এভাবেই করে। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে কিছু কিছু পত্রিকা এখন এমনভাবে একটা হেডলাইন করে যা বিভ্রান্তিকর। সঠিক তথ্য তারা দেয় না। বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়।

সিপিডির নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছুই ভাল লাগে না তাদের। তাদের ভাল লাগে কখন, যখন সেনা শাসন ছিল, যখন তত্ত্ববাবধায়ক সরকার ছিল তাদের একটু কদর বাড়ত। এই আশায় তারা বসে থাকে এটাই বাস্তবতা।

গণফোরামের মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থায় ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার চরম আশঙ্কা রয়েছে। জন্য দেশের জনসাধারণের জীবনমান স্বাভাবিক রাখতে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

বাজারে খাদ্য সরবরাহ পর্যাপ্ত রাখতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে খাদ্য সংগ্রহের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে সরকারি গুদামে ১৬ লাখ ৪৩ হাজার মেট্টিক টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। নিরাপদ খাদ্য মজুদ পড়ার মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান সচল রাখার প্রয়াসে ২০২২-২৩ অর্থ-বছরে অভ্যন্তরীণভাবে ২২ লাখ ৯০ হাজার টন চাল এক লাখ ৫০ হাজার টন গম সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারের এসব উদ্যোগের ফলে জনমনে অচিরেই স্বস্তি আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, উস্কানিমূলক সম্পূর্ণ বানোয়াট বক্তব্য প্রদানকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির/বিচারের মুখোমুখি করার লক্ষে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

 

 

 

 

আমাদের কাগজ/টিআর