স্বাস্থ্য সেবা ৮ নভেম্বর, ২০২২ ০২:৫৮

কৃত্রিম রক্ত যে কারণে মানব শরীরে দেওয়া হয়েছে।

ছবি:ইন্টারনেট

ছবি:ইন্টারনেট

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরীক্ষাগারে তৈরি করা রক্ত মানবশরীরে প্রথমবারের মতো প্রবেশ করিয়েছেন যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক। প্রাথমিক পরীক্ষার অংশ হিসেবে দুজন স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে কয়েক চামচ পরিমাণ রক্ত দেওয়া হয়েছে। ল্যাবে গবেষকের হাতে তৈরি রক্ত মানবশরীরে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে তা এখন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট গবেষকদের মূল লক্ষ্য, জরুরি কিন্তু অতি বিরল গ্রুপের রক্ত তৈরি করা।

সিকেল সেল এনিমিয়ার মতো রোগী যাদের নিয়মিত রক্ত প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়, তাদের জন্য খুব কাজে আসবে পরীক্ষাগারে তৈরি করা এই প্রাণ বাঁচানো তরল। গবেষকদলটিতে যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল, কেমব্রিজ, লন্ডন ও ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। 

ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যাশলি টয়ে বলেন, কিছু গ্রুপের রক্ত এত বিরল যে কোনো গোটা দেশেই হয়তো দান করার মতো মাত্র ১০ জন পাওয়া যাবে। যেমন—ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া ‘বোম্বে’ নামক গ্রুপের রক্ত যুক্তরাজ্যজুড়ে মাত্র তিন ইউনিট সংরক্ষিত আছে।

মোট ১০ জন স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে ল্যাবে তৈরি রক্ত প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষা চালাতে চান গবেষকরা। চার মাসের মধ্যে তাদের শরীরে একবার সাধারণ রক্ত আর আরেকবার পরীক্ষাগারের রক্ত দেওয়া হবে। উভয় রক্তের স্থায়িত্বের তুলনা করা হবে। আশা করা হচ্ছে, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে ল্যাবের রক্ত। সাধারণত মানবশরীরে ১২০ দিন টেকে রক্তের কোষ। শরীরে পুরনো ও নতুন লোহিত রক্তকণিকা মিশ্রিত থাকে। তবে পরীক্ষাগারের রক্ত সম্পূর্ণ নতুনভাবে তৈরি বলে তা পুরো ১২০ দিন স্থায়ী হওয়ার কথা। এতে ভবিষ্যতে কোনো কোনো রোগের ক্ষেত্রে ঘন ঘন রক্ত প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়বে না বলে আশা করছেন গবেষকরা।

ফুসফুস থেকে শরীরের বাকি অংশে অক্সিজেন বহন করে নেওয়া লোহিত রক্তকণিকা নিয়ে কাজ করছেন গবেষকরা। প্রথমে ৪৭০ মিলিগ্রাম পরিমাণ রক্ত নেওয়া হয়। বিশেষ কায়দায় পরে এমন ‘স্টেম সেল’ বা মূল কোষ বের করে নেন গবেষকরা, যেগুলো লোহিত রক্তকণিকা হয়ে উঠতে সক্ষম। এই স্টেম সেলগুলোকে পরীক্ষাগারে বড় করে লোহিত রক্তকণিকায় রূপান্তর করা হয়।

এই প্রক্রিয়ায় প্রায় তিন সপ্তাহ সময় লাগে। এ সময়সীমায় প্রাথমিক পর্যায়ে পাঁচ লাখ স্টেম সেল পাঁচ হাজার কোটি লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে। সেখান থেকে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষে দেড় হাজার কোটি লোহিত রক্তকণিকা শরীরে প্রতিস্থাপনের উপযুক্ত থাকে।

অধ্যাপক অ্যাশলি টয়ে বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যতে যত বেশি সম্ভব রক্ত তৈরি করতে চাই। এ ধরনের রক্ত তৈরির যন্ত্রপাতি সংবলিত একটি কক্ষ বানানো আমাদের স্বপ্ন। ’তবে রক্ত তৈরিতে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ আছে। সাধারণ রক্ত প্রতিস্থাপনে এনএইচএস কর্তৃপক্ষের যত খরচ, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ব্যয় হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন গবেষকরা।

 

আমাদের কাগজ//টিএ