জাতীয় ৫ নভেম্বর, ২০২২ ০৯:৪৭

‘মশার রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত রাজধানীর যেসব এলাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমানে মশা শব্দটায় যেন একটা আতঙ্ক। সন্ধ্যা নামলেই মশার রাজত্ব! মশার কয়েল জ্বালিয়ে, মশা তাড়ানোর স্প্রে ছিটিয়ে মশার উপদ্রব থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। যেন মশার উপদ্রব হঠাৎ করে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। রাজধানীর উত্তরা, বসুন্ধরা, ভাটারা ও বাড্ডা এলাকার বাসিন্দারা এমন অভিযোগ করেছেন। তারা জানায়, এই এলাকাগুলোতে সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কর্মীরা নিয়মিত মশার কীটনাশক প্রয়োগ করছেন না। এলাকাগুলোয় ডোবা-নালাও নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে না। এসব এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সম্প্রতি তাদের আশপাশের অনেকেই এডিস মশা বাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

রাজধানীর এ এলাকাগুলোতে মানুষকে মশা থেকে সুরক্ষা সেবা দেওয়ার দায়িত্ব ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)। এই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়,  কর্মীরা মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিদিন সকালে খাল ও নালায় ৪০ লিটার  টেমিটস ও এক হাজার লিটার  ম্যালেরিয়া অয়েল বি নামের কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। আর বিকালে প্রতিদিন ৩৫শ’ লিটার ম্যালাথিয়ন নামে কীটনাশক ফগিং করছেন।

আরও জানা গেছে, উত্তর সিটি ২০২২-২৩ সালের বাজেটে মশক নিয়ন্ত্রণ খাতে ৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। আর গত অর্থবছরে এ খাতে ৮৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে গড়ে ১২ থেকে ১৫ জন মশক নিধন কর্মী ও দুই জন করে সুপারভাইজার প্রতিদিন কাজ করছেন। কিন্তু বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, তারা সুফল পাচ্ছেন না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ১৬৭ ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৪২ হাজার ১৯৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মুক্তি পেয়েছেন ৩৮ হাজার ২৯৫ জন।

রাজধানীর ভাটারা এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, সন্ধ্যার পর বাচ্চাদের নিয়ে মশার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে পড়ি। মশার ভয়ে সন্ধ্যার আগে দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন। সেটাও কাজ করে না। এখানে মনে হয় মশা রাজত্ব করে।

মনির অভিযোগ করে আরও বলেন, অনেক সময় সিটি করপোরেশনের পেস্ট কন্ট্রোল কর্মীদের কোনো খবর থাকে না। কোথায় যায় কে জানে। তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। আমরা সিটি করপোরেশনে ট্যাক্স দেব কেন? আর টাকা কোথায় খরচ হয় তা আমরা জানি না।

বসুন্ধরার বাসিন্দা শামীম ইসলাম বলেন, সেদিন এভারকেয়ার হাসপাতালের কাছে এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে বড় বড় মশা আমাদের ঘিরে ধরল। প্রতিটি মশার কামড় থেকে প্রচণ্ড ব্যথা। ঘরের ভেতরে দরজা-জানালা বন্ধ করে খুব একটা কাজ করতে হয় না। ঘরে মশা, বাইরেও মশা।

কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছেন কি না জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যারা এলাকার কর্তৃপক্ষ, কাউন্সিলর তারা কি মশার কামড় খাচ্ছে না। তাদের আবার বলতে হবে কেন? কাউন্সিলর সাহেবকে কল করলেও তিনি ফোন ধরেন না। তাদেরই তো আমাদের জিজ্ঞেস করার কথা। আমরা কি ট্যাক্স দেই না?

তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যার পর হাতিরঝিল কিংবা গুলশান লেক পাড়ে কোথাও একটু  বসা যায়। মনে হয় মশায় উড়িয়ে নিয়ে যাবে।

বিষয়টি জানতে উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমকে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ইমদাদুল হক বলেন, আমাদের কর্মীরা নিয়মিত কাজ করছেন। তাদের নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। বিকেলে ফগিং করতে গেলেই আওয়াজ হয়। মানুষ বুঝে কাজ হচ্ছে। কিন্তু সকালে মূল কাজ শেষ হলে কোনো শব্দ হয় না।তাই আমরা তাদের মনিটরিংয়ের জন্য ঘণ্টা কিনেছি। তারা কাজ করার সময় ঘণ্টা বাজবে। তিনি আরও বলেন, কেউ ঠিকানা দিলে এখানে কাজ হয়নি, আমরা এই ঠিকানা থেকে কাজ করব।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, আজ আমরা উত্তরায় কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। আমরা দুই নির্মাণাধীন ভবন মালিককে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। সিটি করপোরেশন সব সময় সবাইকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে।


আমাদেরকাগজ/এইচএম